7.7 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

৫ বছর ধরে ময়লার ভাগাড়ে বৃদ্ধা, ছেলের ঘরে তুলে দিলেন ইউএনও

৫ বছর ধরে ময়লার ভাগাড়ে বৃদ্ধা, ছেলের ঘরে তুলে দিলেন ইউএনও - the Bengali Times
ময়লার ভাগাড়ে বসবাসকারী বৃদ্ধা

তিন ছেলে মোটামুটি সচ্ছল হলেও নিজেদের ঘরে জায়গা দেননি বৃদ্ধা মা ছায়রনকে (৭০)। রেখেছিলেন, গোবর-মূত্র-ময়লা রাখার ভাগাড়ে। সেখানেই ছায়রনের কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর।

অমানবিক এ ঘটনা জানতে পেরে যশোরের চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী কাফী বিন কবির ওই বৃদ্ধা মাকে তার সন্তানদের ঘরে উঠিয়ে দিয়ে এসেছেন। ঘটনাটি যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামের।

- Advertisement -

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ৩০-৩৫ বছর আগে স্বামী হারান ছায়রন। তারপর অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মানুষ করেন চার ছেলে দুই মেয়েকে। চার ছেলের মধ্যে তিন জন জীবিত। সবারই আছে ইটের (আধাপাকা) ঘর। ছেলে আনিছুর ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করছেন।

বয়সের ভারে এখন ছায়রন আর কাজ করতে পারেন না। সে কারণে বছর পাঁচেক আগে তাকে বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ের গোবরের সারগর্তের মধ্যে একটি ঝুপড়িতে রাখে সন্তানরা। ওই বৃদ্ধার নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে দু-তিনটি টিন কিনে বাঁশের খুঁটির ওপর বসিয়ে ঝুপড়ি করে দেন ছেলেরা।

বৃহস্পতিবার (২৫৮ নভেম্বর) দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবির এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ দুটি কম্বল, চাল, ডাল আলুসহ খাবার নিয়ে হাজির হন সেখানে। ব্যক্তিগতভাবে এক হাজার টাকা নগদ দেন বৃদ্ধাকে। তিনি সেখানে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। শেষে বড় ছেলের পাকা ঘরের বারান্দায় তুলে দেন।

৫ বছর ধরে ময়লার ভাগাড়ে বৃদ্ধা, ছেলের ঘরে তুলে দিলেন ইউএনও - the Bengali Times
ছেলেদের ঘরে তুলে দেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও

কাফী বিন কবির বলেন, ‘কতটা অমানবিক হলে মাকে দিনের পর দিন এমন নোংরা স্থানে রাখতে পারে সন্তানরা। বিষয়টি খুবই পীড়াদায়ক। আমি তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলতে পারিনি। তবে, স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিনুর রহমানকে বলেছি- তিন দিনের মধ্যে তার সন্তানরা যেন আমার সঙ্গে দেখা করে। তারা যদি না আসে, তবে পুলিশ দিয়ে তাদের ধরে আনা হবে। আলোচনার ভিত্তিতে তাদের হেফাজতে মাকে রাখার ব্যবস্থা করবো।’

তিনি বৃদ্ধাকে প্রতিশ্রুতি দেন, ‘তাকে আর না খেয়ে এভাবে ঝুপড়িতে থাকতে হবে না।’

এদিকে, ইউএনও আসার খবর পেয়েই বাড়িতে তালা দিয়ে সটকে পড়েন ছেলের বউরা। আগে থেকেই মাঠে কাজ করায় বাড়িতে ছিলেন না বৃদ্ধার ছেলেরা।

প্রকৌশলী কাফী বিন কবির ছেলেদের বিচার করার কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। ইউএনওর হাত জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন, ‘না সোনা। ওদের ধরতি হবে না। ওরা জন মাইনে খেটে খাচ্ছে, খাক। ওদের কিছু করবেন না।’

বৃদ্ধা ছায়রন জানান, আজ সকালে সাবেক ইউপি সদস্য ও স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আম্মাদুল তাকে খাবার দিয়ে যান। সেই খাবার ছাড়া দুপুর পর্যন্ত আর কিছু খাননি।

সাবেক ইউপি সদস্য আম্মাদুল ইসলাম জানান, মায়ের খাবার দেওয়া বা ঘরে রাখার মতো সক্ষমতা ছেলেদের আছে। এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও তারা কারও কথা শোনে না।

তিনি ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন, ছেলে ও ছেলের বউরা তাকে বাড়িতেই যেতে দেয় না। মাঝেমাঝে খাবার দিয়ে যায়। বিষয়টি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জানলেও কোনও প্রতিকার পাননি।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles