6.8 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৮৯টি ভোটের মধ্যে ১৬০টি ভোট পেয়ে ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর সদস্য পদের নির্বাচনে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জয়টি সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি ছিল ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত সব প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক নির্বাচন। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত হিসেবে বাংলাদেশ ইউএনএইচসিআর -এর চারটি আসনের মধ্যে একটি পেয়েছে ৭ জন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত অন্য তিনটি দেশ হল মালদ্বীপ (১৫৪ ভোট), ভিয়েতনাম (১৪৫ ভোট), এবং কিরগিজস্তান (১২৬ ভোট)। কয়েকদিন আগে বাহরাইন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (১২৩ ভোট) এবং আফগানিস্তান (১২ ভোট) নির্বাচনে হেরেছে।

- Advertisement -

এটি হবে ৪৭ সদস্যের ইউএনএইচআরসি-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পঞ্চম মেয়াদ। পূর্ববর্তী ইউএনএইচআরসি নির্বাচনে বাংলাদেশ ২০০৬, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে জয়লাভ করেছিল; কার্যকরভাবে কাউন্সিলের ব্যবসার নিয়ম অনুযায়ী সম্ভাব্য সব শর্তের জন্য। অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং অঙ্গীকারের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে বিশে^ নেতিবাচকভাবে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানোর যে প্রচেষ্টা করা হয়েছিল তা এই নির্বাচন বাতিল করে দেয়।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি দায়িত্বশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল সদস্য রাষ্ট্র। ইউএনএইচআরসি এর সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ আগামী তিন বছরের জন্য নির্বাচিত দেশ বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়েও বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়লাভ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সম্মান এবং সরকারের জন্যও স্বস্তির। মানবাধিকার কাউন্সিলের কাজ হলো সারা বিশ্বের সদস্য দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা। বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষনের দায়িত্বে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম।

সাধারণভাবে বলা যায় এই জয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াবে। তবে একই সঙ্গে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব নিয়ে পরিষদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অবশ্যই সমর্থনযোগ্য হবে না। ফলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে আরও সংবেদনশীল ও মনোযোগী হতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের প্রতি যে সীমাহীন আস্থা দেখিয়েছে তার পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং সরকার অবশ্যই সেই আস্থাকে সম্মান করার চেষ্টা করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের বিশাল বিজয় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে সহায়ক হবে।

অর্জন সম্পর্কে একটু খোঁজ নেওয়ায় কিছু বিষয় সামনে এসেছে যেগুলো বাংলাদেশের অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে আমরা মনে করি। প্রথমত, এর আগে চারবার সদস্য হওয়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এই ক্যাটাগরিতে একটি পরীক্ষিত নাম। আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেটের বাংলাদেশ সফরের পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যাতে দেখা যায় যে জাতিসংঘ মানবাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। ধারণা করা যায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই প্রতিবেদনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আরেকটি বড় ইস্যু যা বাংলাদেশকে বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে তা হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাহসিকতা দেখিয়ে মানবাধিকার রক্ষায় এক বিরাট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেই সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রত্যয় বিদেশী দেশগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানবাধিকারের ইস্যু নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেকেই হয়তো এই প্রসঙ্গে বলবেন।

জাতিসংঘে সর্বোচ্চ ভোটে জয় শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি বিশ্বনেতাদের আস্থার প্রতিফলন। বাংলাদেশের মানবাধিকারের রেকর্ডে বিশ্ব নেতৃত্বের যে আস্থা রয়েছে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সব সময়ই এগিয়ে আছে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ৫ম বারের মতো ৪৭ সদস্যের এই কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছে। এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবদান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাউন্সিলের দায়িত্ব পালনে আমাদের সক্ষমতার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর আস্থার স্পষ্ট প্রমাণ।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় জাতিসংঘের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সবার সাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

নির্বাচনের পর সদস্য দেশগুলোর বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শাসন এবং আর্থ-সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্ব এবং বিশ্ব শান্তির জন্য তার সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। সবাই আশা করে যে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে উদীয়মান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের আদর্শ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। দেশের দৈনিক সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলসহ সব গণমাধ্যমই গর্বভরে বাংলাদেশের এ অর্জনের সংবাদ প্রচার করছে। তবে বিশ্ব মিডিয়ায় এ খবর প্রকাশ্যে আসতে পারেনি।

এই নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নিজেই। তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি ৮০টি দেশে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের ধন্যবাদ জানান। প্রকৃতপক্ষে, সকলের ইতিবাচক অবদানের জন্য ১৬০টি দেশ গোপন ব্যালটে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে অনেক ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করেছে বলে এটি ইতিমধ্যে বিশ্বে সুপরিচিত।

লেখক, গবেষক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles