18.3 C
Toronto
শনিবার, মে ১৮, ২০২৪

পহেলা বৈশাখ : বাঙালীর নববর্ষ

পহেলা বৈশাখ : বাঙালীর নববর্ষ
আগের দিনে এই দিনটিতে হালখাতা দিবস হিসেবে পালন করা হতো

পহেলা বৈশাখ, বাঙালীর নববর্ষ। আগের দিনে এই দিনটিতে হালখাতা দিবস হিসেবে পালন করা হতো। তখন ইংরেজী ক্যালেন্ডার নয় বাংলা পন্জিকা ফলো করা হতো। সকলের জন্মদিনও বাংলা মাসের হিসেবে খাতায় লিখে রাখা হতো। হালখাতার দিনে দোকানে দোকানে মিষ্টি, দোয়া মাহফিল বা পূজা পার্বন করে যতটা সম্ভব বকেয়া টাকা আদায় করে নুতন খাতা খুলে বছরের হিসাব নিকাশ নুতন করে শুরু করা হতো। বাড়ী ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধোঁয়া মুছা করে ধুপ আগরবাতি গোলাপজল ছিটিয়ে ফ্রেশ স্টার্ট করা হতো। অর্থাৎ নুতন বছরটি যাতে শুভ হয় বা আগের বছরের চেয়ে ভাল কাটে তার জন্য কর্মযজ্ঞ শুরু হতো। মুখে মুখে ফেইক শুভ কামনা করার প্রচলন ছিল না। ছিল না আরো অনেক কিছুই।

১লা জানুয়ারী বা ১লা বৈশাখ এলেই আমরা এখন একটা শুভ কামনা জানাই যা পুরোটাই মৌখিক এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফেইক। নুতন বছর এমনি এমনি বা অটোমেটিক্যালি শুভ হয়ে যায় না। বিগত বছর গুলির দিকে তাকান, প্রমান পেয়ে যাবেন।

- Advertisement -

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে দেশে বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২ সংসদে পেশ করা হয়েছে। বৈষম্য করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই আছে। বাংলাদেশে এতদিন পরে কেন মনে পড়লো? ত্রুটিপূর্ণ এই বিলটি পাস হলে তবুও কিছু একটা কাজ হবে কিন্তু আইন না থাকার কারণে এতদিন বৈষম্য করে সবাই পার পেয়ে গেছেন। অর্থাৎ মুখে মুখে বা বক্তৃতায় বৈষম্য হীন সমাজ কায়েমের আকাংখা ব্যক্ত করলেও তাতে বৈষম্য কমে যায় নি বরং বেড়েই চলেছে। এখন আইন করে যদি কিছুটা কমে। মানে হলো মানুষকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। মুখের কথায় কাজ হয় না। ঠিক তেমনি নববর্ষ এমনি এমনি শুভ হয়ে যাবে না। আমার আপনার শুভেচ্ছা বিনিময়ে কিছুই হবে না। ধরুন আজ আমি আপনাকে বললাম শুভ নববর্ষ। সকালে আপনি আমার দোকানে গিয়ে দেখলেন যে জিনিষ গতকালও কিনেছেন দশ টাকা দিয়ে সেটা আজ বিশ টাকা দাম চাইছি। অর্থাৎ রাতভর শুভেচ্ছা বিনিময় ছিল আমার ফেইক বা আজাইরা লোক দেখানো টাইম পাস। যে অফিসে চৈত্র মাসেও ঘুষ ছাড়া কাজ হয় নি, সেই অফিসে রাতারাতি বৈশাখ মাস থেকে সবাই ফেরেশতা হয়ে যায় না। আগের বছর যারা যানজটে নাকাল ছিলেন তারা যতই শুভ নববর্ষ বলুন না কেন, পরের বছর তারা কি যানজট থেকে রেহাই পান? পান না কারণ তার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। অথচ যারা আপনার শহরকে যানজট মুক্ত করার দায়িত্বে আছেন তারাও কিন্তু শুভ নববর্ষ বলে মুখে ফেনা তুলেছেন, মংগল শোভাযাত্রা করে ঘর্মাক্ত হয়েছেন, হাউস করে পান্তা খেয়েছেন, ফেসবুকের পাতা ছয়লাব করেছেন, শুধু দায়িত্বটা পালন করেন নি।

আমেরিকায় এই প্রথম একজন কালো মহিলা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেলেন। সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বা মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাকে কিন্তু যথারীতি সিনেটে দীর্ঘ শুনানীর পর সিনেট সদস্যদের ভোটাভুটিতে ৫৩-৪৭ ভোটে বিজয়ী হয়ে তার নিয়োগ চুড়ান্ত হয়। সিনেটে সরকারী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ৫০ এবং বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির ৫০ জন সদস্য। অর্থাৎ বিরোধী দলের কয়েকজন পার্টির লাইন ক্রস করে সরকারী দলের পক্ষে ভোট দিয়েছে যে কারণে ৫৩ ভোট হ্যা বাক্সে পরেছে। দুটো বিষয় লক্ষ্য করুন এখানে।

প্রেসিডেন্ট ইচ্ছে করলেই বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারে না। আবার সিনেট মেম্বাররা ইচ্ছে করলে দেশের স্বার্থে নিজ দলের বিপক্ষে গিয়েও ভোট দিতে পারে তাতে তাদের সিনেট সদস্য পদ হারাতে হয় না। অর্থাৎ তারা কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করে না। কারণ তারা জনগনের সত্যিকার ভোটে নির্বাচিত, ছল চাতুরী বা প্রতারণা করে তাদের নির্বাচিত হতে হয় না। ফলে সেদেশে যখন একজন বিচারপতি নিয়োগ হয় তিনি বিচারকাজে কোন পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ পান না। পায়রোবী করে টিকে থাকার দরকার হয় না। এই যে শাসন ব্যবস্হা, বিচার ব্যবস্হা এগুলো কি কারো মুখের কথায় চালু হয়েছে বা মুখে মুখে চলছে? এধরনের সিস্টেম দেশের জাতীয় স্বার্থে তারা সরকারী দল বিরোধী দল মিলে এমনভাবে তৈরী করেছে যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। অর্থাৎ তাদেরকে কাজ করতে হয়েছে সে কারনেই তাদের দেশের মানুষ তুলনামূলক কম বৈষম্যের শিকার হয়, মিনিমাম টাকায় স্ট্যান্ডার্ড জীবন ধারণ করেন, অন্যায়ের শিকার হলে দল মত দেখেন না, বিচার পান।

কাজেই আমাদেরকেও জনগনের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ যাতে মিনিমাম সুখ স্বাচ্ছন্দের মধ্যে জীবন ধারন করতে পারেন, সেরকম একটা মানবিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। কেবল তাহলেই বছরের পর বছর নববর্ষ গুলো শুভ হবে, কল্যাণকর হবে। মুখের ফাঁকা বুলি আর রঙ বেরঙের শুভ নববর্ষ সম্বলিত স্টিকার ফ্লায়ার, বাণী দিয়ে কাজ হবে না, বছর শুভ হবে না, সাময়িক তৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে।

আসুন নুতন বছর যাতে সত্যিই শুভ হয় তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। দিন যায়, মাস যায় বছর গিয়ে বছর আসে, বর্ষ কিন্তু শুভ হয় না।

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles