18.4 C
Toronto
রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

আইফোনের সিস্টেমকে বোকা বানাল ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার, তথ্য চুরি সৌদি নারীর

আইফোনের সিস্টেমকে বোকা বানাল ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার, তথ্য চুরি সৌদি নারীর - the Bengali Times
লুজেইন আল হাথলুল

সৌদি আরবের অ্যাক্টিভিস্ট লুজেইন আল-হাথলুল ২০২১ সালে তার আইফোনে একটি সন্দেহজনক ফাইল দেখতে পান। সেটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী হ্যাকিংয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন লুজেইন আল-হাথলুল। ২০১৯ সালে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর নজর রাখার একটি প্রকল্পের আওতায় আল-হাথলুলের আইফোন হ্যাক করা হয়েছিল। পরে ফোনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে আখ্যা দেয়া হয় এবং গ্রেফতার করে সৌদি আরবে জেলে পাঠানো হয়।

- Advertisement -

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আল-হাথলুলকে গুগল জানায় যে, রাষ্ট্র সমর্থিত হ্যাকাররা তার জিমেইল অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। এ ঘটনায় তিনি তার আইফোন হয়ত আবারও হ্যাক হয়ে থাকতে পারে, বলে আশঙ্কা করেন। তাই বিষয়টি তিনি কানাডার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘সিটিজেন ল্যাব’কে জানান।

সিটিজেন ল্যাবের গবেষকরা আল-হাথলুলের আইফোন নিয়ে প্রায় ছয় মাস গবেষণা করেন। এই সময় তারা আইফোনে একটি স্পাইওয়্যার দেখতে পান, যা ‘জিরো ক্লিক’ নামে পরিচিত। এমন নামকরণের কারণ, এই স্পাইওয়্যার দিয়ে ফোন হ্যাক করতে ব্যবহারকারীকে কোনো লিংক পাঠাতে হয় না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সিটিজেন ল্যাবের গবেষকরা নিশ্চিত হন যে, স্পাইওয়্যারটি ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি।

বিল মার্সজাক-সহ (ছবি) সিটিজেন ল্যাবের গবেষকরা দেখতে পান, অদৃশ্য টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে আল-হাথলুলের আইফোনে ইমেজ ফাইল পাঠিয়ে স্পাইওয়্যার ঢোকানো হয়েছিল। এই ফাইলগুলো আইফোনের সিস্টেমকে বোকা বানিয়ে ফোনের পুরো মেমোরিতে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু তথ্য চুরির পর একটি ইমেজ ফাইল আল-হাথলুলের আইফোনে থেকে যায়। আর সেটাই হচ্ছে প্রমাণ।

আল-হাথলুলের আইফোন থেকে পাওয়া এই তথ্যপ্রমাণ অ্যাপলকে দিয়েছিল সিটিজেন ল্যাব। অ্যাপল তখন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ব্যবহারকারীদের বার্তা দিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে উগান্ডায় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত অন্তত নয়জন কর্মকর্তাও আছেন। এছাড়া এনএসওর বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করে অ্যাপল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত নভেম্বরে এনএসওকে কালো তালিকাভুক্ত করে। ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলো এনএসওর সফটওয়্যার বিক্রি করতে পারবে না। তাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানাতে গিয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, অ্যাক্টিভিস্ট, একাডেমিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের’ উপর নজরদারি করতে এনএসওর স্পাইওয়্যার ব্যবহৃত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ফোন হ্যাক করার সফটওয়্যার কিনেছে। কারণ এর মাধ্যমে অনলাইনে এমন সব নজরদারি করা যাচ্ছে, যা আগে শুধু এলিট কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে সম্ভব ছিল। ফলে স্পাইওয়্যার তৈরির কোম্পানিগুলো রমরমা ব্যবসা করছে। তবে গত কয়েক বছরে সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে এসব কোম্পানির সংশ্লিষ্টতার বিভিন্ন প্রমাণ সামনে নিয়ে এসেছেন।

সরকারি কর্মকর্তা ও ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর নজরদারির অভিযোগ প্রসঙ্গে এনএসওর এক মুখপাত্র বলেন, তারা হ্যাকিং টুল বিক্রি করেন, ব্যবহার করেন না-‘সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা এই কাজ করে’৷

এনএসও দাবি করছে, তাদের টুল নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করে এবং ‘হাজার হাজার প্রাণ বাঁচিয়েছে’৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles