10.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

অনুভূতি ও আবেগের কথা

অনুভূতি ও আবেগের কথা
তাসরীনা শিখা

আপনি কি কাউকে খুঁজছেন হৃদয়ে জমে থাকা আপনার আবেগ, অনুভূতি , ভালোলাগা- মন্দলাগা, ফেলে আসা জীবনের মধুর স্মৃতি গুলো মন উজার করে বলতে। বলতে বলতে ভারী মনটাকে হালকা করে তুলতে ? পেয়েছেন কাউকে ? না পাননি । পাবেনও না। কাকে বলবেন আপনার মনে জমে থাকা কথাগুলো ?

ছেলে মেয়েকে ??? যাদের আপনি আদর যত্ন , ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। যাদের আবদার- সখ আহালাদ পুরন করেছেন খুশী মনে। অসুস্থ হলে সারারাত জেগে কাটিয়েছেন তাদের পাশে। যাদের বিভিন্ন পরীক্ষার সময় আপনি জায়নামাজ নিয়ে বসেছেন তাদের পরীক্ষা যেনো ভালো হয় সে দোয়া চেয়ে। যাদের পড়াশুনা শিখিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছেন নিজেদের অনেক সখ আহালাদ বাদ দিয়ে। তাদেরও কি সময় আছে আপনার আবেগ অনুভূতির কথাগুলো শোনার ? না নেই। ওরা মহা ব্যস্ত তাদের নিজের জীবন নিয়ে। প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করবে হয়তো কিন্তু আপনার অপ্রয়োজনীয় সুখ দুঃখ বা আবেগ অনুভূতির কথা শোনার বিন্দু মাত্র আগ্রহ বা সময় কিছুই নেই তাদের। তাদের বলতে গেলে ওরা বিরক্ত বোধ করবে।

- Advertisement -

এখন আসি আপনার স্বামীর কথায়। যে স্বামীর সাথে সুখে দুঃখে এতোটা বছর কাটিয়েছেন । বাইরে কাজ করে এসেও সংসার সামলিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে। যার জীবনে কোনো উন্নতিতে আপনি সব চাইতে বেশী খুশি হুয়েছেন এবং গর্বিত হয়েছেন, সে স্বামীর ও কি কোনো উৎসাহ আছে আপনার মন ভালো ও হালকা করার কথাগুলো শোনার ? না নেই। স্বামী চিরদিন স্বামীই থাকেন তিনি কখনো বন্ধু হতে পারেন না। আপনার স্বামী তার নিজের সুনাম ও উন্নতির চিন্তা যতোটুকু করবে সে চিন্তাকি আপনার জন্য করবে নাকি তার চাইতে বেশী উন্নতি আপনার জীবনে ঘটে গেলে পুলকিত অনুভব করবে? ( সবার ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা প্রযোজ্য নয় )।

আপনার স্বামীর কর্ম জীবনে তিনি ব্যস্ত ছিলেন তার কাজকর্ম , প্রচার প্রসার নিয়ে। কাজের পরেও ক্লান্ত পরের দিনের কাজের প্রস্তুতি নিয়ে।এখন তিনি অবসর গ্রহন করেছেন। আপনি কল্পনা করে রেখেছেন এখনিতো সময় দুজন একসাথে বসে কতো কথা বলার ও শোনার । এতো দিনের জমে থাকা আবেগ অনুভূতি বলার সুযোগ হয়নি এখন তা মন খুলে বলতে পারবেন, না সেটাও হোল না। এখন অবসর গ্রহন করা স্বামী অনেকটাই নিরস প্রকৃতির হয়ে গেছেন। কখনো কমপিউটার কখনো ফ্যস বুক কখনো কপাল কুঞ্চিত করে নিজের ভাবনায় ডুবে থাকেন। বয়েসের কারনে দেখবেন স্বামীর মেজাজটাও কেমন খিটখিটে হয়ে গেছে। কিছু বলতে গেলে এমন নিরস খিটখিটে ভাবে জবাব দিবে যেনো আপনি ভীষণ অন্যায় কিছু বলে ফেলেছেন।

তাহলে এতো বয়েসে এসেও কি পেরেছেন নিজের মনে জমে থাকা অনেক কথাগুলো কাউকে বলতে ? যে বন্ধুরা বা বন্ধু ছিলো মন দিয়ে আপনার মনের কথা শোনার তারাও কোথায় হারিয়ে গেছে যার যার জীবনের ব্যস্ততায় । আর এখন আপনি সবার মাঝে থেকেও নিজেকে বড্ড একা অনুভব করবেন।

আপনার হৃদয়ের ভিতরের খোপগুলো এতদিন ধরে আপনার মনের কথাগুল জমে টই টুম্বুর হয়ে রয়েছে তারাও প্রকাশের অভাবে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে আর আপনাকে হতাশা রোগে আক্রান্ত করতে থাকবে।তখন আপনার মনে হবে আপনার আপন বলে কেউ নেই। তখন কখনো হয়তো আপনার মনে হবে কোথাও চলে যাই কোন নিরিবিলি জায়গায় যেখানে আপনি নিজেকে নিজে অনুভব করতে পারবেন উপলব্ধি করতে পারবেন

অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় যে সকল নারীরা তার জীবনে অনেকটা সিঁড়ি অতিক্রম করে অনেকটাই নামী দামী হয়ে পরেছেন তখন তাদের সংসার টিকিয়ে রাখাটা কঠিন হয়ে পরে। কারন স্বামী দেবতারা অন্য সব কিছু সহ্য করতে পারলেও স্ত্রীর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠাটা ঠিক যেনো হজম করতে পারেন না। তখন তিনি ঈর্ষা পরায়ন হয়ে পরেন। আর পুরুষ মানুষের ঈর্ষা বড় ভয়ঙ্কর।
লোকে বলে নারীরা কুটিল হয় ঈর্ষা কাতর হয়। কারো যদি পুরুষ মানুষের কুটিলতার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তারা বুঝতে পারবেন পুরুষ মানুষের কুটিলতা নারিদের কুটিলতার চাইতে কতোটা অগ্রভাগ দখল করে আছে। তখন পুরুষ মানুষেরা পশুর রুপ ধারন করতেও দ্বিধা বোধ করে না।

তাই প্রত্যেকটি নারীরই নিজেকে ভালোবাসা অত্যান্ত জরুরী । আপনার কথা শোনার কেউ নেই? সমস্যা নেই আপনি নিজের কথা নিজেই বলুন নিজেই শুনুন। নিজেকে নিয়ে নিজে একটা নিজস্ব জগত তৈরি করে নিন। আসলে প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব একটা জগৎ থাকা প্রয়োজন। যে জগতের রানী আপনি নিজেই। যেখানে আপনার নির্ভর করতে হবে না কারো দয়ার উপর আপনার আবেগ অনুভূতি শোনার জন্য ।

ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles