10.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

মহাজোটের আড়ালে নির্বাচনী জোট

মহাজোটের আড়ালে নির্বাচনী জোট

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এক দলের লক্ষ্য ক্ষমতা ধরে রাখা; আরেক দলের লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া। এখন পর্যন্ত বিএনপির এক কথা- তারা নির্দলীয় নির্বাচনী সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না। এক কথা আওয়ামী লীগেরও- শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। আর সেটার ওপর ভিত্তি করেই সমমনা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আদলে মহাজোট গড়ার পরিকল্পনাও করছে। তবে এই মহাজোটকে এখন পর্যন্ত আড়ালে রেখেই ভোটের ডালা সাজাতে চায় ক্ষমতাসীন দল।

- Advertisement -

আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কর্মসূচিতে নতুন নির্বাচনী মহাজোটকে সামনে আনার পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে পর্দার আড়ালে এই নির্বাচনী মহাজোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক হবে। এমনকি ভোটের অংক মেলাতে বৈঠক হতে পারে দেশের বাইরেও।

আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে, বিএনপি ভোটে এলে কী হবে, আর না এলে কী হবে, তার নকশাও তৈরি হচ্ছে। এমনকি নির্বাচনে জিতলে ক্ষমতার ভাগাভাগিটা কেমন হবে, আর হেরে গেলে কী হবে, সেই আলোচনাও সমমনা দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে করছেন ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলছেন, আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। নির্বাচনে ‘ভোটের কারচুপি’ নয়- বিজয়ী হতে হবে রাজনৈতিক কৌশল ও ভোটের মধ্য দিয়ে। যে কারণে আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে দলটি তলে তলে নির্বাচনী মহাজোট গড়ার পথে হাঁটছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিনটি নির্বাচনের মতো চৌদ্দ দলের সঙ্গে এবারও মহাজোটে থাকবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। শর্তসাপেক্ষে আড়ালে থাকতে পারে কয়েকটি বাম দল ও দশটিরও অধিক ইসলামি দল।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে চৌদ্দ দল ও জাতীয় পার্টি ছিল। জাতীয় পার্টিকে মহাজোটে নেওয়ায় কয়েকটি দল জোট থেকে বেরিয়ে যায়। পরে অবশিষ্ট দল ও জাতীয় পার্টিকে নিয়েই হয় নির্বাচনী মহাজোট। এর মধ্যে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মহাজোটের শরিকরা পৃথকভাবে ‘সমঝোতার ভিত্তিতে’ নির্বাচনে অংশ নেয়। ২০১৮ সালে নির্বাচনী মহাজোটে জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত ইসলামি জোটকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে বিদেশি মহলের প্রচ্ছন্ন চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন সংস্থাও চাচ্ছে আগামী নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, রাজনীতির নানা ‘পরীক্ষায়’ উত্তীর্ণ দলগুলোকে আসন্ন নির্বাচনী মহাজোট তৈরিতে বেশি কাজে লাগানো হবে। তারা আরও বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাজোট গঠনের ক্ষেত্রে অওয়ামী লীগের নির্দেশনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি

পার্টি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যা নির্বাচনী মহাজোট গঠনের অংশ বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চের একটি অংশ, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের একাংশ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে দর কষাকষি চলছে। হিসাব মিলে গেলে শর্তসাপেক্ষে এসব দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আড়ালে থেকে কাজ করবে। জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক দল ছাড়াও কুমিল্লার বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুসহ কয়েকজন বহুল পরিচিত নেতার সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি এখন পর্যন্ত ৩০০ আসন এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে। এর বাইরে আপাতত কোনো চিন্তা নেই। বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষক শ্রমিক লীগ ও আমার বাংলাদেশ-এর (এবি পার্টি) নেতৃবৃন্দ সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। আসার পরে রাজনীতি-অর্থনীতি সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা জোটের কোনো বিষয় না। তবে কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। যেমন- জনস্বার্থে আমরা এক সঙ্গে প্রতিবাদ করব; আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করব।

চৌদ্দ দল থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ জাসদ এখনো কোনো রাজনৈতিক জোটে অংশ নেয়নি। এই দলটিকেও মহাজোটে আনা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও বিষয়টির সত্যতা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চৌদ্দ দলের সঙ্গে আমরা যাব না। অন্য দলের উদ্দেশ্যসাধনের জন্য আমরা চৌদ্দ দলে যাব না। এ রকম ছাইপাস জোটে আমরা যাব না। জোট তো আমরা করতেই পারি।’ তিনি জানান, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর দলটির গন্তব্য কোনদিকে যাবে- এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, নির্বাচন একটা কৌশলী বিষয়। এখানে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতা নির্বাচনী প্রক্রিয়ারই অংশ। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ নয়, বরং অন্যান্য দলই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছে।

দলটির একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার স্বার্থে যেসব দলের সঙ্গে জোট করা বা সমঝোতা করা দরকার, তা আওয়ামী লীগ করবে। তবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে সমঝোতা তো দূরে থাক, কোনো আলোচনাও হবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তো জোট আছেই। অসাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতার চেতনাবোধের ওপর ভিত্তি করে একসঙ্গে সমমনা দল নিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা তো আমাদের আছেই। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য আমাদের সভা-সমাবেশে জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা আমাদের মাথায় আছে।’ জোটের পরিধি বাড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিধি তো বাড়তেই পারে। তবে স্বাধীনতার পক্ষের অসাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে কোনো আপত্তি থাকবে না।’

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles