মণিপুরে চলতি বছরের মে মাসে জাতিগত সহিংসতা চলার সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ আরও এক ঘটনা সামনে এলো। ত্রাণ শিবিরে থাকা এক ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে মামলা দায়েরের পর নতুন এই ঘটনা সামনে আসে।
নির্যাতনের শিকার আরও নারী পুলিশের কাছে আসছেন। তারা যে মর্মান্তিক অগ্নিপরীক্ষা এবং বর্বরতার শিকার হয়েছেন, তার বর্ণনা দিতেই তাদের আসা। কর্তৃপক্ষ তাদের মুখ খুলতে উৎসাহ দিয়েছে।
সর্বশেষ সামনে আসা ঘটনার ভুক্তভোগী ৩৭ বছর বয়সী নারী চূড়াচাঁদপুর জেলার বাসিন্দা। তার পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ি থেকে দুই সন্তান আর ননদকে নিয়ে পালানোর সময় একদল লোকের হাতে ধরা পড়েন, এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনাটি ৩ মের, যখন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
নারীরা যে ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গেছেন, সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন দেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারী পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস পান। বিষ্ণুপুর পুলিশ স্টেশনে বুধবার একটি এফআইআর দায়ের করেন তিনি।
এফআইআরের সঙ্গে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই নারী বলেন, আমি নিজের এবং আমার পরিবারের সম্মান, মর্যাদা রক্ষা এবং সামাজিক বর্বরতা থেকে বাঁচার জন্য ঘটনাটি প্রকাশ করিনি। সামাজিক কলঙ্কের কারণে এই অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব…। এমনকি আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।
অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকেদের জন্য নির্মিত ত্রাণ শিবিরে তিনি বসবাস করছেন। মামলায় ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৩৭৬ডি, ৩৫৪, ১২০বি ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এফআইআর অনুযায়ী, ৩ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই নারী এবং তার প্রতিবেশীদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তিনি, তার দুই সন্তান, ননদ ও ভাতিজিকে নিয়ে দৌড়ানো শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমি আমার ভাতিজিকে আমার পিঠে বয়ে নিয়ে আমার দুই ছেলেকেও জড়িয়ে ধরে আমার ননদসহ ঘটনাস্থল থেকে দৌড়াতে লাগলাম। সেও তার পিঠে একটা বাচ্চা নিয়ে আমার সামনে দৌড়াচ্ছিল। তারপর আমি হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেলাম এবং উঠতে পারলাম না… আমার ননদ আমার দিকে ছুটে এলেন এবং আমার ভাইজিকে পেছন থেকে তুলে আমার দুই ছেলেকে নিয়ে দৌড়াতে লাগলেন।
তিনি আরও বলেন, যখন আমি উঠে দাঁড়ালাম, পাঁচ থেকে ছয় দুর্বৃত্ত আমাকে ধরে ফেলল। তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করতে থাকল। আমার প্রতিরোধ সত্ত্বেও, আমাকে জোর করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এর পর পুরুষরা আমাকে যৌন নিপীড়ন করতে থাকে…।
ওই নারী জানান, যে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সম্পূর্ণ অবনতি হয়েছিল এবং এমনকি তিনি আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন। তিনি বলেন, তিনি রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে গিয়েছিলেন, কিন্তু ডাক্তার না দেখিয়েই তিনি ফিরে এসেছিলেন।
মণিপুর পুলিশ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে যে, ৩ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত তিন মাসের সহিংসতায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মামলা দায়ের হয়েছে।