13.3 C
Toronto
রবিবার, মে ৫, ২০২৪

ভারতে প্রকাশ্যে চুম্বন কেন নৈতিক অপরাধ?

ভারতে প্রকাশ্যে চুম্বন কেন নৈতিক অপরাধ?
ছবি বিবিসি

দিল্লির অতি আধুনিক আরামদায়ক মেট্রোরেল নেটোওয়ার্ক এখন হয়ে উঠেছে তরুণ-তরুণীদের প্রেম ভালোবাসার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর একটা প্রিয় জায়গা। মেট্রোরেলের কামরায় গত সপ্তাহে এক তরুণ দম্পতির চুম্বনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হবার পর এই ঘটনা নিয়ে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছে। বিতর্কের বিষয় হচ্ছে প্রকাশ্যে কী ধরনের আচরণ অশ্লীল ও আপত্তিকর এবং ব্যক্তিগত আচরণের নৈতিক দায়দায়িত্ব কার?

ভিডিওতে দেখা গেছে এক পুরুষের কোলে শুয়ে এক নারী এবং তারা ওই অবস্থায় একে অপরকে চুমু খাচ্ছেন। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর দিল্লি মেট্রো রেল করপোরেশন যাত্রীদের জানিয়েছে তারা কারোর ‘আপত্তিকর আচরণ’ দেখলে যেন কর্তৃপক্ষের কাছে তা রিপোর্ট করে। খবর বিবিসির

- Advertisement -

রেল কর্তৃপক্ষ এধরনের আচরণের ওপর নজরদারি চালাতে তাদের ‘ঝটিকা নজরদারি বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যা বৃদ্ধিরও’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আপত্তিকর বা অশ্লীল আচরণ কী?

কিন্তু ‘আপত্তিকর আচরণ’-এর সংজ্ঞা কী? তা নিয়েও নানা মুনির নানা মত।

যেমন, সোসাল মিডিয়ায় যারা মতামতের ঝড় তুলছেন তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় বিস্তর ফারাক আছে। কারোর কাছে মনে হয় খুবই স্বাভাবিক আচরণও আপত্তিকর–যেমন–ট্রেনের ভেতর এক তরুণ দম্পতি একসাথে বসে আছেন আর মেয়েটির মাথা তার পুরুষ সঙ্গীর কাঁধে।

ভারতের কলকাতায় ২০১৮ সালে এক দম্পতি পরস্পরকে প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করায় ক্রুদ্ধ সহযাত্রীরা তাদের পিটিয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ উঠেছিল। অনেকেই সাধারণ নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছিল তরুণ সমাজের ওপর ‘নৈতিক পুলিশি নজরদারি’ তারা যেন বন্ধ করে।

দিল্লির মেট্রো স্টেশনে ২০১৯ সালে সিসিটিভি ভিডিওতে ওঠা এক দম্পতির ‘অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের’ ছবি উঠে গিয়েছিল একটি পর্ন সাইটে।

জনসমক্ষে অন্তরঙ্গতা ট্যাবু

ভারতে প্রকাশ্যে অন্তরঙ্গতা প্রকাশের একটা চালু নাম পিডিএ (পাবলিক ডিসপ্লে অফ অ্যাফেকশান)। দেশটিতে জনসমক্ষে অন্তরঙ্গতা প্রকাশের একটা দীর্ঘ এবং দুর্বোধ্য ও জটিল ইতিহাস রয়েছে।

ভারতের অনেক মন্দিরের গায়ে কামোত্তেজক দৃশ্যের শৈল্পিক চিত্র খোদাই করা আছে। বিশ্বকে কামোদ্দীপক যৌনতার সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থগুলোর একটি ‘কামসূত্র’ দিয়েছে ভারত। অথচ ভারতে সিনেমার পর্দায় চুম্বন দেখলে এখনও ভুরু কুঁচকানো হয়।

ভারতে ১৯৮১ সালে একটি ফিল্ম সেট দেখতে যান সেসময় প্রিন্স চার্লস (বর্তমানে রাজা তৃতীয় চার্লস)। তখন তাকে ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান অভিনেত্রী পদ্মিনী কোলহাপুরি, সেইসঙ্গে চার্লসের গালে অপরিকল্পিতভাবে একটা চুম্বনও দেন তিনি। ওই ঘটনার পর তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ‘যে নারী প্রিন্স চার্লসকে চুমু খেয়েছেন’ এই শিরোনামে, যদিও বেশ কয়েক বছর পর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন ‘ওটা আহামরি কোন ব্যাপার ছিল না।’

ভারতীয় আইনে ‘অশ্লীলতা’ কি?

ভারতে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার অশ্লীল আচরণের মাধ্যমে বা আপত্তিকর, অশ্লীল গান গেয়ে, ছড়া কেটে অন্যের বিরক্তি উৎপাদন করে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারা অনুসারে সেজন্য তার সাজার বিধান রয়েছে।

কিন্তু ‘আপত্তিকর’ বা ‘অশ্লীল’ বলতে কী বোঝায় সেই সংজ্ঞাই স্পষ্ট নয়।

এই ধারা ব্যবহার করে বিখ্যাত ঊর্দু কবি সাদাত হাসান মান্তোর বিরুদ্ধে আপত্তিকর কার্যকলাপের জন্য ছয় বার মামলা আনা হয়। অভিনেতা মিলিন্দ সোমান তার ৫৫ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে নগ্ন দেহে তার ছোটার ছবি পোস্ট করায় ২৯৪ ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় ২০১৭ সালে।

এবছরের গোড়ার দিকে কলকাতায় একটি জনপ্রিয় নাটকের বিষয়বস্তু ছিল ভারতে অশ্লীলতা। ‘পাবলিক অবসেনিটিস’ নামে এই নাটকে সাধারণ সম্পর্কের বাইরের সম্পর্ককে দেশটিতে কী চোখে দেখা হয় তা তুলে ধরা হয়।

আদালত বেশ কিছু রায়ে বলেছে প্রকাশ্য চুমু খাওয়া সেই অর্থে কোন অশ্লীলতা নয়। ২০০৮ সালে এক বিবাহিত দম্পতির পক্ষের এক আইনজীবী বলেন এটা শুধু তখনই অশ্লীল বলে গণ্য হবে যদি সেটা ‘অনৈতিক বা পাপকাজে উৎসাহ জোগায় বা জনসাধারণের বিরক্তির কারণ হয়।’

দিল্লি মেট্রোর সাম্প্রতিক ঘটনায়ও দেখা যায়, সেখানেও স্পষ্ট সমাজের এই পরস্পর বিরোধিতা- এই অন্তরঙ্গতা সমাজে এক ব্যক্তির জন্য যেখানে পিডিএ –অর্থাৎ নিছক জনসমক্ষে ঘনিষ্ঠতার প্রকাশ–আরেকজনের কাছে সেটাই জনসমক্ষে অশ্লীলতা।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles