রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। প্রথমে এ আন্দোলনের মুখপাত্র শামীম হোসেন রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কয়েক শ শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রবি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সামনে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্র-শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহজাদপুর পৌর শহরের বিসিক বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় কয়েক শ ব্যক্তি ও পুলিশ সদস্যদের সামনে আবিদ নামে এক ছাত্র হাতের রগ কেটে আত্মাহুতির চেষ্টা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমিনুর রহমানের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে স্থানীয় পিপিডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসব ঘটনায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অবরোধ চলাকালে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের দুপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠাতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা নাকচ করে দেন। কিছুক্ষণ পর পৌনে ১টার দিকে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়মন আহমেদ শাহীন কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। তারা শিক্ষার্থীদের জামায়াত-বিএনপি আখ্যা দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের ২ নভেম্বরের উপনির্বাচন বানচালের চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। তারা শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
পরে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে ওই নেতা দলবল নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে রবির একাডেমিক ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর তারা একাডেমিক ভবনের প্রধান গেটে তালা দিয়ে রবির রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র আবু জাফর বলেন, রবি প্রশাসন আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চায় না। তারা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে রক্ষায় নানা অজুহাতে লুকোচুরি খেলছে। শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হলেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাব। পরীক্ষায়ও অংশ নেব। অথচ রবি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শুক্রবার সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করে আমাদের অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আমাদের অনেকে হাত কেটে ও বিষ পানে আত্মাহুতির চেষ্টা করেছে।
তিনি মহাসড়ক অবরোধকালে ছাত্রলীগ নেতা শাহীনের অতর্কিতে চড়াও হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মারুফ হোসেন সুনাম বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চড়াও হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা দলের কোনো সিদ্ধান্ত না। শাহীন ব্যক্তিগতভাবে এ কাজ করে থাকতে পারে। অচিরেই দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে মহাসড়ক অবরোধ শেষে আমাদের একাডেমিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমরা বাইরে বের হতে পারছি না। ফলে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারছি না।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন পরীক্ষা হলে প্রবেশের সময় ওই বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন।
এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও আমরণ অনশন শুরু করেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১৬তম সভায় শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় ও ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা অনশন ও আন্দোলন স্থগিত করেন। কিন্তু শুক্রবারের সিন্ডিকেট সভায় এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা মুলতবি হয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলন শুরু করেন। শনিবার তারা আত্মাহুতির চেষ্টা, মহাসড়ক অবরোধ ও রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করেন।