13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

‘দরবেশ বাবা’ সেজে সাবেক সরকারি কর্মকর্তার সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ

‘দরবেশ বাবা’ সেজে সাবেক সরকারি কর্মকর্তার সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ
প্রতীকী ছবি

ব্যক্তিগত এবং কিছু পারিবারিক সমস্যার ভুগছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম (৫৯)। কর্মজীবন থেকে অবসরের পর আনোয়ারা বেশির ভাগ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকেন। হঠাৎ একদিন ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপনে নজর পরে তার।

বিজ্ঞাপনে সুন্দর সৌম্য চেহারার দরবেশ বেশধারী এক ব্যক্তি নিজেকে মসজিদে নববির ইমাম দাবি করে বলছেন, তিনি কুরআন-হাদিসের আলোকে মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করেন। বিজ্ঞাপনে দুজন মেয়েও সাক্ষাৎকারে বলেন, তারা এই ‘দরবেশ বাবার’ কাছ থেকে নিজেদের সমস্যার সমাধান পেয়েছেন।

- Advertisement -

বিষয়টি নিয়ে আনোয়ারা বেগম বাসার গৃহপরিচারিকার সঙ্গে আলোচনা করেন। গৃহপরিচারিকা তাঁকে জানান, জিন-পরির মাধ্যমে দরবেশ বাবারা এসব সমস্যার সমাধান করেন। তাঁর গ্রামের কয়েকজনের এভাবে সমস্যার সমাধান হয়েছে। এটা শুনে বিজ্ঞাপনে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে কল করেন আনোয়ারা। অপর প্রান্তে কথিত দরবেশ খুব সুন্দর করে কথা বলে তাঁর পারিবারিক সমস্যা শুনতে চান।

‘দরবেশ বাবা’ সমস্যার কথা শুনে তাকে বলেন, ‘মা তোমার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। বাবার ওপর আস্থা রাখ। আমি তোমাকে মা বলে ডাকলাম। আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। তবে মা, কিছু খরচ লাগবে। খরচের কথা কাউকে জানানো যাবে না। যদি জানাও, তবে তোমার সমস্যার সমাধান হবে না। বরং তোমার সমস্যা আরও বাড়বে এবং তোমার ছেলে-মেয়ে ও স্বামীর ক্ষতি হবে।’

এভাবে প্রলুব্ধ করে ‘দরবেশ বাবা’ তার বিকাশ নম্বরে একটা বড় অঙ্কের টাকা পাঠাতে বলেন। এভাবে বিভিন্ন সময়ে ‘দরবেশ বাবা’ আনোয়ারা বেগমকে কল করে বিভিন্ন অজুহাত ও সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

দেরি করে হলেও ভ্রম ভাঙ্গে আনোয়ারা বেগমের। প্রতিকার চেয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে আসামিদের শনাক্ত করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি টিম।

এরপর ঢাকার উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মো. তানজিল আহমেদ ওরফে তানজিদ হাসানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তিনি জানান, চক্রের হোতা মো. হাসেম। তিনি প্রথমে মুঠোফোন নম্বরের মাধ্যমে ছোট অঙ্কের টাকা নিতেন। এরপর বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার সময় তাঁকে আনোয়ারা বেগমের কাছে পাঠাতেন। এভাবে ধাপে ধাপে তাঁরা সাত কোটি টাকা নেন।

সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ চক্রের মূল হোতা মো. হাসেম। সে প্রথমে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ছোট অঙ্কের টাকা নিত। এরপর বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার সময় তানজিদ হাসানকে আনোয়ারা বেগমের কাছে পাঠাত এবং সে একসঙ্গে ৩০-৪০ লাখ টাকা নিয়ে যেত। এভাবে ধাপে ধাপে তারা আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা নিয়েছে।

হাসেম জানিয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে সে এভাবে মানুষকে প্রতারণা করছে। প্রথমদিকে সে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিত। পরে ২০১৬ সাল থেকে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে। প্রতিমাসে সে ফেসবুকে চার লাখ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিত এবং পোস্ট বুস্ট করত। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত স্বল্পশিক্ষিত প্রবাসী বাঙালিদের টার্গেট করে সৌদি আরব, দুবাই, ওমানসহ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সে দেশভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার করত। এছাড়াও সে ইউরোপের ইতালি ও ফ্রান্সে বিজ্ঞাপনও প্রচার করত। এভাবে সে পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, ইউটিউব ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয় দিয়ে কথা বলত ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিত। দরবেশ বাবা রূপি প্রতারক হাসেম হিন্দি ও আরবি ভাষায় কথা বলাসহ বিভিন্ন রকম কণ্ঠে কথা বলতে দক্ষ।

সিআইডি আরও জানিয়েছে, প্রতারক হাসেম ফ্রান্স প্রবাসী মো. ইমাম হোসেনকে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া আরেক ইতালি প্রবাসীর কাছ থেকে লটারি ও জুয়ায় জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।

অনুসন্ধানে সিআইডি জেনেছে, মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রতারকচক্রের এমন ২০ থেকে ২৫ জন ক্লায়েন্ট আছে। মালয়েশিয়াতে আছে ১০ থেকে ১২ জন। এর মধ্যে ৫ থেকে ৬ জন ফিক্সড ক্লায়েন্ট আছেন যারা গত ৪-৫ বছর ধরে নিয়মিত এই দরবেশ রূপি প্রতারককে টাকা দিয়ে আসছেন।

গ্রেফতার এ দুই প্রতারকের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles