1.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

সুখ ও অ-সুখ

সুখ ও অ-সুখ - the Bengali Times
আলিকো সানওয়াং

অসুখ শব্দটা দারুণ কুৎসিত একটা শব্দ। তাকে কেউ ভালোবাসে না। তবু সে মানুষকে ছাড়তে চায় না। খেয়াল খুশি মতো মানুষের দেহে এসে নানা পরিচয়ে বাসা বাঁধে। কখনো তাকে খুব সহজেই তাড়ানো যায় আবার কখনো সে আটঘাট বেঁধে বসে যায়। আসলে মানব দেহ একটা যন্ত্র। সে তো মাঝে মাঝে অকেজো হবে, নষ্ট হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আর যন্ত্র যত পূরানো হবে তাকে তত ঘন ঘন নিতে হয় সারাবার জন্য। কিন্তু এটা মেনে নিতে কারোই ভালো লাগে না। আমারও লাগে না। অসুস্থ হলে আমার হৃদয় বীণা আর বাজে না। আমার মনের আকাশে কালো মেঘ জমে। বুকের গভীরে যে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাই সেও যেন কোনো অজানা আশঙ্কাতে স্তব্ধ হয়ে যায়। সর্বোপরি মেজাজের উত্তাপ অনেক বেড়ে যায়। কদিন থেকে আমি অ-সুখী আছি। সুখের পাখি উড়ে গেছে আমার জীবন থেকে। সে বাসা বেঁধেছে অন্য কোথাও যেয়ে আমাকে বিছানাতে শুইয়ে দিয়ে।

আমার অসুখের সাথে সাথে আকাশও বড্ড কষ্টে পড়ে গেছে। বিরামহীনভাবে কেঁদে চলেছে, থামার কোনো নামই নেই। সূর্য বহুবার চেষ্টা করছে উঁকি দিতে কিন্তু আকাশের সাথে পেরে উঠছে না। সে কারণে মনটা আরো বেশি বিষণ্ণ হয়ে আছে।

- Advertisement -

আজকাল বেশ ঘন ঘন আমার সুখের বাসায় অসুখ এসে বাসা বাঁধছে। এই ব্যাপারটা যে আমাকে হতাশাগ্রস্থ করেছে না সেটা বললে সত্যকে অস্বীকার করা হবে। কবে কোনো ছোটবেলাতে এক জ্যোতিষী হাত গণনা করে আমাকে কিছু ভবিষ্যৎবাণী শুনিয়েছিল। কাকতালীয়ভাবে সে ভবিষ্যৎবাণীগুলো সত্যতে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে একে একে। এখন আমি সে জ্যোতিষীর আর একটি বাণীর সময়ে পা দিয়েছি। আবারো আমি কাকতলিওভাবে ভবিষ্যৎবাণীর কারাগারে বন্দি হয়েছি। ভাবছি কী করে এটা সম্ভব? সত্যিই কি মানুষের হাতের রেখাতে কিংবা চেহারাতে ভবিষ্যতের কথা লেখা থাকতে পারে? এসব কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না এবং বিশ্বাস করাও উচিৎ না। তবুও জীবনে অনেক কিছু ঘটে যায় যা কি-না বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলনাতে দুলতে দুলতে এক জায়গাতে এসে স্থির হয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।

মানুষের সুখী ও অসুখী হওয়ার ব্যাপারটা অনেকটাই আপেক্ষিক। কে যে কী কারণে সুখী হচ্ছে, আবার কে কী কারণে অসুখে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে বলা মুশকিল। যে মানুষগুলো একথালা গরম ভাত একটু ভালো তরকারি খাবার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে,তাদের কাছে সেটাই সব চাইতে সুখের ও আনন্দের জিনিশ। আবার অনেক মানুষ আছে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। দামি গাড়িবাড়ি এবং জাগতিক নানা জিনিশ ভোগ করেও মনে একফোঁটা সুখ অনুভব করতে পারছে না। তার জীবনের নানারকমের অ-সুখ তার জীবনের সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে। বিচিত্র এই পৃথিবীতে বৈচিত্র্যময় মানুষের জীবন।

মৃত্যুর চাইতে বড় সত্য আর কিছু নেই। সবকিছু থেকে পালিয়ে যেতে পারলেও মৃত্যু থেকে পালাবার কোনো পথ নেই। ‘ জন্মিলে মরিতে হইবে’ এটাই জগতের নিয়ম। তারপরও কে যেতে চায় এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে, আপনজনদের ছেড়ে। সেখান থেকে ফিরে আসার যে আর কোনো পথ নেই। অনেক বৃদ্ধ মানুষটিও মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মৃত্যুকে অস্বীকার করে স্বস্তিবোধ করে। আমাদের চারপাশে অনেকের মৃত্যুর সংবাদ পেলেও আমাদের মনে হয় আমাদের এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে না। আমরা অনেকদিন বেঁচে থাকবো। এই বিশ্বাসে প্রতিটি মানুষ মনে শক্তি নিয়ে স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে। এটাই মানব জীবন।

ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles