1.5 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

শিনজো আবেকে যেসব কারণে মানুষ মনে রাখবে

শিনজো আবেকে যেসব কারণে মানুষ মনে রাখবে

জাপানের সদ্যপ্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী হিসাবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে লিবারের ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) দু-দুবার নির্বাচনে জেতে। প্রথম দফায় তিনি খুব অল্প সময় ক্ষমতায় ছিলেন- ২০০৬ সালের শুরু থেকে এক বছরের কিছুটা বেশি এবং তার ওই শাসনকাল নিয়ে কেলেঙ্কারি আর বিতর্ক ছিল।

- Advertisement -

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জাপানের দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানুষ তাকে কেন এবং কীভাবে মনে রাখবে সেটি তুলে ধরা হয়েছে।

২০১২ সালে শিনজো আবের ক্ষমতায় ফেরা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর। তারপর ২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করা পর্যন্ত টানা আট বছর তিনি জাপানের ক্ষমতায় ছিলেন।

দ্বিতীয় দফায় আবে যখন প্রধানমন্ত্রী হন জাপান তখন অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। মুদ্রা সরবরাহ সহজ করে এবং ব্যবসায় নানা রকম অর্থিক প্রণোদনা দিয়ে তিনি জাপানের স্থবির সেই অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধির পথে নিয়ে আসেন।

২০১১ সালের সুনামি এবং ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞে জাপানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। সে সময় ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে দুর্ঘটনায় দেশটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ধাক্কা গিয়ে পড়ে অর্থনীতিতে। কিছুদিন পর ক্ষমতায় এসে সেই সংকট সামলেছিলেন শিনজো আবে।

শিনজো আবে নতুন করে জটিল পাকস্থলির আলসারে আক্রান্ত হয়েছেন- বেশ কিছুদিন ধরে এমন সন্দেহ-কানাঘুষো চলার পর ২০২০ সালে পদত্যাগ করেন তিনি। একই রোগের কারণে ২০০৭ সালেও তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। তার পদত্যাগের পর তার উত্তরসূরি হন ঘনিষ্ট রাজনৈতিক মিত্র ইয়োশিহিদে সুগা।

ক্ষমতার চূড়ায় ওঠার প্রক্রিয়া
আবের বাবা ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিনতারো আবে। তার নানা অর্থাৎ মাতামহ ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নবুসুকে কিশি। সুতরাং জাপানের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে ছিল তার জন্ম এবং বড় হওয়া।

জাপানের পার্লামেন্টে তিনি প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৯৩ সালে। পরে ২০০৫ সালে মন্ত্রীসভার সদস্য হন যখন তৎকালীন প্রধনমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি তাকে প্রধান কেবিনেট সচিব পদে নিয়োগ দেন। পরের বছরই অর্থাৎ ২০০৬ সালে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে চমকে দিয়েছিলেন।

কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই বিশাল সংখ্যায় পেনশন রেকর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো বেশ কিছু স্পর্শকাতর কেলেঙ্কারির মধ্যে পড়ে যায় তার সরকার। এর জেরে ২০০৭ সালের জুলাইতে পার্রামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয় হয় ক্ষমতাসীন এলডিপির।

সেপ্টেম্বরে ‘আলসারেটিভ কলিটিস’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে পদত্যাগ করেন শিনজো আবে। কিন্তু ২০১২ সালে ঘোষণা দেন তিনি সেরে উঠেছেন এবং আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরে আসেন। পরে ২০১৪ সালে এবং ২০১৭ সালে তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। হয়ে ওঠেন জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী।

একজন বিতর্কিত জাতীয়তাবাদী
একটি আক্রমণাত্মক বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা নীতির সূচনা করেন শিনজো আবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান সংবিধানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোনো একটি যুদ্ধবিগ্রহ করবে না। ক্ষমতায় এসে আবে ওই সংবিধান সংশোধন করতে উদ্যত হন। তার এই কট্টর জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার কারণে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের সম্পর্কে চাপ তৈরি হয়।

কোভিড সামাল
২০২০ সালে জাপান আবারও মন্দার কবলে পড়ে। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে আবের অর্থনৈতিক নীতি আসলে কতটা টেকসই। কোভিড মহামারি সামলানোর ক্ষেত্রেও তার সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন ওঠে এবং তার জনপ্রিয়তা বড় রকম পোড় খায়। সমালোচনা শুরু হয়, অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাড়াতে গিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

পদত্যাগ এবং মৃত্যু
গত বছর ২৮ আগস্ট যখন আবে পদত্যাগ করেন, তার দলের মধ্যে প্রচণ্ড কোন্দল শুরু হয়ে যায়। কারণ, তিনি নিজে কাউকে উত্তরসূরি হিসেবে পছন্দ করে যাননি। তবে তার জায়গা নেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক এবং মন্ত্রীসভার সদস্য ইয়োশিহিদে সুগা। পরে সুগাকে সরিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ক্ষমতা নিলেও জাপানের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে আবের প্রভাব অব্যাহত থাকে।

৮ জুলাই জাপানের পার্লামন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার জন্য দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নারায় যান আবে। সেখানে এক বক্তৃতা দেওয়ার সময় ৪১ বছর বয়সী একজন বন্দুকধারী তাকে গুলি করে। জানা গেছে, হত্যাকারী একজন সাবেক নৌ সেনা। হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও আবে সচেতন ছিলেন, কিন্তু পরে তিনি মারা যান।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles