3.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

নৌকার প্রার্থী ধরাশায়ী ১৯ মন্ত্রীর এলাকায়

নৌকার প্রার্থী ধরাশায়ী ১৯ মন্ত্রীর এলাকায় - the Bengali Times

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন মন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী ধরাশায়ী হয়েছেন। এক্ষেত্রে যারা জিতেছেন তাদের অধিকাংশই সরকারি দলের ‘বিদ্রোহী’।

- Advertisement -

এছাড়া জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতারাও জিতেছেন। তবে একজন মন্ত্রীর সংসদীয় এলাকার সবকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন।

সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াসেফ ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকনোক্রেট মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য। তার নির্বাচনি এলাকায় সিটি করপোরেশন হওয়ায় সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছিল না। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে কাউকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। বাকি ২০ জন মন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ইউপি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই ২০ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৯ জনের এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কমবেশি হেরেছেন। এসব আসনে সাত ধাপে ৩১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জিতেছেন ১৯৪টিতে। আর হেরে গেছেন ১০৯টি ইউনিয়ন পরিষদে। তবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের আসনে শতভাগ ইউনিয়ন পরিষদেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তারা সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।

বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, পাঁচজন মন্ত্রীর আসনে অর্ধেকের কমসংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জিতেছেন। তারা হলেন-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং প্রবাসীকল্যাণ ইমরান আহমদ। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেনের নির্বাচনি আসনে চারটি ইউনিয়ন পরিষদের দুটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন। সেখানে খেলাফত মজলিস ও জামায়াত সমর্থক প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন।

যেসব এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধরাশায়ী হয়েছেন, সেখানে অপেক্ষাকৃত যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থী করা হয়নি-এমন অভিযোগ একাধিক মন্ত্রীর। তাদের মতে, আরও অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও টাকার প্রভাব।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, এবার চার হাজার ১৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩৭১ জন চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

মন্ত্রীদের এলাকা অনুযায়ী ফলাফল-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী : গাজীপুর-১ আসনের সংসদ-সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১-১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এ আসন গঠিত। তার নির্বাচনি আসনে গতকাল পর্যন্ত ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে নৌকার প্রার্থী জয়ী হন। তারা হলেন-ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নে মো. শাহ আলম সরকার ও শ্রীফলতলীতে আজিবর রহমান। বাকি ছয়জনই স্বতন্ত্র। তারা হলেন-চাপাইরে মো. সাইফুজ্জামান সেতু, বোয়ালীতে মো. আফজাল হোসেন খান, সূত্রাপুরে সোলায়মান মিন্টু, ঢালজোড়ে মো. ইছাম উদ্দিন, আটাবহে মো. সাখাওয়াৎ হোসেন এবং মধ্যপাড়া ইউনিয়নে মো. সিরাজুল ইসলাম।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. সাইফুজ্জামান সেতু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি মন্ত্রীবিরোধী পক্ষের হিসাবে পরিচিত। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া সূত্রাপুরে সোলায়মান মিন্টু বিএনপি নেতা এবং ঢালজোড়ে মো. ইছাম উদ্দিন, আটাবহে মো. সাখাওয়াৎ হোসেন ও মধ্যপাড়া ইউনিয়নের মো. সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মো. সিরাজুল ইসলাম মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচনে আমরা কোনোরকম হস্তক্ষেপ করিনি। ভোটাররা যাদের পছন্দ করেছে তাদের ভোট দিয়ে জয়ী করেছে। যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হয়তো বড় নেতা কিন্তু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কম। অপরদিকে যারা জিতেছেন তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা হয়তো গণমানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পেরেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ফলাফলের কারণে আমার ওপর হয়তো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।

পরিকল্পনামন্ত্রী : পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ-সদস্য। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ (শান্তিগঞ্জ) ও জগন্নাথপুর উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। তার নির্বাচনি এলাকায় ভোট হওয়া ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জিতেছেন। বাকি ১১টিতে হেরেছেন সরকারি দলের প্রার্থীরা।

এ আসনের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ (শান্তিগঞ্জ) উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয় তৃতীয় ধাপে। এর মধ্যে একমাত্র পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়েছেন। বাকি সাতটিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। ওই ইউনিয়নগুলো হচ্ছে-জয়কলস, শিমুলবাক, পাথারিয়া, দরগাপাশা, পূর্ব পাগলা, পশ্চিম পাগলা ও পশ্চিম বীরগাঁও। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, স্বতন্ত্রভাবে জয়ীদের মধ্যে জয়কলস ইউনিয়নে আব্দুল বাছিত সুজন, শিমুলবাকে শাহীনুর রহমান, পাথারিয়ায় শহীদুল ইসলাম, পূর্ব পাগলায় মাসুক মিয়া ও পশ্চিম পাগলা মো. জগলুল হায়দার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। তারা পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান অনুসারী হিসাবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এছাড়া দরগাপাশায় মো. ছুফি মিয়া ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে লুৎফর রহমান জায়গীরদার খোকন বিএনপি নেতা।

একই আসনের জগন্নাথপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয় চতুর্থ ধাপে। এর মধ্যে চারটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছেন। স্বতন্ত্রভাবে জয়ী চেয়ারম্যানরা হলেন-আশারকান্দিতে মো. আইয়ুব খান, কলকলিয়ায় মো. রফিক মিয়া, পাইলগাঁওয়ে হাজী মো. মখলুছ মিয়া এবং হলদিপর ইউনিয়নে মো. শাহিদুল ইসলাম বকুর। তাদের মধ্যে মো. রফিক মিয়া বিএনপি সমর্থক এবং বাকি তিনজনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। যে তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন সেগুলো হচ্ছে-পাটলী, রানীগঞ্জ ও সৈয়দপুর ইউনিয়ন।

জানতে চাইলে এমএ মান্নান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, পারিবারিক, সামাজিক, গোষ্ঠীগত, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক কারণে এমন ফলাফল হয়েছে। নির্বাচনে টাকার খেলা হয়েছে। প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। অনেকে প্রবাসী পরিচিত হতে প্রার্থী হয়েছেন। তারা অনেক টাকা ব্যয় করেছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে আমার ভূমিকা ছিল না।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী : সিলেট-৪ আসনের সংসদ-সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। এ তিন উপজেলায় এবার ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে ১০টিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হেরে গেছেন। বাকি ৯টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

ফলাফল পর্যালোচনা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হেরে যান এবং বাকি দুটিতে জয়ী হন। যে তিনটিতে নৌকা হেরেছে সেগুলো হচ্ছে-ইসলামপুর পূর্ব, তেলিখাল ও ইছাকলস। এ তিনটির দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং একটিতে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

অপরদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয় তৃতীয় ধাপে। সেখানে তিনটি ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর পরাজয় ও বাকি তিনটিতে জয় হয়। যে তিনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হেরেছেন তার মধ্যে দুটিতে বিএনপি ও একটি স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন। একই ধাপে জৈন্তাপুর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হন এবং বাকি তিনটিতে পরাজিত হন। ওই তিনটিতে বিএনপি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হন। ষষ্ঠ ধাপে কোম্পানীগঞ্জের একটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন; যিনি বিএনপি নেতা। একইদিন গোয়াইনঘাট উপজেলায় ভোট হওয়া দুটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

বাণিজ্যমন্ত্রী : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নির্বাচনি আসন রংপুর-৪ পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ দুই উপজেলায় অর্ধেকের বেশি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হেরে গেছেন। এ আসনের ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে সাতটিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি আটটি ইউনিয়নের সাতটিতেই স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন। একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রথম ধাপে পীরগাছার কল্যাণীতে ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন। দ্বিতীয় ধাপে এ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে মাত্র তিনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি পাঁচটিতে পরাজিত হন। এই পাঁচটির চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে তৃতীয় ধাপে কাউনিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। তার মধ্যে তিনটিতেই আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। সেগুলো হচ্ছে-হারাগাছ, কুর্শা ও টেপামপুর। সেগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী : বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ-সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এই দুই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে মাত্র ছয়টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাকি নয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। জুড়ী উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে চারটিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরাজয় হয়। বাকি একটি সাগরনাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় হয়। তৃতীয় ধাপে বড়লেখা উপজেলার ১০টিতে ভোট হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সমান সমান পাঁচ করে ইউনিয়ন পরিষদে জয় পান। অর্থাৎ পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রার্থীর জয় হয় এবং বাকি পাঁচটিতে পরাজিত হন।

সড়ক পরিবহণমন্ত্রী : কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ-সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একাধারে তিনি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী। তার নির্বাচনি এলাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সপ্তম ধাপে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এসব ইউনিয়নে দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। আট ইউনিয়নের সাতটিতে সরকারদলীয় প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। একমাত্র চরপার্বতী ইউনিয়নে জামায়াতের মোহাম্মদ হানিফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ওবায়দুল কাদেরের আপন ভাগ্নে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জুকে হারিয়ে জয়ী হন।

এর আগে চতুর্থ ধাপে কবিরহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে পাঁচটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। বাকি দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ দুজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন-ধানশালিক ইউনিয়নে সাহাব উদ্দিন এবং সুন্দলপুর ইউনিয়নে মো. ইলিয়াছ। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। অপরদিকে এ উপজেলার আওয়ামী লীগের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-ঘোষবাগে কেএম আলাউদ্দিন, চাপরাশির হাটে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ধানসিঁড়িতে মোহাম্মদ কামাল খান, নরোত্তমপুরে একেএম সিরাজ উল্যাহ ও বাটইয়াতে জসিম উদ্দিন।

কৃষিমন্ত্রী : মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ-সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তার নির্বাচনি এলাকা মধুপুরে ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে তিনটিতে এবার নির্বাচন হয়েছে। বাকি ৮টি নির্বাচন উপযোগী হয়নি। নির্বাচন হওয়া তিনটির দুটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। একমাত্র আলোকদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবু সাইদ খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, তিনি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। অপরদিকে ধনবাড়ী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে; যার মধ্যে ছয়টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। একমাত্র পাইঙ্কা ইউনিয়ন পরিষদে মো. জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

তথ্যমন্ত্রী : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ-সদস্য তথ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। তৃতীয় ধাপে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৩টিতে ভোট হয়। এ উপজেলার ১৩টির মধ্যে ৮টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের দুটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। যে দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন তারা হলেন, বেতাগী ইউনিয়নে শফিউল আলম এবং লালনগর ইউনিয়নে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার। এ দুজনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তাদের দল থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। অপরদিকে চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মোকারম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী : সদর দক্ষিণ, লালমাই এবং নাংগলকোট উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ-সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ আসনের নির্বাচন হওয়া ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন। বাকি চারটিতে নৌকা প্রার্থীর পরাজয় হয়।

পঞ্চম ধাপে নাঙ্গলকোট উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে-পেরিয়া, বক্সগঞ্জ, বাংগড্ডা ও মক্রবপুর। বাকি চার ইউনিয়ন পরিষদ- ঢালুয়া, মৌকরা, সাতবাড়িয়া ও হেসাখালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। একই ধাপে লালমাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেগুলোর সবগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে এবার কোনো নির্বাচন হয়নি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী : লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৯ আসনের সংসদ-সদস্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ দুই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে লাকসাম উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। অপরদিকে ষষ্ঠ ধাপে মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের তফশিল ঘোষণা করা হয়। ওই ১১টিতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী সবাই মন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, এ দুই উপজেলায় অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়। এ বাধার প্রতিবাদে রাজধানীতে মানববন্ধন করেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জমা দেন।

শিক্ষামন্ত্রী : সদর ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ-সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ দুই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ১২টিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হন। বাকি দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন।

দ্বিতীয় ধাপে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সবগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। পঞ্চম ধাপে হাইমচর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। ওই চারটির মধ্যে দুটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদগুলো হচ্ছে-আলগী দুর্গাপুর (দক্ষিণ) ও নীলকমল। এ দুটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে আলগী দুর্গাপুর (দক্ষিণ)-এ বিএনপির প্রার্থী সরদার মো. আব্দুল জলিল এবং নীলকমলে মো. সউদ আল নাছের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হন। বাকি দুই ইউনিয়ন আলগী দুর্গাপুর (উত্তর) ও হাইমচরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সংসদ-সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন। এ আসনের শুধু সিলেট সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ভোট হয়। ওই চারটির মধ্যে দুটিতে নৌকার পরাজয় হয়। হাটখোলা ইউনিয়নে খেলাফত মজলিসের রফিকুজ্জামান ও কান্দিগাঁওয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মনাফ জয়ী হন। মো. আব্দুল মনাফ জামায়াতের সমর্থক। বাকি দুটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন।

শিল্পমন্ত্রী : মনোহরদী ও বেলাব উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী-৪ আসনের সংসদ-সদস্য শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এ নির্বাচনি এলাকায় ২৬টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১১টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয় হয়। বাকি ১৫টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় হয়।

চতুর্থ ধাপে মনোহরদীর ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে চারটিতে নৌকার পরাজয় হয়। এ চার ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তারা হলেন-একদুয়ারিয়ায় মোল্লা রফিকুল ইসলাম (ফারুক), কাচিকাটায় মো. মোবারক হোসেন খান (কনক), গোতাশিয়ায় মো. আবুল বরকত ও দৌলতপুর ইউনিয়নে শরিফ মাহমুদ খান। বাকি পাঁচটিতে নৌকার প্রার্থী জিতেছেন।

পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত বেলাব উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনটিতেই নৌকার পরাজয় হয়। ওই তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। এর মধ্যে চর উজিলাব ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ শফিকুল ইসলাম ও নারায়ণপুর ইউনিয়নে মোহাম্মদ কাউসার কাজল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হন। আর বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না বিএনপি সমর্থক। বাকি পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী : নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। দ্বিতীয় ধাপে রূপগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে চারটিতে নৌকা ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে জয়ী হওয়া চারজন চেয়ারম্যানের তিনজনই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একমাত্র স্বতন্ত্রভাবে জয়ী মো. আলমগীর হোসেন ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী : সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ-সদস্য জাহিদ মালেক। তার নির্বাচনি এলাকার দুই উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছেন। বাকি পাঁচটিতে স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন।

এ আসনের অন্তর্ভুক্ত সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয় তৃতীয় ধাপে। ওই সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে পাঁচটিতে নৌকা প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি দুটিতে পরাজিত হয়েছেন। সেই দুই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে-বেতিলা-মিতরা এবং দিঘী। অপরদিকে চতুর্থ ধাপে সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে ৬টিতে নৌকার জয় হয়। বাকি তিনটিতে নৌকার পরাজয় হয়। সেখানেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন।

খাদ্যমন্ত্রী : পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসনের সংসদ-সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তার নির্বাচনি এলাকায় ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে ১৮টিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। বাকি দুটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছেন।

পঞ্চম ধাপে পোরশা ও সাপাহার উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে ১১টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট একটি সাপাহারের আইহাই ইউনিয়নে নৌকার পরাজয় হয়। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জিয়াউজ্জামান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে ষষ্ঠ ধাপে নিয়ামতপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানেও একটিতে নৌকা পরাজিত হয় এবং বাকি সাতটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। যেটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন সেটি হচ্ছে চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদ।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী : কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ-সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। এ দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদে এবার ভোট হয়। এতে ৯টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। বাকি সাতটিতে সরকারি দলের প্রার্থীরা হেরে গেছেন।

এবারের নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে ৬টিতে নৌকা প্রতীকের জয় ও বাকি দুটিতে পরাজয় হয়। পরাজিত হওয়া দুটি ইউনিয়ন সারপুকুর ও পলাশীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তবে কালীগঞ্জ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ে আধিক্য ছিল। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাঁচটিতেই নৌকার পরাজয় হয়। বাকি তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী : পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ-সদস্য শ. ম. রেজাউল করিম বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী। তার নির্বাচনি এলাকার ২৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ১৩টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। আর হেরেছেন ১১টি ইউনিয়নের প্রার্থী।

প্রথম ধাপে সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেগুলোর মধ্যে কলাখালী ও কদমতলায় এ দুটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পরাজিত হন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি দুই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। একই ধাপে অনুষ্ঠিত নেছারাবাদ উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চারটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যান। ওই চার ইউনিয়নে স্বতন্ত্ররা জয়ী হন। বাকি ছয়টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। এ সময়ে নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত চারটির মধ্যে দুটিতে স্বতন্ত্র ও বাকি দুটিতে নৌকার প্রার্থী জিতেছেন। দ্বিতীয় ধাপে সদর উপজেলার তিনটিতে ভোট হয়, যেখানে একটিতে নৌকা হেরে গেছে। বাকি দুটিতে জিতেছে। এ ধাপে অনুষ্ঠিত নাজিরপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের দুটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হেরেছেন। বাকি একটিতে জিতেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়কমন্ত্রী : বান্দরবান পার্বত্য জেলার সংসদ-সদস্য ও পার্বত্যবিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এবার এ জেলার ২৯টিতে নির্বাচন হয়। যার মধ্যে ২২টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন, বাকি ৭টিতে হেরেছেন।

জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে লামা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। তৃতীয় ধাপে আলীকদম উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে নৌকার পরাজয় ও বাকি দুটি জয় হয়। একই ধাপে রুমা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদে জয় পান নৌকার প্রার্থীরা। আর একটিতে হেরে যান। চতুর্থ ধাপে থানচি উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৬টিতে নৌকা ও দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। পঞ্চম ধাপে সদর উপজেলার ভোট হওয়া তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের দুটিতেই নৌকা প্রার্থীর পরাজয় হয়। বাকি একটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছেন। একই উপজেলায় সপ্তম ধাপে ভোট হওয়া তিনটি ইউনিয়নের সবকটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

ভূমিমন্ত্রী : পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৩ আসন। ওই আসনের সংসদ-সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এবার এ সংসদীয় আসনের ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে ২৩টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি ৬টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন।

চতুর্থ ধাপে কর্ণফুলী উপজেলার চারটি এবং পটিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। পটিয়া উপজেলার দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত হয়। কর্ণফুলী উপজেলার তিনটিতে নৌকা ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে পটিয়া উপজেলায় চারজন স্বতন্ত্র ও বাকি ১১ জন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। পঞ্চম ধাপে আনোয়ারা উপজেলায় ভোট হওয়া নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের আটটিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন। ষষ্ঠ ধাপে আনোয়ারার জুইদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন।

রেলমন্ত্রী : পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ-সদস্য রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। তার নির্বাচনি এলাকা বোদা ও দেবীগঞ্জের ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। বাকি ছয়টিতে পরাজিত। এ ছয়টির দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, দুটিতে বিএনপি ও দুটিতে জামায়াত সমর্থকরা নির্বাচিত হয়েছেন।

চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত বোদা উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সাতটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্রভাবে জয়ী বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাহেব আলী জামায়াত এবং বোদা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র ঘোষ বিএনপি সমর্থক। পঞ্চম ধাপে দেবীগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে অর্ধেকসংখ্যক অর্থাৎ চারটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হেরে গেছেন। বাকি চারটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এ ধাপে সুন্দর দিঘী ও সোনাহার মাল্লিকাদহ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং শ্যালডাংগায় বিএনপি ও চিলাহাটীতে জামায়াত নেতা জয়ী হন। ষষ্ঠ ধাপে অনুষ্ঠিত দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের সবকটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন।

সূত্র : যুগান্তর

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles