সাভারের আশুলিয়ায় বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় ইতিহাস পরিবহনের চালক ও কন্ডাক্টরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (০৮ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পুরাতন ইপিজেডের সামনে বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন এক যাত্রী ও তার সহযোগীরা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
ঘটনার ব্যাপারে যা বললেন ইতিহাস পরিবহনের ম্যানেজার-
ইতিহাস পরিবহনের ম্যানেজার মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, ঈদের সময় চালক ও সুপারভাইজার ঈদ বোনাসের কথা বলে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া চায়। এ নিয়ে এক যাত্রীর সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ওই যাত্রী বাসের চালক ও কন্ডাক্টরকে হুমকি দিয়ে কাউকে ফোন দেন। ইতিহাস পরিবহনের ওই বাসটি আশুলিয়া থানা রোডের সামনে পৌঁছালে ১০ জন লোক গাড়িতে ওঠেন।
এরপর তারা চালককে গাড়ি থামাতে বললে তারা গাড়ি না থামিয়ে সোজা যেতে থাকে। এ সময় পুলিশও চালককে বলে যেহেতু ঝামেলা হচ্ছে তোমরা গাড়ি টেনে চলে যাও। চালক নতুন ইপিজেড পার হয়ে পুরাতন ইপিজেডের সামনে যেতে সিগন্যাল পড়ে। তখন গাড়ি থেমে যায়। গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে চালক ও কন্ডাক্টরকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামানো হয়। এরপর ২০ থেকে ২৫ জন মিলে তাদের মেরেছেন। একটা স্টাফ কোনোমতে ছুটে দৌড় দিয়েছিল। কিন্তু ১০-২০ হাতও দৌড়ে যেতে পারে নাই। তাকে ধাওয়া করে ধরে আবারও মারধর করা হয়। একজনকে মারে গাড়ির গেট থেকে নামিয়েই। আরেকজনকে মারে পিছনে ধাওয়া করে ২০ থেকে ২০ হাত দূরে।
সিগন্যাল ছেড়ে দিলে লোকজন গিয়ে এ অবস্থা দেখেন। এরপর আহত অবস্থায় ওই দুই স্টাফকে ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাইওয়ে থানার লোকজন সড়ক থেকে গাড়িটি সরিয়ে নেয়। পরে সন্ধ্যায় ওই দুইজনেরই মৃত্যু হয়।
যা বলেছে পুলিশ-
মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা ইতিহাস পরিবহন বাসটির চালক ও কন্ডাক্টর ঈদ উপলক্ষ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া চান। প্রায় সব যাত্রীরাই বেশি ভাড়া দিয়ে দেন। তবে একজন যাত্রী বেশি ভাড়া দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে চালক- কন্ডাক্টরের সঙ্গে ওই যাত্রীর বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ওই যাত্রী ফোন করে তার সহযোগীদের খবর দেন। তার সহযোগীরা গাড়িতে উঠে চালক ও কন্ডাক্টরকে বেধড়ক মারধর করে। এরপর গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- ইতিহাস গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার ফোরকান হোসেনের ছেলে ও ইতিহাস পরিবহনের চালক সোহেল রানা বাবু (২৬) ও ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে হৃদয় (৩০)। তারা রাজধানীর মিরপুরে থাকতেন এবং ইতিহাস পরিবহনে চালক ও কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতেন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত চলছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সূত্র : বাংলানিউজ