8.2 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

‘মা আমি কী বাঁচবো না?

‘মা আমি কী বাঁচবো না?

বছর তিনেক আগেও মুখভরা হাসি ছিল ছোট্ট আলী কদরের। রোজ সকালে ফল ব্যবসায়ী বাবার সঙ্গে দোকানে যাওয়ার জন্য পিছু নিত সে। বায়না ধরত চকলেট, আইসক্রিম কিনে দেওয়ার জন্য। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো বর্তমানে পাঁচ বছরের আলী কদর। হার্টে ছিদ্র নিয়ে জন্ম নেওয়া আলী কদরের এখন সময় কাটে বিছানায় শুয়ে শুয়ে।

- Advertisement -

চিকিৎসক তিন বছর আগেই আলী কদরের হার্টের অপারেশনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে অপারেশন করতে পারেনি অসহায় এই পরিবারটি। এখন রক্তক্ষরণ হয়ে হার্টের ভাল্বের ওপর স্তর পড়ে গেছে। রক্তনালিও শুকিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসক দ্রুত অপারেশনের কথা বলেছেন ছোট্ট এই শিশুটির।

শুধু তাই নয়, আলী কদরের হার্টের ছিদ্র এতটাই বড় যে দ্রুত অপারেশন না করালে যে কোনো সময় যে কোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান তার বাবা-মা। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই দরিদ্র বাবা-মায়ের।

বুকের ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর একমাত্র ছেলের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের রুমন খন্দকার-রীমা খাতুন দম্পতি। যে ছেলেটা একসময় পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো এখন তার করুণ অবস্থা দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে অসহায় এ পরিবারটি।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চাটমোহর রেলস্টেশনের ওপর ছোট্ট একটি ফলের দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালান রুমন খন্দকার। দুই ভাই বোনের মধ্যে আলী কদর ছোট। বড়বোন রাখি খাতুন স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ফল ব্যবসার আয় দিয়েই কোনোমতে চলে সংসার। কিন্তু জন্মের কয়েকমাস পরেই আলী কদর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তীব্র শ্বাসকষ্ট ও বারবার বমি হতে থাকে। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন চিকিৎসক।

কিন্তু রোগ না সারায় প্রথমে রাজশাহী মেডিকেলে, পরবর্তীতে ঢাকায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় আলী কদরের হার্টে ছিদ্র ধরা পড়ে। চিকিৎসক অপারেশন করতে বলেন। কিন্তু ওই সময় ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন তার বাবা রুমন খন্দকার। এরপর কেটে গেছে তিন বছর। এর মধ্যে কখনো কবিরাজ, আবার কখনো বা স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রের ওষুধপত্র খাওয়ানো হয় আলী কদরকে।

কিন্তু সম্প্রতি আলী কদর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। উপায়ান্তর না পেয়ে আবারো ধারদেনা করে ঢাকায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয় আলী কদরকে। এবার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় হার্টের ছিদ্রর পরিমাণ বেড়েছে। পাশাপাশি হার্টের ভাল্বে রক্তজমাট বেঁধেছে। সেই সাথে রক্তনালিও শুকিয়ে যাচ্ছে। ওই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা।

টাকার অংকের কথা শুনে পূর্বের মতোই আলী কদরকে আবারো বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এখন শিশুটি তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং বুকের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। ছেলের এমন কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে মা রীমা খাতুনের। আর অবিরত কেঁদে চলেছে বাবা রুমন খন্দকার। ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা রীমা খাতুন বলেন, আমার ছেলের যখন কষ্ট হয়, তখন সে বুক চেপে ধরে কান্না করে। বলে- ‘মা, আমি কী বাঁচবো না?’ এমন কথা শুনলে কোনো মা ঠিক থাকতে পারে? অনুরোধ সবার প্রতি। আমার ছেলেকে বাঁচান। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন শিশু আলী কদরের বাবা-মা।

মূলগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল কুদ্দুস রেজা বলেন, পরিবারটি খুব অসহায়। ছেলের এমন বড় ধরনের রোগে পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে যতবার যাই, ততবারই শিশুটির মা খুব অনুরোধ করেন। অসহায় পরিবারটিকে সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

আলী কদরের চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট— রুমন হোসেন, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, রেলবাজার শাখা, চাটমোহর, পাবনা। অ্যাকাউন্ট নম্বর- ০২০০০১৩৫৪৩৮১২।

সূত্র : যুগান্তর

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles