10.5 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

৩৫ বছর লাশ টানা হাশেম এখন জীবন্ত লাশ

৩৫ বছর লাশ টানা হাশেম এখন জীবন্ত লাশ

দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর দুই থানা এলাকা থেকে নিজ ভ্যানে লাশ নিয়ে মর্গে পৌঁছে দিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী হাশেম। কখনও দুর্ঘটনায় মৃত লাশ, কখনও আত্মহত্যা, কখনও হত্যার লাশ। আবার কখনও নদী-জঙ্গলে পাওয়া লাশও টেনেছেন তিনি। আবার আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা লাশও পৌঁছে দিয়েছেন লাশকাটা ঘরে। কখনও আবার একাই লাশকে গোসল দিয়েছেন, কবরও দিয়েছেন। তবে দীর্ঘ সময় লাশ টানা হাশেম নিজেই এখন জীবন্ত লাশ। এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে তার।

- Advertisement -

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন লাশ টানার কারণে তার নাম হয়ে যায় লাশ টানা হাশেম। অথচ এখন সেই হাশেমই যেন এক জীবন্ত লাশ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর এমনভাবেই জীবন পার করছেন তিনি। হাশেমের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কচুয়া কারিগরপাড়া গ্রামে। বাবার নাম আবু বক্কর প্রামাণিক।

নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে হাশেম জানান, ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের আগে স্থানীয় বিভিন্ন চা-স্টলে খড়ি সরবরাহ করতেন। বিয়ের পর দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেনেন একটি ভ্যানগাড়ি। বিয়ের ১৪ দিন পর থেকেই বড়াইগ্রাম আর বাগাতিপাড়া থানা পুলিশের ডাকে লাশ বহনের কাজ শুরু করেন। পারিবারিক জীবনে দুই ছেলে আর তিন মেয়ের বাবা। সবাইকেই বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে শুকুর আর গাফ্ফারও ভ্যান চালায়। তারা পৃথক খায়। স্ত্রীর এক চোখ অপারেশনের পর অনেক দিন থেকেই সে অসুস্থ। এখন মাত্র এক চোখে দেখে। ওই অবস্থায় তার লাশ টানা আয় দিয়েই চলতো সংসার।

হাশেম বলেন, নিজস্ব সম্পত্তি বলতে মাঠে ছিল ১৮ কাঠা আবাদি জমি, আর ৩ জাঠা জমির ওপর বাড়ি। এ নিয়েই সন্তুষ্টচিত্তে চলছিল জীবন। কিন্তু হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমি নিজেই এখন বোঝা, নিঃস্ব ও অসহায়।

তিনি জানান, গত ১৫ জানুয়ারি প্রতিবেশী এক ভাতিজা তার মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য হাশেমকে বলেন। পরে নাতনির বাড়িতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই ভাতিজার ভ্যানগাড়িতে ফেরার পথে মালঞ্চি বাজারে দুর্ঘটনা ঘটে। বিপরীত দিক থেকে ইঞ্জিনচালিত একটি ভ্যান সজোরে তার পায়ে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়ির সামনের দুটি রড নাটসহ তার ঠ্যাংয়ে ঢুকে যায়। ধাক্কায় তাদের ভ্যানটি উল্টে গেলে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ওই ঘটনা আর তার রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ভয়ে দূরে সরে যান। ওই অবস্থায় নিজেই চামড়ায় ঝুলে থাকা ভাঙা ঠ্যাং ভ্যানে উঠিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যান। এরপর রাজশাহীর চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। সেখানে পর পর দুইবার অপারেশন করতে তার গ্রামের ১৮ কাঠা জমি ও বাড়িতে পালন করা দুটি বাছুর বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তার সম্বল ৩ কাঠা জমির ওপরের ভিটেবাড়ি।

তিনি জানান, আগামী ২০ দিন পর তার আরও একটি অপারেশন হওয়ার কথা। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা সংসারের খাওয়া খরচের পাশাপাশি ওই অপারেশনের টাকা জোগাড় করা নিয়ে রয়েছেন তিনি দুশ্চিন্তায়।

হাশেম প্রামাণিক বলেন, দুর্ঘটনার পর দুই ছেলে কিছু সহযোগিতা করেছে। এছাড়া দুই থানা থেকে পুলিশও সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিল। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, ৩৫ বছর লাশ টেনে নিজেই এখন জীবন্ত লাশের মতো বাড়িতে অসহায় জীবন যাপন করছি। অপারেশন ছাড়াও প্রতিদিন ৭-৮শ’ টাকার ওষুধ লাগে। চিকিৎসার খরচ জোগাড়ে তাই প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ প্রশাসনসহ সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles