11.3 C
Toronto
সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

বিষণ্নতা থেকে হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী রোগ

বিষণ্নতা থেকে হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী রোগ
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে বিষণ্নতার রোগী

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে বিষণ্নতার রোগী। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষা ‘ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভে’তে দেখা গেছে যে পুরুষরা ৭ শতাংশ, নারীরা ৬.৫ শতাংশ, শহরে ৮.২ শতাংশ, গ্রামে ৬.৩ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে একটা গভীর যোগসূত্র আছে। দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবসাদ বাড়াতে পারে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
বিষণ্নতা থেকে যেসব ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের শুরু হতে পারে।

হৃদরোগ

- Advertisement -

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০-৭৯ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে যাঁরা মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের ডিপ্রেশনে বা বিষণ্নতায় অন্তত প্রায় ১০ বছর ভুগেছেন, তাঁদের মধ্যে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। যাঁরা ২০-৩৯ বছর বয়সের তাঁদের মধ্যেও এই ঝুঁকির হার কিন্তু কম নয়। ডিপ্রেশনের সঙ্গে যদি স্ট্রেস বা উদ্বিগ্নতা থাকে, তবে তাঁদের ব্লাড প্রেসার অনেক বেশি থাকে।
ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। মানসিক চাপের কারণে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। এর ফলে হৃদস্পন্দনের গতিও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে রক্তনালিও শক্ত হয়ে যায়।
এর ফলে কিন্তু এক পর্যায়ে হার্ট অ্যাটাক হয়।

ডায়াবেটিস

বিষণ্নতার রোগীদের খাদ্যাভ্যাসের অনেক তারতম্য ঘটে। কেউ কেউ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ করে, আবার অনেকে অতিরিক্ত কম খাদ্য গ্রহণ করে। যারা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ করে তাদের ওজন বেড়ে যায়। এভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের দিকে মোড় নেয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জটিলতা সবারই জানা। তার মধ্যে কিডনির সমস্যা অন্যতম।

ঘুমের সমস্যা

বিষণ্নতায় ঘুমের ওপর প্রচণ্ড রকমের প্রভাব পড়ে। কারো অনিদ্রার সমস্যা দেখা যায়, কারো আবার অতিমাত্রায় ঘুম দেখা যায়। ২০১৭ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন যাঁরা অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি। শুধু তা-ই নয়, ক্ষণস্থায়ীভাবে গুরুতর মানসিক রোগের লক্ষণও দেখা যায়, যেমন হ্যালুসিনেশন। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ডিপ্রেশনের রোগীরা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। অনিদ্রার জন্য অন্য উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো হলো—খিটখিটে মেজাজ, সিদ্ধান্তহীনতা, মনোযোগে সমস্যা, খাদ্য গ্রহণে অরুচি, ক্ষুধামান্দ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

মাদকাসক্ত

বিষণ্নতা থেকে সাময়িক মুক্তির পথ হিসেবে অনেকেই বেছে নেয় ‘মাদক’। পর্যায়ক্রমে মাদকের ভয়াবহ কবলে পড়ে দুর্বিষহ জীবন ও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। যেমন—অতিরিক্ত মদপানে ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এভাবে বিভিন্ন মাদকের জন্য বিভিন্ন রকমের জটিলতার শিকার হতে হয়।

ব্যথা

বিষণ্নতার রোগীদের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হয়। এর কারণ হলো এই রোগে সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার কমে যায়। এর ফলে অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। আবার শরীরে ইনফ্লামেশনও বেড়ে যায়। ফলে ব্যথা আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে। মাথা ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস খুব কমন।

পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা

মন-মেজাজ খারাপ থাকলে অথবা বিষণ্নতায় সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের তারতম্যের জন্য পরিপাকতন্ত্রেও প্রভাব পড়ে। ফলে হজমে সমস্যা হয়, পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামান্দ্য, অরুচি এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) ইত্যাদি দেখা যায়।

অপুষ্টিজনিত সমস্যা

বিষণ্নতায় খাদ্যাভ্যাসের তারতম্য বেশ লক্ষণীয়। কারো খাওয়াদাওয়া বেড়ে যায়, আবার কারো যায় কমে। কমে যাওয়ার ফলে ওজনও হ্রাস পায়, অপুষ্টি দেখা যায়। অপুষ্টির কারণে নানাবিধ রোগ দেখা যায়। ভিটামিন ডি, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-১২, রক্তের হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব

এই প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। সর্দি-কাশি ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা প্রায় বছরজুড়ে লেগেই থাকে। আবার পূর্বের কোনো রোগ থাকলে তা আরো বেড়ে যায়।

মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব

নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা, হীনম্মন্যতায় ভোগা, মাথা ব্যথা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া ইত্যাদি বেশ উল্লেখযোগ্য।

আরো কিছু সমস্যা

দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতার বিভিন্ন পর্যায়ে চলে যায়। যেমন—ডিসথাইমিয়া, ডাবল ডিপ্রেশন, ক্রনিক মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতায় সমস্যা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, সিদ্ধান্তহীনতা, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী অবসাদ, গ্লানি, ক্লান্তি, নেতিবাচক চিন্তা, অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ, অসহায়বোধ, অপরাধবোধ, নিজেকে অকেজো অথবা অপদার্থ মনে করা ইত্যাদি দেখা যায়। শুধু তা-ই নয়, বিষণ্নতার রোগী নিজেকে সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। পারিবারিক বা পেশাগত কাজ থেকেও নিজেকে সরিয়ে ফেলে। তারা গঠনমূলক কাজ আর করতে পারে না। সবচেয়ে ভয়ংকর পরিণতি হলো, এ রকম রোগী আত্মহত্যাও করতে পারে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles