1.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

ফুড ব্যাসিকে

ফুড ব্যাসিকে
ফাইল ছবি

রাস্তায় হাঁটার সময় খেয়াল করবেন, অনেকসময়, কোনো এক আগুন্তুক আপনার সাথে একই স্পিডে সমান তালে হাঁটছে। আপনি তাকে ওভারটেক করে এগিয়ে যেতে পারবেন না। আবার আপনি রাস্তা পার হলে একই সময়ে সেও পার হবে। কেমন যেন একটা অস্বস্তি; মনে হবে আপনাকে ফলো করছে; আসলে তা নয়। এদেশে বাজারে ঢুকেও একই কেইস হয়; আমি যেই আইলে যাই, দেখা যাবে আরেকজনও একই আইলে যাচ্ছে, একই জিনিস খুঁজছে ..। এভোইড করে অন্য দিকে ছুটলে সেও আরেকদিকে ছুটলেও কাকতালীয়ভাবে আবার দুজন একই জায়গায় এসে একই প্রোডাক্টে হাত বাড়াচ্ছি।
এরকম হয়..
.
আজ ‘ফুড ব্যাসিকস’ দোকানে দেখলাম আমার সাথে এক বাঙালিও বাজার করছে। আমরা মোটামুটি একই জিনিস কিনছি। তাকে এভোইড করে অন্যদিকে চলে আসলাম। সে আড় চোখে বারবার তাকিয়ে দেখছিল আমার ঝুড়িতে কী কী নিয়েছি। একজন বাঙালি আরেকজন বাঙালিকে ঠিকই চেনে। আমিও কৌতূহলবসত দেখে নিলাম- এক গাদা কাঁচা মরিচ, বেগুন, পম্পানো মাছ, টুনা মাছের টিন, সর্ষে তেল, দুধ, বিরাট চালের বস্তা..
.
আজ খুব কাজের জিনিস নিলাম।
ফ্লায়ারে ঘেঁটে ছুটলাম টিনজাত টমেটোর কাছে, বেশি লেট করলে পাওয়া যায় না। সাতশো ছিয়ানব্বই মিলিলিটার এর দুটা টিনের রেগুলার দাম আড়াই ডলার করে হলেও আজকে দিচ্ছে এক ডলার পঁচিশ সেন্টস করে। স্বাদে ভাল, ব্যাবহার করা সহজ, দামে সস্তা। আবার মানও ভাল। গিন্নী মিটবল, পাস্তা বানায়। মুরগী বা লাজানিয়াতেও দেয়।
.
বেগুনের কাছে গিয়ে দেখি রেগুলার দাম লিখা। একজন মহিলা কর্মীকে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, এটার দাম চেক করো তো?
– তুমি এই ছেলেকে বল, জিজ্ঞেস করার জন্য ও বেস্ট পার্সন- বলে পাশের ছেলেটাকে দেখালো।
.
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, হ্যালো মিস্টার বেস্ট পার্সন!
– হ্যালো! [বত্রিশ পাটি বের করে হাসলো]
– এ বেগুনের দাম কত বলতে পারবা?
– এই যে, আড়াই ডলার লেখা!
– কিন্তু ফ্লায়ারে দেখলাম এক ডলার তিরিশ সেন্টস?
– তাহলে তুমি ফ্লায়ারটা ক্যাশে দেখালেই হবে।
এরা অনেকসময় দাম চেঞ্জ করার সময় পায় না। বেগুনগুলোর অবস্থা যদিও খুব একটা সুবিধার না। বেছে বেছে তিনটা বড় সাইজের নিলাম। কেজি দেড়েক হবে।
.
দেশের কথা মনে পড়ে গেলো।
এবার দেশে গিয়ে পনেরো-বিশ টাকা কেজি দরে বেগুন কিনেছি। ফুলকপি দশ টাকা! সেদিন দেখলাম হিরো আলম নির্বাচনী প্রচারণার সময় ছাপড়া রেস্টুরেন্টে বসে ইয়া মোটা ঢাউশ বেগুন চাকা ভাজা আর আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। বেগুন মোটা করে ভাজলে স্বাদ মিষ্টি মিষ্টি লাগার কথা। ডাল দিয়ে কি মজা করে যে খাচ্ছিল ব্যাটা! আমিও এবার বেগুন মোটা করে ভাজবো..।
হিরো হিরো ভাব আসবে!
.
আজকে পিনাট বাটার নিলাম ছোট কৌটা’র। সোয়া তিন ডলার। আগে বোকার মতো বেশি ছাড় দেখে বিরাট কৌটা কিনে দুই বছরেও অর্ধেকটা শেষ করতে পারতাম না। কানাডার এই এগারো বছর লাইফে মোট ছয়বারের বেশি পিনাট বাটার কিনি নাই। হুজুগে কিনি, কয়েকদিন খাই, তারপর এক্সপায়ারি ডেট শেষ হবার পর ফেলে দেই। রাতে খিদে লাগলে অবশ্য একটা পাউরুটি মুচমুচে আগুন গরম টোস্ট করে পিনাট বাটার লেপ্টে দিলে জিনিস হয় একটা। গরমে গলে চুইয়ে নামতে থাকে মাখনের মতো..
.
আরও একটা কাজের জিনিস নিলাম- রাঞ্চ; পাতলা মেয়োনেজের মতো। জিনিসটা স্যান্ডউইচ, টোকো, সালাদ বানাতে দারুন কার্যকর। আর ১ লিটারের কেচাপ, কাঁচের জারে দুই বয়োম রসুন বাটা। ৫০০ গ্রামে আড়াই ডলার করে। মাংস রান্নায় খুব সুবিধা। দিব্য কোম্পানিটা ভালো মার্কেট পেয়েছে কানাডায়। এদের মশলা ভালো।
.
পেয়ে গেলাম ছোট শসার পিকল। তাও আবার মেইড ইন পোল্যান্ড! আস্ত আস্ত শসা লবন আর হার্বস এর মধ্যে চুবিয়ে রাখা। খুব ছাড়ে; দেড় লিটার চার ডলার। ফিশ এন্ড চিপস এর বিশেষ সস বানাতে এটার কুচি মাস্ট। আর গরুর মাংসের কালা ভুনার সাথে কচ কচ চিবাতে লাগে বেশ।
রুচি বাড়ে।
.
মসলার সেকশনে চারশো গ্রামের আস্ত জিরা নিলাম। টেলে ভেজে গুঁড়া করে মাছ মাংসের উপর ছিটালে স্বাদই চেঞ্জ হয়ে যায়। কস্মেটিক্স সেকশনে মেয়েটার জন্য পেয়ে গেলাম মহিলাদের খুশকি দূর করার হেড এন্ড শোল্ডার শ্যাম্পু। আর একটাই বাকি ছিল। একটু লেইট করলেই আর পেতাম কিনা সন্দেহ। সাত ডলারের জিনিস দিচ্ছে মাত্র সাড়ে চার ডলারে।
আমার ভাগ্যটা আজ ভালো।
.
ওদিকে আভোকাডোর দাম কমেছে; দুই ডলার অষ্টআশি সেন্টস। আমার খুব খুব প্রিয় ফল। অর্ধেক করে কেটে চামচ দিয়ে মাখনের মতো তুলে খেতে অমৃত লাগে। খুবই পুষ্টিকর। এক প্যাকেট নিলাম; ছয়টা। সাথে এক কেজির কুইক ওট। পাউরুটির সেকশনে সারপ্রাইজিংলি ‘ক্রাম্পেট’ পেয়ে গেলাম। হুবুহু চিতই পিঠার মতো। ছয়টার প্যাকেট। দুধ জ্বাল দিয়ে দেশের মতো করে দারুন চিতই/দুধ পিঠা বানিয়ে ফেলা যায়। খুব সফ্ট আর নিখুঁত। আবার ধনে-রসুন-কাঁচামরিচ ভর্তা বানিয়ে ঠিক দেশের মতো করে খেতেও অমৃত। গিন্নি যে কী খুশি হবে! দুই প্যাকেট মাত্র তিন ডলার? বাহ্ বাহ্! আরও নিলাম ইংলিশ মাফিনের দুই প্যাকেট, এগুলোও ছয়টা করে, একই দাম। অনেক কম দাম। ছেলেটা সকালে টোস্ট করে, একটু বাটার মাখিয়ে, একটা ডিম আর চিজ স্লাইস ভেতরে দিয়ে এগ মাফিন বানিয়ে খাবে।
.
আমি বাথরুম সেরে আবার ট্রলি ঠেলে এগোই। হঠাৎ পেছন থেকে এক বৃদ্ধা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল, এক্সকিউজ মি। তুমি মনে হয় আমার ট্রলি নিয়ে যাচ্ছ
– সরি! [আমি ট্রলির জিনিসপত্র দেখে বিস্মিত, সত্যি এগুলা আমার না!]
– ওরকম হয়, আজকে কত ভিড় দেখছো? কালকে মাইনাস তিরিশ ডিগ্রি পড়বে, এ জন্যই মানুষের তাড়াহুড়া। কাল মানুষজন ঘর থেকে কম বের হবে
– তা ঠিক
– ভালো থেকো হানি! সাবধানে চলাচল কইরো! [বলে বৃদ্ধা একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে চলে গেলো]
– তুমিও!
.
আমি হন্য হয়ে খুঁজতে থাকি আমার ট্রলি..

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles