13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

‘দেখতে দেখতে’ মেয়েসহ স্বামীর হাতে খুন হলেন বৃষ্টি

'দেখতে দেখতে' মেয়েসহ স্বামীর হাতে খুন হলেন বৃষ্টি

স্বামীর পরকীয়ার জেরে কলহ লেগেই ছিল সংসারে। স্বামী এস. এম. সেলিমসহ (৩৪) প্রায়ই ঘর থেকে উধাও হয়ে যেতেন।

- Advertisement -

কোথায় বা কার সঙ্গে থাকতেন কিছুই বলতেন না। এ নিয়ে বিতণ্ডার জেরে স্ত্রীকে মারপিটও করতেন।

সম্পর্কচ্ছেদের জন্য একাধিক পারিবারিক বৈঠক হলেও স্ত্রীর আশা ছিল ‘কয়েকটা মাস দেখি, যদি স্বামী ঠিক হয়’। এভাবেই দেখতে দেখতে স্বামীর শুধরানোর অপেক্ষায় থেকে অবশেষে তার হাতেই খুন হতে হলো মাহমুদা হক বৃষ্টি ও মেয়ে সানজা মারওয়াকে (৯)। ।

বুধবার (১৪ জুন) ভোরে বৃষ্টি ও মেয়ে সানজা মারওয়াকে (৯) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দুই সন্তান ও স্বামী এস. এম. সেলিমসহ রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় থাকতেন বৃষ্টি। নিহত সানজা ছাড়াও বৃষ্টি-সেলিমের সংসারে ৯ মাসের আরেকটি ছেলে রয়েছে।

বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাদেক জানান, আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে বনশ্রী ফরায়েজী হাসপাতালে নেওয়ার খবর পেয়ে রাত আনুমানিক তিনটার দিকে আমরা সেখানে যাই। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসক মা ও মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

তখনই সন্দেহজনক হওয়ায় বৃষ্টির স্বামী সেলিমকে আটক করা হয়। মা-মেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রথমে সেলিমের পক্ষ থেকে দাবি করলেও নিহতের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা বিষপানের কোনো আলামত পাননি। শ্বাসরোধেও হত্যার প্রমাণ মেলেনি। তবে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধের আলামত মিলেছে।

একপর্যায়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম স্বীকার করেন দুধের সঙ্গে ৩০ টি ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল মা-মেয়েকে।

বাগ-বিতণ্ডার জেরে সেলিম একাধিকবার স্ত্রী বৃষ্টিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ তিন দিন বাইরে থেকে সোমবার (১২ জুন) রাতে বাসায় ফেরেন। তা নিয়ে পারিবারিক কলহ চরমে ওঠে।

এরপর পারিবাহিক কলহ, আর নিজের পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্ত্রীকে সারা জীবনের জন্য সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করেন সেলিম। সে অনুযায়ী ৩০টি ঘুমের ওষুধ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে স্ত্রীকে খাওয়ান। তবে মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল না তার। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ খেয়ে ফেলে ৯ বছরের সানজাও। অবশেষে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় মারা যায় মা-মেয়ে।

এদিকে মেয়ে ও নাতনীর মৃত্যুতে বৃষ্টির বাবা মো. মোজাম্মেল হক (৬৩) বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় বুধবার (১৪ জুন) রাতে সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর আগে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির মেয়ে মাহমুদা হক বৃষ্টি (৩৩) ও রাজধানীর বাড্ডার মো. সেলিমের। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু প্রায় তিন বছর আগে তাদের মধ্যে বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া শুরু হয়।

বাবা মোজাম্মেল অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সেলিম আমার দ্বিতীয় কন্যা মিম আক্তারকে ফোন করে জানায়, মাহামুদা হক বৃষ্টি ও নাতনী সানজা কোনো সাড়া শব্দ করছে না এবং তাদের শরীর শীতল হয়ে গেছে। খবর পেয়ে আমার ছোট বোন ঝর্ণা আক্তার, বোনজামাই পান্না এবং ভাগিনা বাড্ডার ওই বাসায় গিয়ে বিছানা বৃষ্টির এবং পাশের কক্ষে সানজার নিথর দেহ দেখতে পায়।

তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত ঢাকায় আসি এবং ঢামেক হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মেয়ে মাহামুদা ও নাতনী সানজার মরদেহ দেখতে পাই। জামাই সেলিম পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে আমার মেয়ে ও নাতনীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

বৃষ্টির মামা সোহেল বলেন, সেলিম একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। সংসার তাদের ভালই চলছিল। কিন্তু করোনাকালে চাকরি হারানোর পর থেকেই শুরু পারিবারিক কলহের। বাসা ভাড়ার টাকা তুলে উধাও হয়ে যেত সেলিম। একটা পর্যায়ে স্পষ্ট হয়, একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া ও অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত সে।

এনিয়ে একাধিকবার পারিবারিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বৈবাহিক বিচ্ছেদের জন্য পরিবারের চাপেও রাজি হয়নি বৃষ্টি। তার বক্তব্য ছিল, ‘আর কয়েকটা মাস দেখি, যদি বদলায় সেলিম। ’ কিন্তু সেলিম বদলায়নি, সম্পর্কও বিচ্ছেদ করেনি। সারা জীবনের জন্য তার স্ত্রী-সন্তানকে মেরে ফেলল। নয় মাসের শিশুটা মা ও বোনকে হারালো।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেলিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, স্ত্রীকেই শুধু হত্যার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুধ খেয়ে ফেলে শিশু সানজাও। যে কারণে মারা যায় সেও।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি সেলিম। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এই ঘটনায় আরও কারো ইন্ধন ছিল কি-না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে আর কার কার সঙ্গে মিশতো সেলিম, এ ঘটনায় তাদের কারো যোগসাজশ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় প্রায় সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। আটক সেলিম পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পরিকল্পনা করেই গত রাতে বাইরে থেকে দুধ কিনে আনা হয়। সেই দুধে ৩০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তাতে স্ত্রী বৃষ্টি ও তার শিশু কন্যা সানজা নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।

সূত্র : বাংলানিউজ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles