9.9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

সুইস ব্যাংকের টাকা সাদা করার নামে প্রতারণা, খোয়া গেল কোটি টাকা!

সুইস ব্যাংকের টাকা সাদা করার নামে প্রতারণা, খোয়া গেল কোটি টাকা!

এবার সুইস ব্যাংকে পাচারকৃত টাকা ফেরত এনে বিনা সুদে দরিদ্র মানুষের মধ্যে লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংস্থা। শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) দিয়ে বিনা সুদের এমন ঋণ সুবিধার কথা বলে কথিত সংস্থাটির নামে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তিন হাজার করে টাকা করে কয়েক কোটি টাকা।

- Advertisement -

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার অভাবগ্রস্ত প্রায় এক লাখ ঋণ প্রত্যাশী নারী-পুরুষ ইতিমধ্যেই এ চক্রটির হাতে তিন হাজার করে টাকার সঙ্গে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি তুলে দিয়েছেন। কালক্ষেপণের পরও ঋণের টাকা না পাওয়ায় এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সব মহলে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছেন। ইতোমধ্যেই পুলিশ বাবুল দারোগার কাছ থেকে এনআইডি কার্ডের প্রচুর ফটোকপি জব্দ করে তাকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন।

জানা গেছে, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংস্থাটি এক শ্রেণির নারী ও তরুণ-তরুণীদের প্রলুব্ধ করে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে বিনা সুদের ঋণ প্রদানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এমন ফাঁদ পেতেছে।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা গ্রামের ফেরুনা আক্তার এবং করিমগঞ্জ উপজেলার পিটুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল এএম ফজলুল কাদের বাবুল ওরফে বাবুল দারোগা ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে কথিত সংস্থাটির হয়ে জেলাব্যাপী প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। এরমধ্যে ফেরুনা আক্তার এ সংস্থাটির জেলা প্রধান হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলার এবং বাবুল দারোগা করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন বলে পরিচয় প্রদান করে থাকেন।

‘বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে পাচার করা কালো টাকা কিছু দিনের মধ্যেই উদ্ধার করে এনে দরিদ্র-দুস্থ কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হবে। অবস্থা ভেদে গরিব-দুস্থদের ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। স্বাবলম্বী, সচ্ছল ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ১ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। এসব ঋণের টাকা মাত্র ১ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।’ সংস্থাটির লোকজনের এমন প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার ১ লাখ নারী চক্রটির হাতে তুলে দিয়েছে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং নগদ ৩ হাজার করে টাকা।

জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফা কামাল জানান, এ ইউনিয়নের দরগাভিটা এবং নোয়াবাদ গ্রামের অসংখ্য নারী এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এক পর্যায়ে প্রতারিত নারীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে কথিত সংস্থাটির করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার দায়িত্ব পালনকারী বাবুল দারোগা গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আমরা জনস্বার্থে কাজ করছি। এখানে আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। ঢাকা অফিস থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এলাকা থেকে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ফরম পূরণ আকারে পাঠাতে। সুইস ব্যাংকের কালো টাকা দেশে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়া হবে। তাই আমরা এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। আমি ইতোমধ্যেই করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে সাড়ে ৫ হাজার এনআইডির ফটোকপি ঢাকা অফিসে জমা দিয়েছি। অফিস থেকে বলা হয়েছে প্রতিজনকে ১ লাখ থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকাও দেওয়া হতে পারে। এ ঋণ সুদমুক্ত হবে। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, এ সংস্থাটির কেন্দ্রীয় প্রধান হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার। এ সংস্থাটির নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও আছে।

কথিত ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ এর কিশোরগঞ্জ জেলাপ্রধান হিসেবে পরিচয় বহনকারী ফেরুনা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের এ সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ধানমন্ডির সিটি কলেজের পাশে। প্রতি শনিবার সেখানে বসেন তিনি। সংগঠনের চেয়ারম্যান তাকে কিশোরগঞ্জ জেলার দায়িত্ব দিয়েছেন। এর আগে তিনি বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে নারীদের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এখন আর নিজে মাঠপর্যায়ে যান না। তার মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই এখন কাজ করছেন। এ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক আইডি কার্ডের ফটোকপি তিনি কেন্দ্রীয় অফিসে জমা দিয়েছেন। এসব পরিচয়পত্র সরবরাহকারী সবাই কিছুদিনের মধ্যেই বিনাসুদে ঋণ পাবেন বলেও দাবি করেন তিনি। তবে এ আইডি কার্ডের ফটোকপির সঙ্গে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, মিথ্যা আশ্বাসে কারো জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নেওয়া প্রতারণার শামিল। এনআইডি কার্ড ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্পদ। এনআইডি কার্ডের তথ্য প্রতারক চক্রের হাতে চলে গেলে কার্ডধারীর ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, বিষয়টি অবগত হয়ে ইতোমধ্যেই পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। তিনি এ নিয়ে কাজ করছেন। খুব শিগগিরই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে কথা হলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ যুগান্তরকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ওই কথিত সংস্থাটির করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয়দানকারী বাবুল দারোগার কাছ থেকে অসংখ্য এনআইডি কার্ডের ফটোকপি জব্দ করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে কঠোর নজরদারিতে রেখে তদন্ত কাজ চালানো হচ্ছে।

সূত্র : নতুন সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles