10.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

মুম্বাইয়ে দেহ ব্যবসা থেকে নিজেকে যেভাবে রক্ষা করলেন বাংলাদেশি কিশোরী

মুম্বাইয়ে দেহ ব্যবসা থেকে নিজেকে যেভাবে রক্ষা করলেন বাংলাদেশি কিশোরী
<br >প্রতীকী ছবি

ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে আসা হয় এক কিশোরী, তার মা এবং চাচিকে। কিন্তু মুম্বাইতে আসার পরই ওই কিশোরীর মা এবং চাচিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানকার পতিতালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকি খদ্দেরের চাহিদা মতো ওই কিশোরীকেও বিভিন্ন হোটেলে দেহ ব্যবসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এই ঘটনা কোনভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না ওই কিশোরী। ঘটনার প্রতিবাদও করেছিল সে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল অভিযুক্ত মুম্বাইয়ের এক ব্যক্তি।

হুমকি দেওয়া হয়েছিল ওই কিশোরীর দেহ ব্যবসার গোপন ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার। এমনকি তার মা ও চাচিকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। আর এরপরই নিজেকে এবং মা ও চাচিকে পাচারকারী চক্রের হাত থেকে বাঁচাতে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির ৪ বছরের পুত্র সন্তানকে অপহরণ করে ওই কিশোরী।

- Advertisement -

এদিকে ছেলে অপহৃত হওয়ার পরেই মুম্বাইয়ের মানপাডা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি। তদন্তে নামে পুলিশ, আটক করা হয় ওই বাংলাদেশি নাবালিকাকে। আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই নারী পাচার চক্রের ঘটনা সামনে আসে। যা দেখে পুলিশ কর্মীরাও হতবাক। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত মুম্বাইয়ের ওই ব্যক্তিকেও।
মানপাডা পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের বাগেরহাটের বাসিন্দা ওই কিশোরী মায়ের সাথেই থাকত। স্থানীয় কৃষি জমিতে চাষাবাদের কাজ করত সে। তিন মাস আগে সেখানে স্থানীয় এক নারীর সাথে পরিচয় হয় তাদের। ওই নারীই তাদের জানায় তার দেবর (রাজ) মুম্বাইয়ের ডোমবিভলি(পূর্ব)-এর কোনি এলাকায় বসবাস করেন। সেখানকার কিছু পোশাক কারখানায় কাজের জন্য লোক নেয়া হবে। কেউ যদি কাজে আগ্রহী হয় তাহলে তারা মুম্বাইতে যেতে পারে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই ওই কিশোরী, তার মা এবং চাচিকে অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে আসা হয়। পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে তারা ট্রেনে মুম্বাইয়ের কল্যাণে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর তাদেরকে সেখান থেকে নিজের ডোমবিভলি(পূর্ব)-এর কোনি এলাকার বাসায় এনে তোলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজ।

এরপরই বাংলাদেশি কিশোরীর মা এবং চাচিকে দেহ ব্যবসার কাজে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয় রাজ। অন্যদিকে ওই কিশোরীকে কখনো সম্ভাজি নগর বা অন্য জেলায় খদ্দেরদের চাহিদা মত বিভিন্ন হোটেলে দুই-তিন দিনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো। পাশাপাশি তার উপরে শারীরিক অত্যাচার ও ধর্ষণ করা হতো বলে অভিযোগ। আর তার প্রতিবাদ করাতেই ওই কিশোরীর গোপন ভিডিও প্রকাশ্যে আনা ও তার মা এবং চাচিকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। একসময় নিজের মা এবং চাচিকে দেখার জন্য রাজের কাছে কাকুতি মিনতি করে ওই কিশোরী। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। আর এরপরেই চরম সিদ্ধান্ত নেয় সে।

শুক্রবার ভোর ৪ টার দিকে রাজের পরিবার যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন তার ৪ বছরের ছোট্ট ছেলে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। এরপর মোবাইল ফোনে গ্রামের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে ওই কিশোরী। তারাই পরামর্শ দেয় যে মুম্বাইয়ের ভিবান্ডি এলাকার এক ব্যক্তির কাছে যেতে। এরপর রিক্সা নিয়ে ভিবান্ডিতে পৌঁছায় সে।

এদিকে স্থানীয় মানপাডা থানায় শিশু অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ২৭ বছর বয়সী রাজ। অভিযোগ পেয়ে তখন হন্য হয়ে ওই অপহরণকারীকে খুঁজতে থাকে পুলিশ। অবশেষে ভিবান্ডি বাসস্টপে অভিযুক্ত অপহরণকারী এবং ৪ বছরের ওই শিশু সন্তানের সন্ধান পায় ভিবান্ডি ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ।

কিন্তু ওই কিশোরী হিন্দি বলতে না পারা ও বুঝতে না পারার কারনে প্রথমদিকে তার সাথে কমিউনিকেশনের অসুবিধা হয়। পরে অবশ্য এক ভাষা অনুবাদকারীর সহায়তা নিয়ে আসল ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়। জানা যায় অভিযুক্ত রাজ নারী পাচারের সাথে যুক্ত এবং ওই তিন বাংলাদেশিকে জোর করে দেহ ব্যবসার কাজে পাঠিয়েছিল অভিযুক্ত এই ব্যক্তি। আর এই পাচার চক্রের হাত থেকে নিজেকে এবং মা ও চাচিকে বাঁচাতে ৪ বছরের ওই ছোট্ট শিশু সন্তানকে অপরণ করতে বাধ্য হয়েছিল ভুক্তভোগী ওই কিশোরী। পুলিশের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকারও করেছে সে।

পরবর্তী তদন্তের স্বার্থে ওই কিশোরীকে তুলে দেওয়া হয় মানপাডা পুলিশ থানার কাছে। মানপাদা থানার সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ভিটি কাডবানে জানান, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি ওই কিশোরী বাংলাদেশের নাগরিক। সে রাজের পুত্র সন্তানের দেখাশোনা করতো। আমরা সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখছি এবং এর সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে।’ পরে অবশ্য ওই কিশোরীকে একটি জুভেনাইল হোমে পাঠানো হয়।

এদিকে মানপাডা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত রাজের বিরুদ্ধে মানব পাচার এবং ‘প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস’ (পকসো) আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles