8.8 C
Toronto
সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

ফাঁকা চেকে সুদের কারবার! পরিশোধের পরও মামলার খড়্গ

ফাঁকা চেকে সুদের কারবার! পরিশোধের পরও মামলার খড়্গ

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরাতিহাটের ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন। টিন, রড, সিমেন্টের ব্যবসা পরিচালনা করছেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। ২০২০ সালে ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিলে ভগবতিপুর গ্রামের বেলাল হোসেন নামে একজন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এজন্য ওই দাদন ব্যবসায়ী নিয়েছিল মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি ফাঁকা চেক।

- Advertisement -

নিয়মানুযায়ী ওই বছর ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ লাখ ও ৩ লাখ করে দুই দফায় ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। তারপরও মোয়াজ্জেম হোসেনের ওই ফাঁকা চেক দিয়ে ৮০ লাখ টাকার ব্যাংক ডিজওনার মামলা করেছেন দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন।

শুধু মোয়াজ্জেম হোসেনই নয়। তার মতো মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরাতিহাট এলাকায় অনেক ব্যবসায়ী দাদনের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে ফিরছেন বাঁচার আশায়। পরিশোধের পরও মাথার ওপর নেমে আসে মামলার খড়্গ।

তেমনি একজন হয়বতপুর গ্রামের ইটভাটা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। ২০২২ সালে ওই দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। দেওয়া ছিল দুটি ফাঁকা চেক। বছর খানেকের মধ্যে সুদাসলে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। ফেরত চান ওই ফাঁকা চেক দুটো কিন্তু চেকগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানায় দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন। এর কিছুদিন পর ৯০ লাখ টাকার মামলা করার হুমকি দেয় ওই দাদন ব্যবসায়ী।

নজরুল ইসলাম ফাঁকা চেক ফেরতের বিষয়ে রংপুর আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৈরাতিহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালান দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের বাড়িতে। এ সময় পুলিশ দুটি ফাঁকা চেক উদ্ধার করে। পরে ওই চেক দুটো দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনকে ফেরত দেয় পুলিশ।

বৈরাতি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে নজরুল ইসলামের ফাঁকা চেক উদ্ধার করতে যাই; কিন্তু তার ফাঁকা চেকগুলো পাইনি। পেয়েছি বৈরাতিহাট এলাকার আতোয়ার হোসেন নামে একজনের কৃষি ব্যাংকের একটি ফাঁকা চেক ও দিনাজপুর বিরল উপজেলার একজন মহিলার আরেকটি ফাঁকা চেক। সেগুলো মামলা সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় জব্দ করা হয়নি। ফেরত দেওয়া হয়েছে বেলাল হোসেনকে।

অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের কাছে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এলাকার অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ। তারা সুদাসলে টাকা পরিশোধ করলেও ফাঁকা চেক দিয়ে মামলা ও হামলার শিকার হচ্ছেন।

এমননি একজন জামালপুর ফরিদা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোবাশ্বের হোসেন। তিনি দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের বড়ভাই আইনজীবী মোস্তাব সরওয়ার্দীর শ্যালক টিটুল মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এক বছরের মধ্যে প্রায় ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করেন শিক্ষক মোবাশ্বের হোসেন। দাদন ব্যবসায়ীর কাছে থাকা ফাঁকা চেক দিয়ে উকিল নোটিশ পাঠায় দাদন ব্যবসায়ীরা। পরে ওই আইনজীবীর বাসায় আরও দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়। তারপরও আদালতে মামলা করে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন দাদন ব্যবসায়ী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মির্জাপুর ইউনিয়নের ভগবতিপুর গ্রামের মৃত সোলায়মান মণ্ডলের ছেলে বেলাল হোসেন। পৈতৃক সূত্রে কিছু জমি পেয়েছেন, সেগুলোতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ১০ বছর ধরে দাদন ব্যবসা করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন তিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের কাছে ফাঁকা চেক বন্ধক নিয়ে দাদনের ঋণ প্রদান করেন। এভাবে স্থানীয়ভাবে আদিবাসী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু জমি হস্তগত করেছেন। সেগুলো নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ সর্দার বলেন, দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন সুদের কারবার করে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে যাচ্ছে। সে ফাঁকা চেক দিয়ে একেকজনের নামে লাখ লাখ টাকার মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সে আমাকে যে টাকা দিয়েছিল, প্রায় তার দ্বিগুণ টাকা পরিশোধ করেছি। তারপরও দাদন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন আমার ফাঁকা চেক দিয়ে ৮০ লাখ টাকা দাবি করছে।

আরেক ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, টাকা দেওয়ার পরও দাদন ব্যবসায়ী ফাঁকা চেক দিয়ে আমার কাছে ৯০ লাখ টাকা দাবি করছে। মামলা ও হামলার ভয় দেখাচ্ছে।

অভিযুক্ত বেলাল হোসেন বলেন, আমি অনেক ব্যবসায়ীর কাছে মালামাল ক্রয়ের জন্য টাকা দিয়েছিলাম। সবার ফাঁকা চেক আমার কাছে গচ্ছিত আছে। এ রকম মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮০ লাখ ও নজরুল ইসলামকে ৯০ লাখ টাকা দিয়েছি।

তবে তার কোটি টাকার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

সূত্র : যুগান্তর

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles