8.6 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

সেনা-পুলিশ পরিচয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নির্যাতন: দুই মামলা কত দূর এগোল?

সেনা-পুলিশ পরিচয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নির্যাতন: দুই মামলা কত দূর এগোল?

তারা নিজেদের পরিচয় দিতেন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। তাদের একজন আবার নিজেকে সেনা কর্মকর্তা, আর কথিত স্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাদের ছিল একজন সাঙ্গাত। এই তিনে মিলে বসুন্ধরা এলাকায় এক বাসায় মানুষকে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিতেন নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিস। কিন্তু ট্রান্সজেন্টার এক নারীকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে ধরা খায় এই প্রতারক ত্রয়ী।

- Advertisement -

ট্রান্সজেন্ডার বিউটি ব্লগার সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআকে বাসায় নিয়ে বিবস্ত্র করা, ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এই ঘটনায় থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী সাদ মুআ।

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এই ঘটনায় করা মামলায় খেলনা পিস্তল, ওয়াকিটকিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও একটি মামলা হয়।

জানা গেছে, তদন্ত শেষে একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে এটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আর বিটিআরসি থেকে রিপোর্ট পেলে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে পুলিশ। আলোচিত এই ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক সানি, তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান রিশু।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক সানি নিজেকে সেনা কর্মকর্তা, আর তার কথিত স্ত্রী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম-পরিচয় ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অভিনব ফাঁদ গড়ে তুলেছিল ‘ফুয়াদ-সাইমা দম্পতি’। তারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেখা করা, তারপর অর্থকড়ি হাতিয়ে নিঃস্ব করেন অনেককে।

বুধবার বিউটি ব্লগার সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআর আইনজীবী নমিতা রানী বিশ্বাস ঢাকা টাইমসকে বলেন, অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে ভাটারা থানার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ছিল ১৯ জুলাই। আদালত পরবর্তী তারিখ দিয়েছে অক্টোবরে। আর তেজগাঁও থানার মামলার প্রতিবেদন না আসায় বিচারকার্য শুরু হয়নি। বর্তমানে অভিযুক্তরা জামিনে রয়েছেন।

প্রশাসনের কর্মকর্তা পরিচয়ে স্বামী-স্ত্রীর চক্র
কথিত স্বামী-স্ত্রীর এই প্রতারক চক্রটির প্রতারণার চেইনটি এমন- প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, তা কিছুটা আবেগের জায়গায় পৌঁছালে দেখা করার প্রস্তাব, বিশ্বাস অর্জন করতে একসঙ্গে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাওয়া, ঘোরাঘুরি, এরপর কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও সর্বস্ব লুট।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের প্রতারণার সত্যতা পাওয়া গেছে। এই চক্রে মূলত তিন-চারজনই ছিল। ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ নর্থ সাউথে পড়াশোনা করেন, আর সাইমা নিরা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফুয়াদ নিজেকে আর্মির ক্যাপ্টেন বলে পরিচয় দিতেন, আর সাইমা পুলিশ কর্মকর্তার। তারা বসুন্ধরাতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।

ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যেভাবে ফাঁদে ফেলা হয়
ট্রান্সজেন্ডার নারী সাদ মুআর সঙ্গে গত বছরের নভেম্বরে পরিচয় হয় আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুর। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছিলেন সাদ মুআ। এ সময় রিশু ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তাকে ওই রেস্তোরাঁয় আসতে বললে তিনি (রিশু) কিছুক্ষণ পরে ফোন দিয়ে বলেন, রেস্তোরাঁর ভেতরে যেতে চান না, সাদকে বাইরে দেখা করতে বলেন।

পরে সাদ বাইরে গিয়ে রিশুর সঙ্গে দেখা করেন। রিশু জানান, তার বাসা কাছেই এবং সাদ মুআ সেলেব্রিটি হওয়ায় তাকে বাসায় নিয়ে স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে চান। রিশুর একাধিকবার অনুরোধের ফলে সাদ মুআ ওই বাসায় যেতে রাজি হন।

সাদ মুআ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের একটি বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে যান। সেখানে তিনি ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি ও সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরাকে দেখতে পান। পরে তারা তিনজন তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। সাদ মুআ তাদের বাধা দিলে তিনজন তাকে মারধর শুরু করেন এবং বলতে থাকেন এই ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন। এ সময় তিনজন নিজেদের আইনের লোক পরিচয় দেন। তাদের কাছে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি ছিল।

এই ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে ২১ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন সাদ মুআ।

মামলায় সাদ অভিযোগ করেন, তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন, সোনার চেইন, টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে বলা হয়, না দিলে মেরে পূর্বাচলে ফেলে দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে থানায় নিয়ে যাবে বলে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে রাত আটটার দিকে রামপুরা এলাকায় একটি হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়।

পরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন ফুয়াদ, নিরা ও রিশু। এ সময় তাদের কাছ থেকে ওয়াকিটকি সেট ও খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

সেসময় র‌্যাব জানায়, আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম-পরিচয় ভাঙিয়ে নানাজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে ওই তিনজন। তাদের মধ্যে দুজনের নামে আগেও মামলা রয়েছে। অবৈধ ওয়াকিটকিসহ তিনজন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। গত জুনে সেই মামলায় প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা জানান, ভুয়া সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষকে তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলতেন তারা। দুই বছর ধরে তারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সেসময় গ্রেপ্তার ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদের একটি ছবি পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিলে বসা ফুয়াদ সিগারেট টানছেন। তার ডান হাতে কালো রঙের একটি পিস্তল এবং টেবিলের ওপর একটি ওয়াকিটকি। অপর আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, সিগারেট হাতে তিনি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার কোমরে একটি ওয়াকিটকি।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles