11 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

জাফরুল্লাহর ঔষুধ নীতি ও ডক্টর ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে কতিপয় প্রশ্ন

জাফরুল্লাহর ঔষুধ নীতি ও ডক্টর ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে কতিপয় প্রশ্ন
<br >ডক্টর ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকের যে সফলতা আজ বিশ্বব্যাপী তা যদি সেদিনকার সরকার অনুমোদনই না দিত কিংবা ডাক্তার জাফরুল্লাহর ঔষুধ নীতি যদি সেই সামরিক সরকার আমলেই না নিত ঠিক যেমনটি কিছুদিন আগে জাফরুল্লাহ সাহেবের করোনার রেপিড টেষ্টিং কিটকে আলোর মুখ দেখতে দেয়া হলো না

উন্নয়ন তিন প্রকার। ১। অবকাঠামো উন্নয়ন ২। প্রচলিত শাসন ব্যবস্হা ও সরকারী নীতিমালার উন্নয়ন। ৩। মানব সম্পদ উন্নয়ন।
অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়ন। শাসন ব্যবস্হার উন্নয়ন হলো প্রচলিত শাসন কাঠামো সংস্কার করে যুগপোযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা ও গণমানুষের কল্যাণে তা কাজে লাগানো। যেমন ঔষধ নীতি, স্বাস্হ্য নীতি, শিক্ষা নীতি, অর্থনৈতিক নীতিমালা যেমন ব্যাংকিং সিস্টেম। মানবসম্পদ উন্নয়ন মানুষের নৈতিকতার উন্নয়ন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ গড়ে তোলা।

অবকাঠামো উন্নয়ন যে কোন সরকারের রুটিন কাজ। এই ধরনের উন্নয়ন দৃশ্যমান ফলে সহজেই সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে। কিন্তু বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলের উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্হা ও সরকারী নীতিমালায় হাত দিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের কোটি কোটি গণমানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো সংস্কার সবার পক্ষে করা সম্ভব হয় না। সাধারণ সরকার এই বিষয়গুলোতে হাত দেন না।
এই যে বাংলাদেশে বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলের প্রচলিত আইন ও পদ্ধতিতে আমলাতন্ত্র জনগণের প্রভুর ভুমিকায় দীর্ঘদিন যাবত অভ্যস্ত হয়ে গেছে এর কারণ হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে যুগপযোগী আইন প্রণয়ন না করে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শব্দের জায়গায় বাংলাদেশ শব্দ প্রতিস্হাপন করে আইনগুলো হুবহ একই রকম রেখে দেয়া হয়েছে। মাঝে মাঝেই বাংলাদেশে ‘স্যার’ শব্দ নিয়ে যে তুলকালাম কান্ড হয় তা সেই উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্হার পরিবর্তন না হবার কারণে।

- Advertisement -

উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্হা সংস্কার করতে দরকার হয় সাহস ও দৃঢ়তা। বাংলাদেশে মাত্র দুটো সরকার এই ধরনের সাহস দেখাতে পেরেছিলেন। প্রথম সরকার ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার যখন ১৯৭৫ সালে দেশের ১৯টি মহাকুমাকে জেলায় পরিনত করে সেখানে একজন করে বেসরকারী লোককে গভর্নর করে জেলার দায়িত্ব প্রদান করে পাঠানো হয়েছিল। সেটা ছিল আমলাতন্ত্রের উপর প্রথম আঘাত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যবস্হা প্রবর্তনের কয়েকদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম সংস্কারকে আঁতুর ঘরেই ধ্বংস করে দেয়া হয়।
দ্বিতীয় ও একমাত্র সফল সংস্কার করতে সক্ষম হন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ। এরশাদের শাসনকালের শুরুর দিকে তিনি তিনটি অসাধারণ সংস্কার করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্হার বিপরীতে ডক্টর ইউনুসের মাইক্রো ক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্হার ব্যাংক গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেন জেনারেল এরশাদ। গরীব মানুষ যাঁদের কোন ক্রেডিট স্কোর নেই, কোলেটারেল বা বন্ধক রাখার সম্পদ নেই, একেবারেই কপর্দকহীন গরীব দুঃখী এমনকি ভিখারীদেরকেও যে ঋণ দেয়া যায়, তাও সেই লোন ফেরত পাবার কোন রকম গ্যারান্টি না থাকা সত্তেও, তা এই গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে স্বয়ং ডক্টর ইউনুসের নানা বক্তব্যের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ঘুরছে তা ঐ এরশাদের আমলেই ১৯৮২ সালে অনুমোদন পাওয়া।

এইযে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ঐতিহাসিক ঔষুধ নীতির সফলতা নিয়ে দেশ বিদেশে আজ এত প্রশংসা, সাফল্য তাও সেই ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের সাহসী অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ফল। সেই কথিত অবৈধ ও ‘স্বৈরাচার’ এরশাদ সেদিন দেশের অত্যন্ত প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর রক্ত চক্ষু, দেন দরবার উপেক্ষা করে ডাক্তার জাফরুল্লাহর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল দেশপ্রেমের এক বিরল দৃষ্টান্ত। যদিও সেই সময় তৎকালীন আমলাদের যারা বিরোধিতা করেছিলেন তারা কারা এবং এখনও সেই বিরোধিতাকারীদের দু একজন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দু একটি জায়গায় দায়িত্বে রয়েছেন সেসব বিশ্লেষণ করলে একথা দিবালোকের মত পরিস্কার হয় যে বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়, পোষাকে বা নামে নয়। ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল জাতীয় স্বাস্হ্য নীতি। এরশাদের শাসনামলের শেষ দিকে উদ্যোগ নেয়া স্বাস্হ্য নীতি কেন বাস্তবায়ন হয় নি, হাইকোর্ট কেন বিকেন্দ্রীকরণ করে যেতে পারেন নি, কেন এরশাদের করা ঐতিহাসিক স্হানীয় সরকার বিকেন্দ্রীকরণের মুল ক্ষমতা একজন জেলা পরিষদ বা উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা চেয়ারম্যানরা পান না তা আজ বিশাল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এরশাদের আমলে একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মর্যাদা ছিল উপমন্ত্রীর সমান, ফলে তারা ছিলেন জেলার সর্বোচ্চ মর্যাদায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধি। বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মর্যাদা একজন পুলিশ সুপারেরও নীচে কিনা আমার জানা নেই। যে লক্ষ্যে এরশাদ উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, একজন সামরিক জান্তা হয়েও তিনি চেয়েছিলেন তৃণমুলের জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্ব স্ব এলাকার সমস্ত উন্নয়নের শুধু পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বেই থাকবেন না, তারা নির্বাহী প্রধান হিসেবে ইউএনও ও থানার ওসির এসিআর তথা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনও লিখবেন যাতে থানার বা উপজেলার প্রশাসনও থাকেন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। বর্তমান সরকার সেই উপজেলা পরিষদ পুনর্বহাল করলেও ঠিক কতটুকু জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে পেরেছে তা আমার জানা নেই।

এসব নিয়ে কথা বললে অনেক কথা বলতে হবে। আজ হঠাৎই মনে হলো, সংস্কার কোন মুখের কথা নয়। এই যে ডক্টর ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকের যে সফলতা আজ বিশ্বব্যাপী তা যদি সেদিনকার সরকার অনুমোদনই না দিত কিংবা ডাক্তার জাফরুল্লাহর ঔষুধ নীতি যদি সেই সামরিক সরকার আমলেই না নিত, ঠিক যেমনটি কিছুদিন আগে জাফরুল্লাহ সাহেবের করোনার রেপিড টেষ্টিং কিটকে আলোর মুখ দেখতে দেয়া হলো না, তাহলে স্বাধীন দেশের মাত্র দুটো ঐতিহাসিক সংস্কার আলোর মুখ দেখতো না, দুনিয়ার মানুষ জানতো না, কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ এইসব অসাধারণ উপকার থেকে বন্চিত হতো নিশ্চিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু গণস্বাস্হ্য কেন্দ্রের জন্যে সাভারে একখন্ড জমি দিয়েছিলেন সেকথা ডাক্তার জাফরুল্লাহ বহুবার যৌক্তিক কারণেই কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কখনোই যে সরকার গ্রামীন ব্যাংক বা ঔষুধ নীতি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করেছিলেন তাদের কথা কারো মুখেই কখনো শোনা যায় না।

তাতেও কোন সমস্যা নেই। আমরা চাই ডাক্তার জাফরুল্লাহর সেই অসমাপ্ত জাতীয় স্বাস্হ্যনীতি নুতন করে জাতির সামনে উপস্হাপন করা হোক, বাস্তবায়ন করা হোক যাতে আর কোন ভিআইপি বা সাধারন মানুষকে চিকিৎসা নিতে সিংগাপুর, ব্যাংকক কিংবা মাদ্রাজ কোলকাতা গিয়ে মুল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও সময় অপচয় না করতে হয়।

বাংলাদেশের স্বাস্হ্য, শিক্ষা ও গণ পরিবহন ব্যবস্হায় সংস্কার সাধন করে আজকের সরকার নিশ্চয়ই পারেন মানুষের কাছে চির স্মরণীয় থাকতে। পারেন না?

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles