9.9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

মডেল তিন্নি হত্যার বিচার কবে?

Syeda Tania Mahbub Tinni : মডেল তিন্নি হত্যার বিচার কবে? - the Bengali Times

প্রায় ২০ বছর আগে খুন হন নব্বই দশকের আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি। কিন্তু তার হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি। গ্রেপ্তার হয়নি তার ‘একমাত্র খুনি’ জাতীয় পার্টির বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে তার লাশ পড়েছিল। মডেল তিন্নি হত্যার মামলার বিচার চলছে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতে।

- Advertisement -

এ ব্যাপারে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ভোলা নাথ দত্ত বলেন, দীর্ঘদিন পর এই হত্যা মামলায় তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর এরআগে তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ সম্ভবত নভেম্বরের শেষের দিকে।

চলতি বছরের ২৩ মার্চ ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম সাক্ষ্য দেন। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম আদালতে সাক্ষ্য দেন।

পুরো পরিবার লন্ডভন্ড:
মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার পর পুরো পরিবারকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ওই সময় তিন্নি ছিলেন এক মেয়ে সন্তানের মা। তার মেয়ের বয়স ছিল দেড় বছর। সে হিসেবে বর্তমানে মেয়েটির বয়স ২১ বছর। মায়ের মৃত্যুর এত বছর পর সেই মেয়ে এখন কোথায়? কার সঙ্গেই বা থাকছেন তিন্নির মা-বাবা?

মডেল তিন্নির একমাত্র মেয়ে এখন বাবার সঙ্গে বিদেশে থাকেন। তিন্নিরা ছিলেন দুই বোন, ছোট বোন এয়ার হোস্টেস। তিন্নির বাবা কর্মজীবন প্রবাসে কাটালেও এখন দেশে একা থাকেন। তিন্নির মা স্বামীকে ছেড়ে পাকিস্তান চলে গেছেন। এদিকে কলাবাগানে ফুফুর যে বাড়িতে তিন্নিরা থাকতেন, অভির (তিন্নি হত্যার আসামি) ভয়ে বাড়িটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় পরিবারটি। এভাবেই একটি খুনের কারণে তছনছ হয়ে যায় সাজানো পরিবার।

২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া গেলেও প্রথমে সেটি শনাক্ত করা যায়নি। পরদিন (১১ নভেম্বর) নাম না জানা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন। এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাইয়ুম আলী সরদার।

পরবর্তীতে লাশটি তিন্নির শনাক্ত হলে মামলাটি চাঞ্চল্যকর উল্লেখ করে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজ ও এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক ছাত্রনেতা ও সংসদ গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এই মামলায় পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি অভিযুক্ত হলেও পুলিশ তাকে আটক করতে পারেনি। অভির অনুপস্থিতিতেই ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা ও মরদেহ গুম-সংক্রান্ত মামলায় অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তিন্নি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়। এ ছাড়াও এই মামলায় ২২টি আলামত জব্দ করা হয়।

কে এই অভি ?
গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলন ঠেকাতে এরশাদের নজর পান অভি। ওই সময় অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানান অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তিনি নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হন। তবে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের চরম পর্যায়ে ডিসেম্বরের প্রথমদিকে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। আর মুক্তি পেয়েই পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। পরবর্তীতে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান।

অভি এখন কোথায় ? চাঞ্চল্যকর তিন্নি হত্যা মামলার ফেরারি আসামি গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। তবে দীর্ঘ ১৫ বছরেও তার কোনো সন্ধান বা কোনো ধরনের তথ্য ইন্টারপোল বাংলাদেশ পুলিশ সদরদপ্তরকে জানাতে পারেনি।

পুলিশ সদরদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করার পর প্রতি পাঁচ বছর পরপর পুনরায় আবেদন করতে হয়। এরপর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে অভির বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি পুনরায় ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।

কিন্তু ইন্টারপোল তার ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। পুনরায় ওই রেড নোটিশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়। এরপর ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি পুনরায় আবেদন করা হলে একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ইন্টারপোল অভির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে। এটি ২০২২ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

দীর্ঘ ১৫ বছরেও ইন্টারপোল গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের তথ্য বাংলাদেশ পুলিশের কাছে দিতে না পারলেও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ফেরারি আসামি গোলাম ফারুক তার নিজ এলাকায় ঈদের জামাতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আসছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে অভি এই মুহূর্তে কোন দেশে আছেন সেটা কেউ বলছে পারছেন না।

একটি সূত্র জানায়, অভি এখন কানাডায় অবস্থান করছেন। যদিও কানাডার কোন শহরে তিনি বসবাস করেন তা জানাতে চায়নি ওই সূত্রটি।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদরদপ্তরের ইন্টারপোল শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক এহসান সাত্তার ঢাকা বলেন, ‘অভির ব্যাপারে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’ আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles