14.3 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

আমাদের স্বাধীনতা দিবস

আমাদের স্বাধীনতা দিবস
পরিচিতজনদে সাথে দেখা হলো অনেকদিন পর শীতের সকাল তবু তাঁরা এসেছেন হৃদয়ের টানে আরো এসেছে ক্যালগারি সিটির মেয়র থেকে শুরু করে প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচিত কয়েকজন প্রতিনিধি

২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। সেদিন সকাল শুরু করেছিলাম ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে সিটি হলে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। অনেকদিন থেকেই এই আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি। চেষ্টা করি প্রতিবার যাওয়ার। হয় না। এবার ২৬শে মার্চ পড়েছিল রবিবার। ছুটির দিন। সপরিবারে হাজির হলাম। পরিচিতজনদে সাথে দেখা হলো অনেকদিন পর। শীতের সকাল। তবু তাঁরা এসেছেন হৃদয়ের টানে।

আরো এসেছে ক্যালগারি সিটির মেয়র থেকে শুরু করে প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচিত কয়েকজন প্রতিনিধি। আমাদের উদযাপনে অন্যদের অংশগ্রহন ভালোই লাগে। একটাই সমস্যা, এদের খাতিরে তখন বাংলাভাষাটা বাদ পড়ে যায়। বাংলা ছাড়া বাংলাদেশের অনুষ্ঠান আমার ভালো লাগে না। তারপর থেকে খারাপ লাগাটা প্রলম্বিত হতে থাকে, আমার আশংকাকে সত্য প্রমান করে অনুষ্ঠানের আয়োজকগণ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এমন এক বর্ণনা হাজির করে যা আমার পছন্দের ছিল না কোনদিনই। পচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের একজন আমি, জানি কীভাবে মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের বারোটা বাজানো হয়েছিল। হানাদার শব্দের আড়ালে পাকিস্তানের নামটা বাদ, সেটা চলেছিল দুই দশক। এখন অন্তত বলা হয় যে, যুদ্ধটা হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তো প্রতিবার আশা করি যে, দু-একজন মুক্তিযোদ্ধা এখনও জীবিত তাঁরা অন্তত এই দিনে এবং ষোলই ডিসেম্বরে গলায় যতটা তেজ আনা যায়, এনে বলবেন– জয়বাংলা।

- Advertisement -

না হয় না। মনে হয় শরম পায়, অথবা অভ্যাস। দুই দশক তো কম না। কয়েকদিন আগে টিভিতে সেনাবাহিনীর একটা কুচকাওয়াজে দেখলাম জোয়ানরা গলা ফাটিয়ে বলছে, জয়বাংলা। প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি, এও কি সম্ভব! আমার প্রথম উপন্যাসে গল্পের ছলে বলেছিলাম, যে সেনাবাহিনী জয়বাংলা বলে দেশ স্বাধীন করলো, তারা আর সেটা বলে না। কোনদিন পারবে বলেও মনে হয় না। এখন তো দেখছি আমার ধারনা ভুল ছিল। সেনাবাহিনী জয়বাংলা বলছে।

বিকালে অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ সেন্টারে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান। পাঁচজন বক্তার আমি একজন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মন ভরে গেল। উপস্থাপক খুব চমৎকারভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করলেন, এবং যা কোনদিন হয়নি, বঙ্গবন্ধু — তাঁর নাম উচ্চারিত হলো। আমি বরবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই আমার কথা শুরু করি। অ্যাসোসিয়েশন এতদিনধরে কোন খেয়ালে এই মানুষটির নাম উচ্চারণ করতো না, আমার জানা নাই। সেদিন আরো অন্যান্য বক্তাদের কথাতেও ঘুরেফিরে বঙ্গবন্ধু উচ্চারিত হচ্ছিল। আমার হৃদয় আনন্দে ভরে যাচ্ছিল। এবং ভালো লাগছিল এটা দেখে যে, কেউ কেউ গলায় তেজ এনে জয়বাংলা উচ্চারণ করছিলেন। আমি বরাবর বলে আসছি, জয়বাংলা সেই স্লোগান যার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিতে কার্পন্য করেনি আমার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা। এটা ঠিক যে, যুদ্ধের ময়দানে রাজনৈতিক কারণে অনেকে জয়বাংলা বলতেন না। তাদের সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশেরও নিচে। পচাত্তরের পর এটা টিকে থাকলো আওয়ামী লীগের হাত ধরে। আর আমরা শুনতে পেতাম, জয়বাংলা আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান। তাই কী? আমরা ভুলেই গেলাম সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, যাদের ধরে পাকিস্তান মিলিটারি বলছে, আর জয়বাংলা বলবি? তো মৃতু্যভয় দূর করে আমাদের সেই বীরগণ গলা ফাটিয়ে উচ্চারণ করছেন, জয়বাংলা।

ক্যালগেরি, আলবার্টা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles