8.1 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

জর্জ ব্রাউন কলেজ ও অনারারি ডক্টরেট

জর্জ ব্রাউন কলেজ ও অনারারি ডক্টরেট
ফাইল ছবি

রাহুল দ্রাবিড়কে সকলেই চিনেন ভারতের নামকরা ক্রিকেট খেলোয়ার হিসেবে। ২০১৭ সালে বেঙ্গালুর ইউনিভার্সিটির ৫২তম কনভোকেশন তাকে সহ তিনজনকে সম্মানসূচক (অনারারি) ডক্টরেট ডিগ্রি দেবার জন্য সুপারিশ করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর এবং কর্ণাটকা রাজ্যের গভর্ণর সেটি অনুমোদন করেন।
রাহুল দ্রাবিড় বিনয়ের সাথে তাকে অফার করা সেই অনরারি ডক্টরেট ডিগ্রী প্রত্যাখান করেন। বেঙ্গালুর ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর বি থিম্মে গাউড়া এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে সবাইকে জানিয়ে দেন যে, তাদের দেয়া ডক্টরেট ডিগ্রী রাহুল দ্রাবিড় ধন্যবাদের সাথে এই বলে প্রত্যাখান করেছেন যে, তিনি চেষ্টা করবেন পিএইচডি কোর্সে যথাযথ পড়াশুনা ও রিসার্চ করেই তিনি এই ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করতে চান, কোন অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রী নয়।

এর কিছুদিন পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে আরো বিস্তারিত বলেন কেন তিনি সেদিন সেই অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রীর ফাও মালিক হতে চান নি। তিনি বলেন, তার মা ৫৫ বছর বয়সে অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করে, অনেক সময় ব্যয় করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। তার স্ত্রীর সার্জন ৭ বছর পড়াশুনা করে সার্জারীতে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। তিনি বলেন, যখনই আমার কোন কিছু পাবার ইচ্ছে করেছে, তখনই মনে হয়েছে সেটি আমাকে অর্জন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এটি এমন নয় যে অন্যদেরকেও আমার মত ভাবতে হবে, তবে এর আগেও এরকম অনেক অফার এসেছে ইমেইলে এবং আমি তা গোপনেই প্রত্যাখান করে দিয়েছি। কিন্তু এই সর্বশেষ অফারটা কিভাবে যেন পাবলিকলি প্রকাশ হয়ে গেছে।

- Advertisement -

পৃথিবীর সব মানুষ একভাবে চিন্তা করে না। ১৯৯৮ সালের কথা। এক বছর হলো তখন সবে টরন্টো এসেছি, ভাবছি কিভাবে নুতন করে পড়াশুনা শুরু করা যায়! এরমধ্যে এক বাঙালী পরিচিত ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো, বুয়েট থেকে পাস করা ভদ্রলোক তখন টরন্টোতে ট্যাক্সি ক্যাব ড্রাইভ করে সপ্তাহে অনেক টাকা ইনকাম করেন বলে প্রচার করতেন। হঠাৎ একদিন ফোন করে বললেন, ভাই আমি আগামী কয়েক সপ্তাহ ব্যস্ত থাকবো, কথা বলতে পারবো না। কারণ আমি পিএইচডি করছি। ভদ্রলোক পরিবার নিয়ে মাঝে মাঝেই আসতেন, আমাদের তখনো কোন গাড়ী ছিল না, তিনি আমাদেরকে টরন্টোর বিভিন্ন পার্কে বা লেইকের ধারে বেড়াতে নিয়ে যেতেন তার গাড়ীতে করে।

সপ্তাহ দুয়েক পরে এসে বললেন আমার পিএইচডি শেষ, আমি এখন ডক্টর অমুক। এখানেই থামলেন না, বললেন, ভাই আমিও বাংলাদেশে যাব, আপনিও যাবেন, আপনি সেখানে কোন চাকুরী পাবেন না, কিন্তু আমি এই পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য ঠিকই কোন একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকুরী পেয়ে যাব। বছর কয়েক এদিক সেদিক ঘুরে তিনি ঠিকই বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন সপরিবারে এবং সম্ভবত ঠিকই সেই ভুঁয়া পিএইচডি ব্যবহার করে কোন একটা চাকুরী তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন সেখানে, আর কখনো তাকে টরন্টো ফিরতে হয় নি। আর আমি ভর্তি হলাম এখানকার জর্জ ব্রাউন কলেজে। তিন তিনটি বছর একেবারে ১৬/১৭ বছরের তরুণের মত করে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ক্লাস, টিউটোরিয়াল শেষ করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং এনালিসিসের ডিপ্লোমা নিলাম। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যখন আমার হাতে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হলো, আমার সেদিনের সেই ছবিই বলে দেয় কতখানি গর্বিত ভঙ্গিমা ফুটে উঠেছিল আমার চেহারায়। সাধারণ অংক, বাইনারি অংক, সি প্লাস প্লাস, ভিজ্যুয়াল বেসিক, পাউয়ার বিলডার, জাভা প্রায় প্রতিটি সাবজেক্টেই ভাল নম্বরই শুধু পেয়েছিলাম তা নয়, আমার ক্লাসে ভারতীয়, পাকিস্তানি ও শ্রীলংকা থেকে আসা একটি খুদে গ্রুপ সহ অনেককে টিউটোরিয়াল সহ পড়াশুনার বিষয়ে অনেক হেল্পও করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

জীবনে একবার একটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলাম যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন যেখানে মানুষ তাদের ইচ্ছেমত ভোট দিতে সক্ষম হয়েছিল।

কোনরকম তালবাহানা, প্যাচ, পলিট্রিক্স না করে কিভাবে মানুষের উপকার করা যায় সেটিই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। কখনোই টাকা পয়সা, সম্পদ অর্জনের পেছনে ছুটি নাই। কখনোই কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্যে সিরিয়াস ছিলাম না। যে কোন উপায়ে কোন কিছু পেতেই হবে সেরকমটা কখনোই মনে আসে নাই। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে যখন নির্বাচন করি তার তিন চার মাস আগেও জানতাম না আমাকে এত ভাল একটা চাকুরী ছেড়ে দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হতে হবে। আমার চেয়ে যোগ্য, মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি পৃথিবীতে কোটি কোটি আছে। কারো জন্য কোন কিছু বসে থাকে না, শূন্যস্হান কোন না কোনভাবে পূরণ হয়েই যায়। আমার নিজের জন্য কোন আক্ষেপ আগেও ছিল না, এখনো নেই। বিলয়ন ডলারের মালিক কিংবা ফকিন্নী, ডক্টরেট ডিগ্রীধারী কিংবা মুর্খ বকলম, সবই সাময়িক, সবাই আমরা ক্ষণিকের পথিক! এই আছি এই নেই। স্বল্প সময়ের এই সফরে কে কি হলেন বা না হলেন তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। কোন কিছুর প্রতিই আমার কোন মোহ নেই, আছে শুধু দায়িত্ব পালন করে যাবার প্রচেষ্টা।

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles