9.9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

আসামি ৬ হাজার, গ্রেপ্তার-আতঙ্কে বিএনপি নেতারা

আসামি ৬ হাজার, গ্রেপ্তার-আতঙ্কে বিএনপি নেতারা

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আতঙ্ক বিরাজ করছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই সতর্ক অবস্থানে চলে গেছেন। যাঁদের নামে মামলা করা হয়েছে এবং যাঁদের নাম আসেনি—সবাই নিজ বসতবাড়ি থেকে সরে থাকছেন বলে জানান নেতা-কর্মীরা।

- Advertisement -

নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ভুক্তভোগী শাওনের পরিবার ও পুলিশের করা মামলায় প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলায় ৫ হাজার অজ্ঞাতনামা এবং আরেকটি মামলায় ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে বাকি ৯০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে।

মামলা দুটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আমীর খসরু। তিনি জানান, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সদর মডেল থানায় দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়েছে। এর আগে, শাওনের বড় ভাই বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। সেই মামলায় কাউকে দায়ী করা হয়নি।

মামলা দুটির বাদী হলেন, নিহতের ভাই মিলন হোসেন ও চাষাঢ়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক কামরুজ্জামান।পুলিশের করা ভাঙচুরের মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, সদস্যসচিব মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর সবুর খান সেন্টু, সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও আতাউর রহমান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনি, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদসহ ৭১ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।

ইতিমধ্যে পুলিশের করা মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে জামিন আবেদন করলে আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান। পুলিশ এই মামলায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত রোববার (আজ) রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আব্দুস সাত্তার (২২), মজিবুর রহমান (৫২), রঞ্জন কুমার দেবনাথ (৩৬), রাজিব (৩৮), জনি (৩৮), বাদল (৩৩), আবুল কালাম ভূঁইয়া (৪৮), রিমন (২২), ইমন (১৮) ও সোহান (১৮)।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ তাঁদের বিরুদ্ধে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

পুলিশের করা মামলায় অভিযোগ আনা হয় নামীয় ৭১ আসামিসহ আরও ৮০০ থেকে ৯০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। নেতা-কর্মীরা পুলিশের দায়িত্বে বাধা, হামলা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ এবং অগ্নিসংযোগ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে নিহত শাওনের ভাইয়ের করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলার সময় সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন শাওন। সেখানে অবৈধ অস্ত্রের গুলি এবং ইটের আঘাতেই মৃত্যুবরণ করেন শাওন।

গতকাল শনিবার বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নামীয় আসামিরা আজ থেকেই উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন শুরু করবেন। তবে শাওন হত্যা মামলায় সব আসামিকে অজ্ঞাতনামা দেখানোর কারণে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় জেঁকে ধরেছে নেতা-কর্মীদের। ফলে সহসাই নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রকাশ্যে মিছিল, মিটিং বা সভা-সমাবেশ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

১ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষের পর থেকেই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে। শাওনের বাড়িতে বিএনপির মহাসচিবের আগমন এবং একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যের মামলা করার বিষয়টি ছিল আলোচনায়।

দুটি মামলা দায়ের এবং সংঘর্ষ-পরবর্তী বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা হরতাল পালন করতে চেয়েছিল। কিন্তু দলের মহাসচিব কর্মীদের জীবনরক্ষার কথা চিন্তা করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা সত্য যে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রাখায় সাধারণ নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় কি-না, সেই আতঙ্ক রয়েছে। আমরা মনে করি, বিগত দিনে গায়েবি মামলার মতোই এবার অজ্ঞাতনামা আসামি করে হয়রানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা কোনোভাবেই দমে যাব না। শাওনের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আরও সংঘবদ্ধ হবে বিএনপি।’

জেলা বিএনপির এক সদস্য নাম গোপন রাখার শর্তে আজকের পত্রিকা বলেন, দুটি মামলা দায়েরের পর কিছুটা সরে থাকার নির্দেশনা এসেছে ওপর থেকে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে কোনো কর্মসূচি প্রকাশ্যে পালন করবেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সবার আগে গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে দল।

মামলার বিষয়ে যুবদলের এক নেতা বলেন, আজ থেকে উচ্চ আদালতে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন মামলার নামীয় আসামিরা। এরাই মূলত দলের প্রধান চালিকাশক্তি। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সুসংগঠিত করছেন তাঁরা। ধারাবাহিক জামিনের পরেও আগামী দিনের প্রতিটি কর্মসূচিতে বাধা আসবে এই আশঙ্কা সামনে রেখেই নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন নেতারা।

সূত্র : আজকের পত্রিকা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles