8.1 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

সেনাবাহিনীকে কি উসকে দিতে চাইছেন ইমরান

সেনাবাহিনীকে কি উসকে দিতে চাইছেন ইমরান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের মুখ থেকে দেশে সেনা হস্তক্ষেপের আহ্বান আসার পর দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে নানা সময় সামরিক শাসনের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে পাকিস্তান। বর্তমানে দেশটিতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলেও আবার একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মনে।

- Advertisement -

ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার দূরত্বের বিষয়টি নানা গণমাধ্যমে এসেছিল। এমনকি তার সরকারের পতনের পেছনে সেনাবাহিনীর গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ইমরান। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আগাম নির্বাচনের দাবিতে লংমার্চকালে পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে ইমরান হত্যাচেষ্টার শিকার হন। পায়ে গুলিবিদ্ধ ইমরান হাসপাতালে থেকেই জাতির উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা

সানাউল্লাহ ও আইএসআই কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সল নাসির তাকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত। তিনি জানতেন যে ওয়াজিরাবাদে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হতে পারে। এ সময় ইমরান পাকিস্তানের ধ্বংস ঠেকাতে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান। সেনাপ্রধানের উদ্দেশে ইমরান বলেন, আপনি যদি কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন তবে জাতি ভেঙে পড়তে শুরু করবে।

আইএসআই কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সলের বিরুদ্ধে ইমরানের অভিযোগ নিয়ে গতকাল শনিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেনাবাহিনী। দ্য ডন জানায়, এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ শাখা আইএসপিআর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইফতিখার বাবর বলেন, সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পিটিআই চেয়ারম্যানের এমন মিথ্যা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ একেবারে কাম্য নয়। খুবই পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এবং সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী গর্বিত। এ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা খুবই কঠোর এবং কার্যকর। দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের কোনোরকম বেআইনি কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। কিন্তু উদ্ভট অভিযোগ তুলে কারও মান-মর্যাদা কালিমালিপ্ত করা হলে সেনাবাহিনী তাদের কর্মকর্তা ও সেনাদের সুরক্ষা দেবে।

এর আগে গত ২৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুম প্রকাশ্যে ইমরান খানের সমালোচনা করেন। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইমরান খান সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, বেআইনি ও অসাংবিধানিক কাজটি করতে চাননি সেনাপ্রধান। রাজনীতির বাইরে থাকার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেনাবাহিনী। তাই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়। এ জন্যই রেগে গিয়ে ইমরান এখন আইএসআই কর্মকর্তাদের নিয়ে উল্টোপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের ক্ষমতায় বসার পেছনে সেনাবাহিনী তথা আইএসআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে এখন তা মানতে রাজি নন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুম। অতীতে সেনাবাহিনী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও এখন তা থেকে তারা দূরত্ব বজায় রাখছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে ইমরানের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের করা যায়নি। দ্য ডনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মামলার অভিযোগ থেকে আইএসআই কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সল নাসিরের নাম বাদ দিতে ইমরান খান অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ মামলায় নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও। ফলে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার আলোচনা হয়েছে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার বৈঠকেও। এতে পাঞ্জাবের আইজিপি, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা এবং প্রাদেশিক আইনমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

মামলা না হলেও পাকিস্তানের প্রায় সব প্রদেশে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে পিটিআই সদস্যরা। বিক্ষোভে সহিংসতার অভিযোগে ইসলামাবাদ পুলিশ পিটিআই নেতাকর্মীদের নামে মামলা করেছে। ইমরান জানিয়েছেন, একটু সুস্থ হলেই তিনি আবার রাজপথে আন্দোলনে ফিরবেন। যদিও বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলির ঘটনায় ইমরানের রাজনীতিতে ফেরার আন্দোলন ব্যাহত হবে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles