মেয়ের হাত-পা বাঁধা ছবি পাঠানো হয় বাবার কাছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে ৩০ লাখ রুপি। উপায় না দেখে পুলিশের কাছে ছুটে যান বাবা। কিন্তু পুলিশ তদন্ত শুরু করলে সামনে আসে অন্য এক কাহিনি।
মেয়ে নিজেই নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশে।
বুধবার (২০ মার্চ) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশের ২১ বছর বয়সী এক তরুণীর বাবা পুলিশকে বলেছেন, তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মেয়ের মুক্তির জন্য তার কাছে ৩০ লাখ রুপি মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তিনি বলেন, তিনি তার মেয়ের হাত-পা বাঁধা ছবি পেয়েছেন। ওই বাবা জানান, তার মেয়ে রাজস্থানের কোটায় একটি কোচিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিল।
যাইহোক কোটা পুলিশ পরে জানায়, ওই মেয়ের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়নি বলে প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গেছে এবং ২১ বছরের ওই তরুণী তার অপহরণের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়েছিল।
কোটার পুলিশ সুপার অমৃতা দুহান বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত তদন্তে যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়নি এবং কোনও অপহরণের ঘটনাও ঘটেনি। এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণ থেকে অপহরণের ঘটনাটি মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে।’
দুহান আরও বলেছেন, গত ১৮ মার্চ মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতে মেয়েটির বাবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে তথ্য পেয়ে তারা দল গঠন করেছিল। তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মেয়ে তার দুই বন্ধুর সাথে ইন্দোরে বাস করত। যা মূলত তার বাবা-মা থাকতেন যেখানে থাকেন তার থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে।
তদন্তের সময় পুলিশ ওই মেয়ের বন্ধুদের একজনকে খুঁজে বের করে এবং সে পুলিশকে জানায়, ওই মেয়ে এবং তার অন্য বন্ধু বিদেশে যেতে চায়। সে আরও জানায়, তার বন্ধু ভারতে পড়াশোনা করতে পারবে না এবং বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য তার অর্থ দরকার ছিল।
এনডিটিভি বলছে, গত ৬-৭ মাস ধরে কোটায় তার অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাকে শহরের কোনো কোচিং ইনস্টিটিউট বা হোস্টেলে ভর্তিও করা হয়নি। মেয়েটির মা তাকে গত বছরের ৩ আগস্ট একটি কোচিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান এবং তিনি ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। এরপর তিনি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।
যদিও কোচিং ইনস্টিটিউটে সে পড়াশোনা করছে এটি নিজের বাবা-মাকে বিশ্বাস করানোর জন্য ওই মেয়েটি ভিন্ন নম্বর থেকে পরীক্ষায় তার পারফরম্যান্স সম্পর্কে তাদেরকে বার্তাও পাঠিয়েছিল। আর এরপর সে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে তার অপহরণের মিথ্যা ঘটনা সাজায়।
মূলত নিজের বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ওই মেয়ে তার ইন্দোরের ফ্ল্যাটে তার হাত-পা বাঁধা ছবিগুলো তোলে এবং পরে সেগুলো তার বাবার কাছে পাঠায় এবং ৩০ লাখ রুপি মুক্তিপণ দাবি করে।
কোটার পুলিশ সুপার অমৃতা দুহান বলেছেন, ‘আমি তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি এবং সাহায্যের জন্য নিকটস্থ থানায় যেতে বলেছি।’