2.9 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

নিকৃষ্টদের দ্বারাই শাসিত হবো

নিকৃষ্টদের দ্বারাই শাসিত হবো
অবৈধ টাকার ছড়াছড়ি ইত্যাদিই এমপি হবার কলকাঠি

অনেকেই অভিযোগ করেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ আজ ব্যবসায়ীদের দখলে। কিন্তু কেন এটা ঘটলো তা কি কেউ কখনো অনুসন্ধান করে দেখেছেন?

সমাজটা আজ নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত অবস্হায় চলে গেছে বলে অনেকেই আমরা হা হুতাশ করি এবং এই পরিস্হিতির জন্যে আমরা সরকার এবং রাজনীতিকদেরকে দায়ী করে থাকি। কিন্তু সমাজের এই পরিণতির জন্যে আর কেউ কি দায়ী নয়? লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, মিডিয়ার দায় কি কোন অংশে কম?

- Advertisement -

আশির দশকের একটা টিভি নাটকের গল্প বলি। নায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠনের নেতা। অনেক কর্মী সমর্থকে ভরা সেই ছাত্র সংগঠনটি। কিন্তু ছাত্রনেতা বেশীরভাগ সময় পরিবেষ্টিত থাকেন বিশেষ কিছু গুন্ডা ও মাস্তান দ্বারা। গুন্ডা মাস্তানরা মোটর সাইকেল নিয়ে নেতাকে পাহারা দেয়, সভাস্হলে পৌঁছে দেয়, অন্যরা সবাই ভয়ে থাকে। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র নেতার পক্ষে ঐসব গুন্ডা মাস্তান প্রধান ভুমিকা রাখে, সাধারণ ছাত্রদেরকে ভয় দেখায়, খরচ যোগাড় করে দেয়। ফলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সেই নায়ক ছাত্রনেতা। এরকম পরপর দুতিন বছর পরে সেই মাস্তান গুন্ডারা চিন্তা করে যে ডাকসুর ভিপি ইলেকশনে তাদের কারণেই যেহেতু ঐ নায়ক ছাত্রনেতা বার বার বিজয়ী হয়, তাহলে আর অন্যকে ভিপি বানিয়ে লাভ কি, নিজেরাই ভিপি হয় না কেন? যেমন চিন্তা তেমনই কাজ। আবারও ভিপি নির্বাচন ঘনিয়ে আসে, নায়ক ছাত্রনেতা এবারও গুন্ডা মাস্তান দলের কাছে সাহায্য চাইতে ওদের আস্তানায় যায়। মাস্তানদের নেতা পা টেবিলের উপর তুলে দিয়ে বসে থাকে। আগে ছাত্রনেতার সাথে দেখা হলে উঠে দাড়িয় সালাম দিত, এবার আর তা করে না। মুখে সিগারেট, পা টেবিলের উপর দিয়ে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে গুন্ডা বাহিনীর দলনেতা। একটু বিব্রতবোধ কাটিয়ে নায়ক ছাত্রনেতাটি এগিয়ে যায়, ভিপি পদে নির্বাচনে সাহায্য চায় গুন্ডার কাছে। এবার গুন্ডা ছেলেটি অট্টহাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নায়ক ছাত্রনেতার কাঁধে হাত রেখে বলে, তোমার সব নির্বাচনে আমরাই প্রধান ভুমিকা নিয়েছি, আমার কারণেই তুমি বার বার নির্বাচনে জয়ী হয়েছ। এবার ভাবছি, তাহলে আর তুমি কেন? আমার উপরেই যেহেতু তোমার নির্ভরশীলতা, তাহলে ভিপিটাও আমিই হই। তুমি বরং আমার পোষ্টার লাগাও! দেখা গেল, সেই বছর গুন্ডা মাস্তান ছেলেটিই ভিপি হয়ে গেল আর নায়ক ছাত্রনেতাটি তার কর্মী হয়ে শ্লোগান দেয়, পোষ্টার লাগিয়ে এক সময় ক্যাম্পাস তথা ছাত্ররাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়।

জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া টাকা খরচের শতগুণ বেশী টাকা নির্বাচনে খরচ হয়। টাকার যোগান কে দেয়? ব্যবসায়ীরা। তাহলে ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে অন্যকে এমপি বানাবে কেন? যেহেতু নীতি আদর্শের বালাই নাই, পড়ালেখা জানার কোন দরকার নাই, গালাগালি, মাস্তানি, অবৈধ টাকার ছড়াছড়ি ইত্যাদিই এমপি হবার কলকাঠি, তাহলে যারা এতদিন নেপথ্যে থেকে এসবের যোগান দিত, তারা একদিন ভাবলো, হোয়াই নট, আমরা নিজেরাই? এভাবেই জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীরা জেঁকে বসলো।

হানিফ সংকেত দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন। তার অনুষ্ঠানের স্পনসর কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড। আরো কেউ কেউ থাকতে পারে। তাদের টাকায়ই ইত্যাদি অনুষ্ঠানটি বছরের পর বছর সফলভাবে চলে আসছে। তাই বলে কি হানিফ সংকেত কে কখনো দেখেছেন হানিফ সংকেতের মঞ্চে কেয়া কসমেটিকসের কাউকে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে সম্মান জানানো হচ্ছে? কিংবা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেয়া কসমেটিকসের কাউকে এওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে? দেশে বিদেশে যত সফল অনুষ্ঠানগুলো হয়, সবকিছুর পেছনেই টাকার দরকার হয়। যারা এসব অনুষ্ঠান করেন, যারা বিশেষ করে সমাজের মঙ্গলের জন্যে, নীতির জন্যে, আদর্শের জন্যে কোন কিছু করেন, তারা সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুঁজে খুঁজে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া প্রকৃত জনদরদী সমাজ সেবক, প্রতিভা সম্পন্ন শিল্পী, খেলোয়ার, বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা মেধাবী ছাত্রটিকে বের করে ষ্টেজে নিয়ে আসেন, মানুষের সামনে তুলে ধরেন, পুরুস্কৃত করেন। আর আমরা?
স্পনসর, টাকার যোগান দেয়াদেরকে যদি আমরা এভাবে তুলে ধরি, টাকাই যদি সব হয়, তাহলে মানুষ মেধার পরিবর্তে আরো বেশী টাকা কামানোটাকেই যোগ্যতা বলে ধরে নিবে তা বৈধ বা অবৈধ যে পথেই হোক না কেন! সমাজটাকে সেই পথে ঠেলে দেবার জন্যে আমরা নিজেরা যারা এসব কাজের উদ্যোক্তা তারা কম দায়ি নই। ভাল লোকদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা না করে, তোষামোদকারী, চামচাবাজ, দালাল, অবৈধ পথে রোজগার করা নব্য ধনীদেরকে যদি আমরা সম্মানিত করি, পদক দেই, আরো উঁচু জায়গায় যাবার পথ করে দেই, তাহলে একদিন আমরা নিকৃষ্টদের দ্বারাই শাসিত হবো, এতে আর অবাক হবার কি আছে?

স্কারবোরো, কানাডা

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles