10.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

‘পুতিনের ব্রেন’ কে এই আলেকসান্দর দাগিন

‘পুতিনের ব্রেন’ কে এই আলেকসান্দর দাগিন - the Bengali Times
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের উত্তাপ বিশ্বজুড়ে ছড়াচ্ছে

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের উত্তাপ বিশ্বজুড়ে ছড়াচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া যে এই প্রথম ইউক্রেন ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছে, তা নয়। এর আগেও ২০১৪ সালে ইউক্রেন ভূখণ্ডে তারা অনুপ্রবেশ করে। লম্বা বিরতি দিয়ে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারা আবার ইউক্রেনের অঞ্চলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান বিষয়ে বহু আগে থেকে তাগিদ দিয়ে আসছেন রাশিয়ার প্রভাবশালী দার্শনিক আলেকসান্দর গেলিয়েভিচ দাগিন। তিনি একাধারে অধ্যাপক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কৌশলী। ক্রিমিয়া দ্বীপ দখলের সময়েই তিনি চেয়েছিলেন যেন সমগ্র ইউক্রেনকে দখল করা হয়। ইউক্রেনীয়দের জাতীয় পরিচয় পুরোপুরি নির্মূলের কথা ভেবে রেখেছিলেন এই দাগিন। তবে সে সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালাননি। এজন্য দাগিন তখন বেশ হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।

- Advertisement -

সাত বছর পর ২০২২ সালে এসে পুতিন দাগিনের সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নেই মন দিয়েছেন। দাগিনের চিন্তা ও দর্শনে পুতিনের আস্থার কারণে সমালোচকরা তাকে ‘পুতিনের ব্রেন’ বলে থাকেন।

দাগিন যেমন ভাবধারার মানুষ

৬০ বছর বয়সী দাগিন প্রাচীন ভাবধারায় বিশ্বাসী। তার ধর্মচিন্তা সুদূরপ্রসারী। মূল ধারার রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বায়নের বিরোধী তিনি। আধুনিক প্রযুক্তি তিনি এড়িয়ে চলেন। ইন্টারনেটের বৈশ্বিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে তিনি।

ধর্মচিন্তা ও দর্শনে মগ্ন থেকেও তিনি নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। তিনি জাতীয় বলশেভিক দল (যার মূল আদর্শ নাৎসিবাদ ও কমিউনিজম; মৌলবাদি দিকের সংমিশ্রণ) ও ইউরেশিয়া দল প্রতিষ্ঠা করেন।

আধুনিকতাবিরোধী এই মানুষটি কেবল ‘জাতীয় স্বার্থের’ পক্ষে কথা বলেন। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাকে তিনি রুদ্ধ করতে চান। তবে তিনি বহু ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো তাকে ‘উগ্রবাদি’ হিসেবেই উপস্থাপন করে থাকে। দ্য জিউইশ ক্রনিকলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাগিনের এসব উগ্র চিন্তাভাবনা পুতিনের সিদ্ধান্তে বড় প্রভাব ফেলে।

তার প্রবর্তিত ধারণাসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো নব্য-ইউরেশীয়বাদ (ইউরোপ ও এশিয়া), চতুর্থ রাজনৈতিক তত্ত্ব, ভূমি সভ্যতা ও সমুদ্র সভ্যতা পার্থক্য। এখন পর্যন্ত দাগিনের ৩০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ফোর্থ পলিটিক্যাল থিউরি ও ফাউন্ডেশনস অব জিওপলিটিক্স অন্যতম যা বর্তমানে রাশিয়ান মিলিটারির প্রধান আদর্শগত পাঠ্যবই।

তার চিন্তাভাবনায় বিংশ শতাব্দীর জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিৎশে, কার্ল শ্মিট, মার্টিন হাইডেগার, ইতালীয় ফ্যাসিবাদী দার্শনিক জুলিয়াস ইভোলা, ফ্রেঞ্চ ধর্মতত্ত্ববিদ ও সুফি মুসলিম দার্শনিক রেনে গুয়েনন, সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ও হালের ফ্রেঞ্চ দার্শনিক অ্যালেন ডি বেনোয়াদের গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

আর দাগিন তৈরি হয়েছেন ইতালির ফ্যাসিস্ট জুলিয়াস ইভোলার আদর্শিক প্রভাবে। ইভোলাকে আধুনিক ইউরোপের ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের অন্যতম গুরু হিসেবে বিবেচনা করা হত।

দাগিনের মদদে যেসব ঘটনাপ্রবাহ

বর্তমান বিশ্বরাজনীতির বহু আলোচিত ঘটনায় দাগিনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ রয়েছে। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার সরাসরি প্রবেশ, ২০১৪ সালে রাশিয়া-ইউক্রেনের সংগঠিত দোনবাস যুদ্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাবেও দাগিনের বড় প্রভাব রয়েছে। এছাড়া জর্জিয়া (২০০৮), বেলারুশ (২০২০), কাজাখস্তানে (২০২২) রুশ বাহিনীর তৎপরতা ও হস্তক্ষেপেও পুতিনের সঙ্গে দাগিনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

১৯৯৭ সালে দাগিনের লেখা ‘ফাউন্ডেশন অব জিওপলিটিকস’ বইটি পুতিন গত ২০ বছর ধরে অনুসরণ করে আসছেন। রাশিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই বইটি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশনীতির সেই বইটি দেশটির সামরিক বাহিনীও পাঠ করে থাকে। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রায় দুই যুগ ক্ষমতায় বহাল থাকা পুতিন দাগিনের স্বপ্ন ও দর্শনের পথেই চলছেন। আগামী ২০৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা থাকা পাকাপোক্ত করে রেখেছেন।

দাগিন যা চান

দাগিন ‘ইউরেশিয়া’ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চান। যে সাম্রাজ্যের মূল চরিত্রে থাকবে নায়কেরা। এই ইউরেশিয়া হবে বৃহত্তর এক রাশিয়া। সেই সাম্রাজ্যে তিনি তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের প্রতিফলন দেখতে চান। তার সেই ভাবনাকে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক জনগোষ্ঠীই সমর্থন দেন। তুরস্ক-ব্রাজিলসহ অনেক দেশের নাগরিকরা তাকে গুরুও মানছেন।

উগ্র জাতীয়বাদী এই দাগিনের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদেরও ওপর রয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পুতিনের যে সুসসম্পর্ক তাতে দাগিনের অবদান রয়েছে। ট্রাম্পও দাগিনের মতাদর্শে উৎসাহিত হতেন। এটা সবার মনে থাকার কথা যে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বিদেশি অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের তাত্ত্বিক গুরু স্টিভ ব্যানন ইভোলা তথা দাগিন মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন।

দাগিনকে নিয়ে যাদের, যে উদ্বেগ

দাগিন গণতন্ত্রের বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা তার ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন। এছাড়া যেসকল রুশ নাগরিক রাজনৈতিক বিশ্বাসে উদার গণতন্ত্রী ও পশ্চিমের মিত্র তারাও দাগিনের মতাদর্শে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার আলোচনায় আসেন দাগিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে রাশিয়ার নাক গলানোর জন্য তাকেই দায়ী করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও রুশদের নাক গলাতে উৎসাহিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ইউক্রেন অভিযানকে তিনি রাশিয়ার দেশপ্রেম হিসেবে দেখেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি ইউক্রেন সংঘাতকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles