9.9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

মরিয়মই সাজান মায়ের ‘অপহরণ নাটক’

মরিয়মই সাজান মায়ের ‘অপহরণ নাটক’
মরিয়ম মান্নান ও রহিমা বেগম

জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খুলনার আলোচিত মরিয়ম মান্নান তার মা রহিমা বেগমকে ‘অপহরণের নাটক’ সাজিয়েছিলেন। নিখোঁজের দিন বিকালে রহিমা বেগমকে মরিয়ম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পিবিআইর প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে শিগগিরই তা আদালতে দাখিল করবে।

পিবিআইর খুলনা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে এটি অপহরণ নয়, প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ওই ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়েছিলেন রহিমা এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম ও আদুরি। খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ আগস্ট নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম।

- Advertisement -

সৈয়দ মুশফিকুর বলেন, রহিমার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করাসহ তার মেয়েদের দৌড়ঝাঁপ অনেক মানুষকে আবেগতাড়িত করে। রহিমা বেগমকে উদ্ধারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয় মানুষ। নিখোঁজের ২৯ দিন পর রহিমাকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন আদালতে হাজির করা হলে অপহরণের দাবি করে জবানবন্দি দেন রহিমা। এরপর আদুরির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় আদালত। পরে মরিয়ম বলেন, তার মা অপহৃত হয়েছেন বলে শুরুতে তিনি মনে করলেও তার ধারণা পাল্টেছে। তিনি এখন মনে করছেন, স্বেচ্ছায়ই চলে গিয়েছিলেন তার মা।

পিবিআইর পুলিশ সুপার মুশফিকুর বলেন, জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা দিয়েছেন আর প্রতিবেশীরা প্রতিবারই সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। সন্দেহভাজন হিসেবে মামলার এজাহারে যাদের নাম দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় সৎবাবাকেও গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মরিয়ম। সর্বশেষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই ওই নাটক করা হয়েছে।

‘আত্মগোপনে’ যেতে ‘নিখোঁজের দিন’ মরিয়ম মাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে এক হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরে আসেন। এসব ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। তবে ওই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত।

এ ব্যাপারে মরিয়ম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে কী পেয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মরিয়ম ও তার মা এবং মামলার বাদীকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তারা মুখ ফুটে কোনো কথা বলছেন না। রহিমা বেগম শুধু একটা কথাই বলছেন- ‘তিনি অপহৃত হয়েছিলেন’। এর বাইরে আর কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলেই তিনি চুপ করে থেকেছেন। এসব কারণে তদন্তে কিছু বিষয় অজানা রয়ে গেছে। তবে রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনাটি যে পূর্বপরিকল্পিত, তা বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তদন্তে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ ও দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা পিবিআইর পরিদর্শক মো. আবদুল মান্নান জানান, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন দিবাগত রাত ২টার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ওই থানায় মামলা করেন আরেক মেয়ে আদুরি আক্তার। ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। রহিমা বেগম তার মেয়ে আদুরি আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles