13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

দেশে বসে ‘বিদেশি পর্নস্টার’ সেজে ডলার হাতিয়ে নিতেন তারা

দেশে বসে ‘বিদেশি পর্নস্টার’ সেজে ডলার হাতিয়ে নিতেন তারা
গ্রেপ্তার প্রতারক চক্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডেল, পর্নস্টারদের নগ্ন ছবি, ভিডিও এবং বিভিন্ন তথ্য ওয়েবসাইট থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেয় মধুপুরের স্ক্যামার (প্রতারক) চক্রটি। পরে সেসব এডাল্ট ডেটিং সাইটে আইপি গোপন করে পোস্ট করে। এখন লেখো (টেক্সট নাউ) নামের ভার্চুয়াল নম্বর সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতারকরা পর্নস্টার সেজে ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তথ্য দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।

জানা যায়, কোনো বিদেশি ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য পর্ন সার্ভিস নিতে আগ্রহী হয়ে ক্ষুদে বার্তা (মেসেজ) পাঠায়। এ সময় প্রতারকরা পর্নস্টার সেজে তাদের সঙ্গে ডলার নিয়ে দর কষাকষি করে। এক পর্যায়ে নগ্ন ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে। কিন্তু অনেক গ্রাহক ভিডিও এবং ভয়েসকলে সঠিক পর্নস্টার কিনা যাচাই করতে চায়। তখন প্রতারকরা রোবট সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রহকদের মনোরঞ্জন করে। কিন্তু গ্রাহকরা এভাবে যাচাই করেও সন্তুষ্ট না হলে চক্রটি ভাড়াটে নারীদের হাজির করে তাদের ভিডিও কলে। ওই নারীরা স্বল্প আলোতে ন্যুড হয়ে প্রলুব্ধ করে গ্রাহকদের। এরপর গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম ডলার নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

- Advertisement -

গত ৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থান থেকে এই চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার ইউনিট। গ্রেপ্তাররা হলেন- হুমায়ন কবির (২৮), সেলিম রানা (৩২), সানি আহমেদ (২৫), রুবেল আহমেদ (৩৬), রাজু আহমেদ (৩২), রাকিব খান (৩৪) ও আল-আমিন হাসান (২৩)। তাদের কাছ থেকে স্ক্যামিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছে সিআইডি।

সূত্র বলছে, ডেটিং স্ক্যাম ছাড়াও প্রতারকরা মধুপুরের বনে বসে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পত্তি কেনাবেচা থেকে শুরু করে বাড়ি ভাড়াসহ রিয়েল এস্টেট সাইটে গিয়ে ক্রেগলিস্ট অর্গানাইজেশনের আইপি হাইড করে লোভনীয় সব তথ্যে শেয়ার করে। পরে তারা অগ্রিম ডলার নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। চক্রের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ক্লাসিফাইড সাইট ‘ব্যাক পেজ ডটকম’-এর আদলে ক্লাসিফাইড ডেটিং সাইট তৈরি করে প্রতারণামূলকভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, ‘টু ব্যাক পেইজ ডটকম’, ‘ব্যাকলিস্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম’ এবং ‘স্কিপ দ্য গেইমস ডটকম’ সাইটগুলো চালায় মধুপুরের কয়েকজন প্রতারক। তারা এসব সাইট থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। টাকার নেশায় এই এলাকায় মাদক, জুয়াসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের মধুপুর ছাড়াও ঘাটাইল, গোপালপুর, ধনবাড়ী, কালিহাতী ও ভূঞাপুরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতারণার ব্যবসা।

তদন্ত সংশ্লষ্টি এক কর্মকর্তা জানায়, ওই এলাকায় সার্ভে করে দেখা গেছে- গত দেড় বছরে মধুপুরে যত বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে তার সবই স্ক্যামিং পার্টির। স্থানীয়ভাবে স্ক্যামারদের বলা হয় নেট ব্যবসায়ী। দুই বছর আগেও যারা রিকশা চালক, ইটভাটায় কাজ করতেন তারা আজ বহুতল ভবনেব বসবাস করেন। দামি গাড়িতে চড়েন। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শোরুম ও কারখানাও গড়ে তুলেছেন।

যেভাবে ডলার দেশে আনতেন তারা—

প্রতারকরা এসব ডলার গ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাশ অ্যাপ, কার্ড ও বিটকয়েনের মাধ্যমে। আসামিরা তাদের ক্যাশ অ্যাপ, ভেনমো, পে-পাল, জিল্লিসহ আরও অন্যান্য আমেরিকান মানিট্রন্সফার একাউন্ট নম্বর দিতেন। এরপর বিশেষ কায়দায় ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের অ্যাকাউন্ট খুলে ডলার বিটকয়েনে কনভার্ট করে বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তরিত করতেন। প্রতারণালব্ধ ডলার মূলত ওয়াইজ, মানিগ্রাম, পাইওনিয়ারের মাধ্যমে টাকায় রুপান্তর করে তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বর অথবা কথিত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করতেন। এ ছাড়া প্রতারকরা গ্রাহকদের সঙ্গে চ্যাট করে ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এসএসএস উইথ সেলফি সংগ্রহের পর বিশেষ কায়দায় গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড থেকে ডলার হাতিয়ে নিতেন।

সিআইডির মুখপাত্র আজাদ রহমান বলেন, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীক প্রতারক চক্রটি বিশেষ করে দেশের বাইরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি চক্রের সন্ধান পায়। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles