5.1 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

মায়ের চেয়ে বড়ো পৃথিবী কি তার আর আছে?

মায়ের চেয়ে বড়ো পৃথিবী কি তার আর আছে?
গণেশ ঠাকুর নিয়ে আমার বেশ দুর্বলতা আছে

গণেশ ঠাকুরকে নিয়ে গতবছর পোস্ট করা একটি লেখা আবার দিলাম।

এই বিশেষ দিনে সবাইকে বিশেষভাবে শুভকামনা জানাই।

- Advertisement -

গণেশ ঠাকুর নিয়ে আমার বেশ দুর্বলতা আছে। প্রথম কারণ তিনি লেখক। পেশায় আমার অগ্রগ। মহাভারত গ্রন্থটির সহ-লেখক হিসেবে তার সুখ্যাতি আছে। সেই জন্যেই মহাভারত নিয়ে মূল্যায়নধর্মী একটি গ্রন্থ আমাকেও লিখতে হয়েছিল। লেখাতে তার ক্ষীপ্রতার কারণেই তিনি কিন্তু ব্যাসদেবের মতো ঋষিকেও বলতে দ্বিধা করেননি যে লেখার সময় তিনি বসে থাকতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে ব্যাসদেব রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু শর্ত দিয়েছিলেন, না বুঝে গণেশ কিছু লিখতে পারবেন না । দুই লেখকের এই বুদ্ধির কারণেই মহাভারতে জটিল শ্লোকের সমারোহ। যেগুলোকে আমরা ব্যাসকূট বলে থাকি।

বুদ্ধির কথা যদি ধরি। দুই ভাই একদিন ভাতঘুমের সময় বেশি বাঁদরামী করায় মা ভগবতী তাকে এবং ছোটোভাই কার্তিককে বললেন, সারা পৃথিবী ভ্রমণ করে আসতে। কার্তিক অহংকারী। বড়োভাইকে পরাজিত করে মার কাছ থেকে পুরস্কার নেবে এই উৎসাহে বেড়িয়ে পড়েছে। গণেশ তো মায়ের চারপাশে এক চক্কর দিয়েই কোলে গিয়ে বসেছে। মা কারণ জিজ্ঞেস করলে, গণেশের সোজা উত্তর, মায়ের চেয়ে বড়ো পৃথিবী কি তার আর আছে?

দায়িত্বপালনেও গণেশের তুল্য কে? সেসময় মহাদেব বহুদিন বাড়িছাড়া। মা দুই ছেলেকে (মনে হয় মেয়েদের তখনো জন্ম হয়নি) নিয়ে বাড়িতে। স্নানে যাবার আগে দরজায় বসিয়ে গেলেন গণেশকে। যাতে কেউ ঢুকে পড়তে না পারে। আর গণেশের কপাল এমন! পড়বি পর মালির ঘাড়ে। ঠিক তখনই বাড়িতে ফিরলেন মহাদেব। দড়জা ছাড়তে বললে গণেশ দেখালেন রুদ্রমূর্তি। ব্যাস। যা হবার তাই হলো। ঘ্যাচাত! না চিনে নিজের ছেলের মাথা কেটে ফেললেন মহাদেব।

আমার কানাডীয় এক বন্ধুর কাছে গণেশ খুব প্রিয় চরিত্র। একদশক ধরে তিনি গবেষণা করছেন, স্বস্তিকা এবং অন্যান্য ধর্মীয় চিহ্নগুলো নিয়ে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, গণেশের কী ভালো? তিনি বললেন, মানুষের ইগোটা থাকে ওই মাথাতেই, ঠিক কি না? ইগোটাকে কেটে বাদ দাও, দেখবে তুমিও অনেক ভালো একজন মানুষ হয়ে উঠবে।

তেমন ভাবনা থেকেই কি বৃহত্তর ভারতবর্ষে গণেশের এতো পাকাপোক্ত অবস্থান? আমাদের বাংলাদেশ অঞ্চলে আমরা দেখেছি শুধু চারহাত, শুঁড়বিশিষ্ট গণেশ। বাহন তার ইঁদুর । পাঁচমাথা দশহাতের যে গণেশ থাকতে সেটা আমাদের কাছে একটু অস্বাভাবিক। গণেশের বাহন যে ময়ূর বা সাপ হতে পারে সেটাও আমাদের কাছে অকল্পনীয়।

টরন্টোতেই এক প্রিয়জনের বাসাতে আছে গোটা ত্রিশেক গণেশ। নির্মাণ-উপাদানে যেমন রয়েছে বৈচিত্র, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে বৈশিষ্ট্যে।

আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, আর ভাবি পুরাণের লেখকদের কল্পনাশক্তি।

ইস্টইয়র্ক, টরন্টো

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles