10.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছিলেন?

আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছিলেন?

পুরো নব্বই ডিগ্রি ঘুরে গেলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি দাবি করছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে, ভারতে গিয়ে এমন কথা বলেননি তিনি। এটা নাকি ডাহা মিথ্যা কথা। তার ধারে-কাছেও তিনি নেই। এখানে যত দোষ সাংবাদিকদের।

- Advertisement -

এর আগে তার সিলেটে দেওয়া আরেক বক্তব্য নিয়ে যখন চারদিকে সমালোচনার ঝড়, তখনো তিনি সাংবাদিকদের দোষ দিয়ে বলেছিলেন, তিনি সত্যিকার অর্থে বেহেশত বলেননি। কিন্তু সাংবাদিকরা তাকে ‘খায়া ফেললেন’।

আসলেই কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওসব কথা বলেননি। তাহলে কী বলেছিলেন তিনি?

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিও এখন দুর্লভ নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি যে, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আজকে অনেকের বক্তব্যে সেটিই এসেছে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।’ মন্ত্রী আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।’

পরদিন শুক্রবার দুপুরে এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি জেনে বুঝেই বলেছি। আমি আমার বক্তব্য থেকে সরছি না। আমি ভুল কিছু বলিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্থিতিশীলতা চাই। আমাদের বন্ধুরাও তা চান। সে জন্য আমার যা যা বলা দরকার বলেছি। কোনো কিছু ভুল বলিনি। নাথিং রং ইট। আমি আরও বলব। তাদের সহযোগিতা আমাদের দরকার।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অস্থিরতা সবার জন্যই অমঙ্গল। আমি না জেনে মনগড়া কথা বলিনি। আমি আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুদের বলব, আমাদের পাশে থাকো। তাতে তোমাদেরও লাভ। আমাদেরও লাভ।’

তিনি বলেন, ‘এই রিজিওনে আমরা স্থিতিশীলতা চাই। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এ জন্য তাদের সহযোগিতা চাওয়ার কথা বলেছি।’ ওই দিনই ঢাকাটাইমসে ‘ঢাকা টাইমসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আমি জেনে শুনে দায়িত্ব¡ নিয়েই বলেছি, ভুল কিছু বলিনি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত বিষয়ক বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড়, চারদিকে তুমুল সমালোচনা- তখন গত শুক্রবার সকালে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, ‘আমার বক্তব্য মিডিয়া ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে।’ মন্ত্রী সেদিনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমি বলেছি যে, আমরা চাই যে তার (শেখ হাসিনার) স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা (ভারত) আমাদের সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব।’

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চট্টগ্রামের বক্তব্যের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরিণত হয় ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে। কিন্তু এই বক্তব্য দেয়ার পরের দিনই তিনি তা অস্বীকার করায় বিব্রত হয় সরকার। অস্বস্তিতে পড়েন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি তার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ব্যক্তিগত বক্তব্য। দল বা সরকারের নয়। এর দায়ও তার।’ আর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান সাফ জানিয়ে দেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের (আওয়ামী লীগ) কেউ নয়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে, ভারতে গিয়ে এমন কথা বলিনি। এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার ধারে-কাছেও আমি নেই।’

এর আগে গত ১২ আগস্ট সিলেটে এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, একটি পক্ষ থেকে এমন প্যানিক (আতঙ্ক) ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। বৈশ্বিক মন্দায় অন্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল হতে শুরু করে মন্ত্রীর এ বক্তব্য। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। সরকার, আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে।

এর মধ্যে গত ১৪ আগস্ট বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশলেতের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ‘বেহেশত’ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো ট্রু সেন্সে বেহেশত বলিনি। কথার কথা। কিন্তু আপনারা সবাই আমারে খায়া ফেললেন।’

সমালোচনার ঝড় চলমান থাকা অবস্থায় ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করার, আমি সেটা করতে ভারতবর্ষের সরকারকে অনুরোধ করেছি’ বিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্যে আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। বিতর্কের মুখে পড়ে সরকারও।

এমন বিব্রতকর অবস্থায় শুক্রবার রাজধানীর পলাশী মোড়ে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে ‘সরকারের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারত সফরে গিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলে থাকলে, তা তার ‘নিজস্ব বক্তব্য’। অহেতুক কথা বলে সম্পর্কটা নষ্ট না করতে আহ্বান জানান তিনি।

অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ’ করা বিষয়ক বক্তব্যের ভিডিও এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে রয়েছে। ইউটিউবেও সার্চ দিলেই মিলছে মন্ত্রীর এ বক্তব্যের ভিডিও। তবুও তিনি দাবি করে যাচ্ছেন যে, তিনি ওই বক্তব্য দেননি। উল্টা দুষছেন গণমাধ্যমকে।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে ভারত ও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কারও এমন কিছু করা উচিত হবে না, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এমন কোনো উসকানি দেওয়া ঠিক হবে না, যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশে কয়েকটি মসজিদ পোড়ানো হয়েছে। সেটি দেশে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। এর কারণ হচ্ছে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু জঙ্গি লোক আছে, যারা এটার বাহানায় আরও অপকর্ম করবে। তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনো স্টেটমেন্ট দিই না।’

ভারতের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন ভদ্রমহিলা একটি কথা বলেছিলেন, আমরা একটি কথাও বলিনি।.. বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, …আমরা একটি কথাও বলিনি। এ ধরনের প্রটেকশনও আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে বর্ডারে (সীমান্তে) এক্সট্রা (অতিরিক্ত) খরচ করতে হয় না। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বছরে ২৮ লাখ মানুষ ভারতে বেড়াতে যায়। কয়েক লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে।’

ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুই দেশেরই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটি সম্ভব যদি শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেয় ভারত।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles