10.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

বরখাস্ত ট্রাফিক কনস্টেবলের ‘৪০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট’, হেলিকপ্টার ভাড়া করে মেয়ের বিয়ে

বরখাস্ত ট্রাফিক কনস্টেবলের ‘৪০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট’, হেলিকপ্টার ভাড়া করে মেয়ের বিয়ে

মেয়ের শখ হেলিকপ্টারে চড়ে শ্বশুরবাড়ি যাবেন। জামাইসহ উড়বেন আকাশে। একমাত্র মেয়ের আবদার রাখতে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে হেলিকপ্টার ভাড়া করলেন বাবা। মেয়েকে হেলিকপ্টারে চড়ালেন। তাঁকে বধূ সাজিয়ে হেলিকপ্টারে করে ঘুরিয়ে আনলেন। মেয়ের এমন আবদার পূরণ করলেন চট্টগ্রামে সাময়িক বরখাস্ত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মো. মহিবুল্লাহ।

- Advertisement -

তবে, মেয়ের বিয়েতে এমন জমকালো আয়োজন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, সাময়িক বরখাস্ত একজন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল এত টাকার মালিক হলেন কীভাবে?

পরিবারের সূত্রে জানা যায়, মহিবুল্লাহর মেয়ের নাম নুসরাত জাহান। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আর তাঁর বিয়ে হয় নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়ার ছেলে ইরফান তাজুয়া অভির সঙ্গে। বর ইরফান নিজেও ব্যবসায়ী।

গতকাল শনিবার বেলা প্রায় ১টা নাগাদ একটি লাল রঙের হেলিকপ্টার লালখান বাজার জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবতরণ করে। হেলিকপ্টার নামতে দেখে আশপাশের উৎসুক জনতা ভিড় করেন। পাইলটের পাশের আসনে বসেন কনে নুসরাত জাহান। পেছনের আসনে বসেন মো. মহিবুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী। হেলিকপ্টারটি কয়েক মিনিট আকাশে উড়ে কাজীর দেউড়ি এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে অবতরণ করে।

বরখাস্ত ট্রাফিক কনস্টেবলের ‘৪০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট’, হেলিকপ্টার ভাড়া করে মেয়ের বিয়ে

মহিবুল্লাহর মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান হয় কাজীর দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ৪টা নাগাদ আবার আউটার স্টেডিয়ামে থাকা হেলিকপ্টারে চড়েন নববধূ নুসরাত ও বর ইরফান। নতুন দম্পতি হেলিকপ্টারে চেপে আকাশে ঘুরে বেড়ান। এরপর আবার আউটার স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। পরে নুসরাত জাহানকে প্রাইভেটকারে করে কাজীর দেউড়ি শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিবুল্লাহর নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে নগরের খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। গত বছর ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির। পরে পাহাড়তলী থানায় ভুক্তভোগীর করা মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তিনি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। এ সময় তিনি সিএমপি ট্রাফিক বিভাগে পশ্চিম জোনে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বরখাস্ত ট্রাফিক কনস্টেবলের ‘৪০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট’, হেলিকপ্টার ভাড়া করে মেয়ের বিয়ে

একাধিক সূত্র জানায়, চাকরিকালীন বিভিন্ন অপরাধে কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন মহিবুল্লাহর। বিপুল অর্থ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাঁকে অনেকেই হেলিকপ্টার ভাড়া করে কিশোরগঞ্জ বাড়িতে যেতে দেখেছেন। তিনি ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন উড়োজাহাজে। এ ছাড়া বর্তমানে আরএফ হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। গতকাল তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজেই এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে দাবি করেন।

জানতে চাইলে মো. মহিবুল্লাহ জানান, ‘মেয়ের বিয়েতে হেলিকপ্টারের ভাড়া বাবদ খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। কষ্ট করে মেয়ের শখটি পূরণ করেছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিবুল্লাহর নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তাঁকে এলাকাবাসী শাপলা নামে চেনেন। ফ্ল্যাটটির বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উনি আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি মূল্য দিয়ে ফ্ল্যাটটি আড়াই বছর আগে কিনেছেন।’

এদিকে মহিবুল্লাহ আজ রোববার সন্ধ্যায় ফোনকল করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পুলিশে চাকরিকালীন আমার জিপিএফ ফান্ড থেকে জমাকৃত টাকা উত্তোলন করে ১১ লাখ টাকা মেয়ের বিয়েতে খরচ করেছি। আমার নামে যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থেকে থাকে তাহলে সেটা তদন্ত করার জন্য আলাদা সংস্থা রয়েছে।’

উল্লেখ্য, জিপিএফ হচ্ছে জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডের সংক্ষিপ্ত। বাংলায় বলে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল। সরকারি চাকরিতে যারা রাজস্ব খাত থেকে বেতন–ভাতা পান তাঁদের মাসিক বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে রাখা হয়। চাকরি শেষে মোট জমাকৃত অর্থ ও সেটির ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদসহ দেওয়া হয়।

সূত্র : আজকের পত্রিকা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles