13.5 C
Toronto
রবিবার, মে ৫, ২০২৪

‘বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি’

‘বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি’

‘কোয়েম্বত্তূরে কাকার সঙ্গেই মার্বেল পাথরের কাজ করি। কোয়েম্বত্তূরে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। কাকার সঙ্গে টিকিট কেটেছিলাম স্লিপারে। এস-৪ কামরায় আমরা ছিলাম। কথা ছিল, শনিবার রাতের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাব। রোববার থেকেই তা হলে কাজে ফিরতে পারব। কিন্তু কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, সত্যি বলতে কী, বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি?’

- Advertisement -

কথাগুলো বলছিলেন দুর্ঘটনাকবলিত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের কৃষ্ণপদ। কোনো মতে বেঁচে ফেরা এই কৃষ্ণপদ আনন্দবাজার পত্রিকাকে এভাবেই তার ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতার কথা জানান।

কৃষ্ণপদ বলেন, ‘ওড়িশার বালেশ্বর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায় কিছুক্ষণ। বালেশ্বর স্টেশনে নেমে বোতলে জল ভরে নিই। নিজের আসনে না ফিরে দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম দু-চার জনের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎই বিকট একটা ঝাঁকুনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কামরা এক দিকে হেলে পড়তে থাকে। এস-৪ কামরা এতটাই কাত হয়ে যায় যে খোলা দরজা গলে বাইরে পড়ে যান দুই তিনজন। ওদের ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। বুঝতে পারছি, আমিও হেলে পড়ছি খোলা দরজার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোহার দরজাটা দড়াম করে বন্ধ হয়ে যায়। আমি গিয়ে পড়ি সেই দরজার ওপর। এক মুহূর্ত আগে পড়লে আমিও ট্রেন থেকে বাইরে পড়ে যেতাম। কী বাঁচা যে বেঁচেছি, তা শুধু আমিই জানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই সময় আরও কয়েকটি কান ফাটানো আওয়াজ শুনেছিলাম। জানি না কোথা থেকে আসছিল। বেশ কিছুক্ষণ মরার মতো পড়েছিলাম সেখানেই। তারপর শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ততক্ষণে বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অনেকেই দেখলাম মোবাইলের টর্চ জ্বেলে দৌঁড়চ্ছেন আর চিৎকার করছেন, বাঁচাও, বাঁচাও। কী করব, কোথায় যাব কিছুই মাথায় আসছে না। সত্যি বলতে কী, বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি?’

কিছুক্ষণ পর অন্ধকারে চোখ সয়ে গেল। অনেকটাই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বুঝলাম, এস-৩ এবং এস-২ কামরা দু’টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের সংরক্ষিত কামরাগুলির আগে ছিল অসংরক্ষিত কামরা। ওই কামরাগুলোতে যে কত মানুষের প্রাণ গিয়েছে, ভাবতেও পারছি না। মাথা কাজ করছিল না। কাকার সঙ্গে আমিও নেমে পড়লাম উদ্ধারে। কিন্তু সেই দৃশ্য দেখে হাত নড়ছিল না। মুখ দিয়ে কথাও ফুটছে না। বাপের জন্মেও এমন দৃশ্য দেখিনি আমি। কাকারও একই অবস্থা।

প্রসঙ্গত, ভারতের উড়িষ্যায় কলকাতার হাওড়া-চেন্নাইগামী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৩৩। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৯ শতাধিক। পূর্ব ভারতীয় রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা এটিকে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক রেল দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles