10.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় শিশু ফাহিমাকে হত্যা করেন বাবা

আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় শিশু ফাহিমাকে হত্যা করেন বাবা - the Bengali Times
শিশু ফাহিমা আক্তার

বাবাকে খুব ভালোবাসত পাঁচ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার। তাই বাবা যখন তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে চায়, সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে। অটোরিকশায় করে বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর পর রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নির্জন নদীতীরে। সেখানে হঠাৎ তার মুখ চেপে ধরে ছোট্ট শরীরটিতে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করেন বাবা। পরে যোগ দেন তার অপর সঙ্গীরাও। সবাই মিলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের পর শ্বাসরোধে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন স্বয়ং বাবাই। কারণ তাকে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেছিল ছোট্ট শিশুটি।

কুমিল্লার দেবিদ্বারের মর্মান্তিক এ ঘটনায় জড়িত শিশুটির বাবা আমির হোসেনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে বেরিয়ে আসে সন্তানের ভরসাস্থল বাবার হাতে মেয়ে খুনের পৈশাচিক এই কাহিনী।

- Advertisement -

এদিকে দুইবছর আগে রাজধানীর পল্টন এলাকায় পাঁচবছরের শিশু সানি হত্যায় জড়িত তার খালু চাঁন মিয়াকেও গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) গোয়েন্দা বিভাগ। প্রতিপক্ষতে ফাঁসানোর উদ্দেশে শিশুটিকে হত্যার আগে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বলাৎকার করা হয় তখন। এমনকি শ্বাসরোধে হত্যার পরও তার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন।

শিশু ফাহিমা হত্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ নভেম্বর বিকেলে দেবিদ্বারে পাঁচ বছরের শিশু ফাহিমা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ১১ নভেম্বর তার বাবা দেবিদ্বার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর আগে তিনি ৭ ও ৮ নভেম্বর বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেন। এমনকি ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন কবিরাজকেও খবর দেন। মেয়ের কানে সোনার দুল ছিল বলে তাকে ছিনতাইকারীরা হত্যা করতে পারে বলেও ধারণার কথা জানান তিনি। পরে ১৪ নভেম্বর পুলিশ দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর এলাকার কালভার্টের নিচের খাল থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। র‌্যাব মামলাটির ছায়াতদন্ত করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১১ মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন, শিশুটির বাবা আমির হোসেন, তার সহযোগী রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন, লাইলি আক্তার ও সোহেল রানা।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আমিরের সঙ্গে লাইলি আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ৫ নভেম্বর তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে ফাহিমা। ঘটনাস্থলেই সে বাবাকে জানায়, মাকে এ কথা সে বলে দেবে। বিষয়টি চাপা দিতে মেয়েকে নানাভাবে বোঝান আমির। কিন্তু তাতে সুবিধা না হওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তাকে চাপ দেন লাইলি। তার প্ররোচণায় ফাহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আমির। হত্যার পর স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে বা প্রয়োজনে হত্যা করে লাইলিকে বিয়ে করবেন বলে জানান। এরপর ৬ নভেম্বর রাতে রেজাউল ইসলাম ইমনের আসবাবপত্রের দোকানে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হয়।

তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার জন্য ধারালো ছুরি ও মরদেহ লুকানোর জন্য দুটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে তারা। পরে ৭ নভেম্বর বিকেলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে আমিরসহ অন্যরা শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সোহেল রানার অটোরিকশায় ওঠে তারা বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করেন। শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর তীরের নির্জন স্থানে যান। সেখানে লাইলির উপস্থিতিতে আমির তার মেয়ের মুখ চেপে ধরেন এবং নিজেই প্রথমে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এরপর রবিউল শিশুটির পায়ে, রেজাউল পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে, সোহেল শরীরের পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে সহযোগীরা শিশুটির হাত-পা চেপে ধরে রাখেন এবং আমির শ্বাসরোধে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হঠাৎ ঘটনাস্থলের আশপাশে লোকজনের চলাচলের আওয়াজ পেয়ে তারা মরদেহটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রওনা দেন। পথে সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে তারা মরদেহটি রেজাউলের গরুর ঘরে একটি ড্রামের ভেতরে লুকিয়ে রাখেন। এরপর ৯ নভেম্বর রাতে সোহেলের অটোরিকশায় করে বস্তাবন্দি মরদেহ নিয়ে কাচিসাইর এলাকার কালভার্টের নিচে ফেলে আসেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles