-0 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

হিরুর কথায় কেঁপে উঠলাম বলে কি

হিরুর কথায় কেঁপে উঠলাম বলে কি
ফাইল ছবি

আরএমও এর চাকরী সব ক্ষেত্রেই চৌকিদারের চাকরীর মতো অর্থাৎ সব দিকেই খেয়াল রাখতে হয় রাত নেই দিন নেই, ঘুম নেই, অসুখ বিসুখ নেই, সুখ দু:খ নেই, মায়া ভালোবাসা কিছুই নেই শুধু কাজ করে যাও। আমার জীবনটা সে সময় জিলিপির আড়াই প্যাচের মতো আড়াই পাকে বাধা পড়ে গেল। সকাল ৮টায় অফিসে এসে বসি। তারপরা সময় চলে যায় কাজের মাঝে, এর মাঝে সাব জেলে যেতে হয় সপ্তাহে দু-তিন দিন। এখানে ঢোকার সময় পড়ে ৩ স্যালুট আর বেরুনোর সময়ও একই।

তখন দুপুর ২-৩০ মি: অফিস শেষ হলে সোজা বাসায় চলে আসতাম আমরা দুজনাই। আমার ছোট ছেলেটা বসে থাকে আমাদের জন্য। বাপ বেটা খেলা করছি হঠাৎ দেখি জানালা দিয়ে হিরু ডোম উকি দিচ্ছে।-স্যার ডেড বডি আছে। হিরু বলে চলে চলে গেল। এখন আমাকে যেতে হবে পোষ্ট মর্টেম করতে। ছেলেকে তার মা আর কাজের ছেলের হাতে সপে দিয়ে চললাম।

- Advertisement -

কাগজ কলম হাতে সব নিয়েছি। পকেটে একটা রুমালও আছে। হিরু আমার জন্য বসে আছে। এরা হালকা নেশা করে মরা লাশ নাড়াচাড়া করা আগে। আমাদের নেশা হলো কর্তব্য আর দায়িত্ব তাই নিয়ে লাশ ঘরে ঢুকলাম। হিরু কাজ শুরু করলো। সুরৎহাল রিপোর্টে সব লেখা আছে কাজেই ধরণা আগেই হয়ে গেছে আমি শুধু তাকে গাইড দিচ্ছি এটা দেখাও ওটা দেখাও , এ অংশটুকু আরো একটু খোল। কেন যেন মায়া হলো। এ লাশ অপঘাতে মৃত এক দুখী তরুনীর। বললাম আর লাগবেনা। আমি বুঝতে পেরেছি।

-স্যার এ লাশ যদি কবর থেকে উঠিয়ে আবার নিয়ে আসে তাহলে আপনি কিন্তু ফেসে যাবেন? হিরুর কথায় কেপে উঠলাম বলে কি! -ঠিকআছে সব দেখাও। এখন হিরুই আমার মাষ্টার। কাজ করতে করতে তার অনেক জ্ঞান হয়ে গেছে। যে পয়েন্টগুলি টুকেছি তা দিয়ে ৬ পাতার রিপোর্ট লিখতে হবে অফিসে ফিরেই। বাইরে এসে দেখি শোকার্ত পরিবারের লোকজন আর একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন। বাসায় ফিরে আবার ছেলেটার সাথে খেলায় মেতে উঠলাম। মৃত এ তরুণীও হারিয়ে গেল আমার স্মৃতিপট থেকে!

ইনুভিক, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles