6.1 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

হিট এন্ড রান

হিট এন্ড রান
হিট করে স্পটে না থেকে পালিয়ে গেলে এবং ওই একসিডেন্টে কারো মৃত্যু হলে জেলও হতে পারে

কানাডাতে কোন ড্রাইভার একসিডেন্ট করলে এখানে কোন উত্তেজিত জনতা সমবেত হয় না। ফলে ড্রাইভারকে উত্তেজিত জনতার কবলে পড়তে হয় না। এখানে ড্রাইভারের নিরাপত্তা নিশ্চিত। গনপিটুনির সম্ভাবনা একেবারেই নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ এসে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।

কোন গাড়ী কাউকে হিট করে ড্রাইভার স্পটে না থেকে গাড়ী চালিয়ে পালিয়ে গেলে বড় ধরনের ক্রিমিনাল অফেন্স। হিট এন্ড রানের দায়ে তাকে সারাজীবন নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। হিট করে স্পটে না থেকে পালিয়ে গেলে এবং ওই একসিডেন্টে কারো মৃত্যু হলে জেলও হতে পারে।

- Advertisement -

হিট করে স্পটে না থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখানেও ঘটে তবে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখানে প্রায় প্রতিটি ইন্টারসেকশনে ক্যামেরা থাকায় তা ফাকি দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।তাই যত বড় একসিডেন্টিই হোক পারতোপক্ষে কেউ হিট এন্ড রান করে না।

কোন ড্রাইভার কাউকে হিট করলে এবং সংগে সংগে রিপোর্ট হলে এম্বুলেন্স, পুলিশ নিমিষেই হাজির হয়ে যায়।ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই একসিডেন্ট হওয়া ব্যক্তি বেঁচে যায়।অবশ্য একসিডেন্টে স্পট ডেথ হলে করার কিছু থাকে না।
উপরের বর্ননা থেকে কিছু বিষয় পরিষ্কারঃ

১) এখানে ড্রাইভারকে মব বা উত্তেজিত জনতার কবলে পড়তে হয় না। ফলে ড্রাইভারের জীবন নিরাপদ। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত।
২) সাধারণত কেউ কাউকে হিট করলে গাড়ীর ড্রাইভার স্পট থেকে পালিয়ে যেতে চায় না। কারন, সবাই মোটামুটি জানে হিট এন্ড রানের শাস্তি এখানে গুরুতর।
৩)একসিডেন্ট রিপোর্ট হলে প্রায় সংগে সংগেই পুলিশ এসে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে। কেউ হিট হলে এম্বুলেন্স এসে তাকে যথাসম্ভব শীঘ্রই হসপিটালে নিয়ে যায়।
উপরে যে তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করলাম তার মধ্যে একটি পয়েন্টও বাংলাদেশে বিরাজমান না। কানাডার অবস্থা তুলে ধরার কারন হলো দুদিন আগে রুবিনা আক্তার নামে একসিডেন্টে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুটি মর্মান্তিক।

“শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনের সড়কে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে ওই গাড়ির নিচে আটকে যান রুবিনা আক্তার (৪৫)। এ অবস্থায় এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে চলে যান চালক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব আজহার জাফর শাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। একাডেমিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ২০১৮ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন” (সূত্রঃ প্রথম আলো)
“এ বিষয়ে সাবেক জেলা জজ ও ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী রুবিনা আক্তার গাড়ির নিচে আটকে গেছেন। তখন তাঁর দেবরসহ সবাই গাড়ি থামানোর জন্য চালক আজহার জাফর শাহকে অনুরোধও করলেন। অথচ চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলেন।” ( সূত্রঃ প্রথম আলো)

প্রশ্ন হচ্ছে, অনুরোধ করা স্বত্তেও জাফর শাহ গাড়ী থামালেন না কেন? অনুরোধ না করলেও তো গাড়ী থামানো উচিৎ ছিল! এক কিলোমিটার যাওয়ার পরই বা গাড়ী থামলো কিভাবে?
গাড়ী সংগে সংগে না থামানোর দুটি কারন হতে পারেঃ

১) জাফর শাহ ভেবেছিলেন তিনি দ্রুত সটকে পড়তে পারলে পার পেয়ে যাবেন।

২) তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। গাড়ী থামালে যদি উত্তেজিত জনতা গনপিটুনি দেয়। গনপিটুনিতে তার মৃত্যুও হতে পারে। তার জীবনের নিরাপত্তা কি?

৩) এক কিলোমিটার পরও বা নীল ক্ষেত মোড়ে গাড়ী থামালেন কেন? এর কারন যেটুকু অনুমান করা যায়, রুবিনা আক্তারের দেহ গাড়ীর নিচে আটকে ছিল, সেই অবস্থায় হয়ত জাফর শার বোধদয় হয়েছিল তিনি বেশি দূর আর গাড়ী চালিয়ে যেতে পারবেন না, ধরা পড়ে যাবেন।
এই একই একসিডেন্ট কানাডায় হলে বিষয়টি কি রকম হতো ভেবে দেখুন।

১) জাফর শা স্পটেই থাকতেন। কারন, তিনি জানতেন হিট এন্ড রান করলে ধরা পড়ে যাবেন। এখানে আইনের ভয় আছে, আইন প্রয়োগের ভয় আছে। একে ফাকি দিয়ে পার পাওয়া যাবে না।

২) এখানে হলে জাফর শা উত্তেজিত জনতার ভয়ে গাড়ী চালিয়ে সটকে পড়ার চিন্তা করতেন না। কারন, এখানে জনতা উত্তেজিত হয়ে ড্রাইভারকে ধাওয়া করতো না, গনপিটুনি দিতো না। এখানে ড্রাইভারের নিরাপত্তা নিশ্চিত। তাই ড্রাইভার স্পটে দাড়িয়ে থাকলেও কোন ভয় নেই। জাফর শা স্পটে থেকে ৯১১ কল করতেন।
৩) স্পট ডেথ না হলে এখানে এমন একসিডেন্ট হলে রুবিনা আক্তার বেচেও যেতে পারতেন। দ্রুত এম্বুলেন্স এসে তাকে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যেতো। তিনি বেচে যেতেন হয়ত।
৪) এখানে এমন হলে দ্রুত পুলিশ এসে সব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতো।
বাংলাদেশে যারা সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারা উপরের বিষয়গুলি ভেবে দেখতে পারেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles