শুধুমাত্র দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।”– এমনই একটি বিজ্ঞাপন কয়েকদিন ধরে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের এই বিজ্ঞাপনের ছবি তুলে অনেকেই নিজের দেওয়ালে পোস্ট করেছিলেন, সে দেশে বেকারত্বের প্রকৃত ছবি তুলে ধরার জন্য।
ওই বিজ্ঞাপন থেকেই জানা গেছিল, এ কাজ খুঁজছেন মোহাম্মদ আলমগীর কবির। তিনি বগুড়া শহরের জহুরুলনগরের আশপাশের এলাকায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অঙ্ক ছাড়া বাকি সব বিষয় পড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। ছিমছাম সে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে সাদা কাগজে, কালো হরফে লিখে। সেটাই বিভিন্ন দেওয়ালে সাঁটা হয়েছে।
সম্প্রতি সেই মোহাম্মদ আলমগীর কবির একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় থাকেন। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স পাশ করেছেন ২০২০ সালে। কিন্তু ডিগ্রিটুকুই সার। চাকরি পাননি তিনি। বরং চাকরির অভাবে দিনকেদিন সঙ্গীন হয়েছে পরিবারের আর্থিক অবস্থা। তার ওপর দু’বছর ধরে চলা এই করোনা পরিস্থিতি যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। দু’বেলা পেট ভরে খাবার জোটাই দায়।
আলমগীর স্পষ্ট বলেছেন, “মূলত খাবারের কষ্ট থেকেই বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এই মুহূর্তে আমার একটি টিউশনি আছে। সেখানে রাতে পড়াই। তারা আগে জলখাবার দিত। পরে আমি তাদের বলেছি, জলখাবারের বদলে রাতে ভাত খাওয়াতে। কিন্তু দুপুরে?
আলমগীর জানিয়েছেন, ওই টিউশনি করে তিনি দেড় হাজার টাকা পান। তাই দিয়েই নিজের খরচ চলে। সঙ্গে চাকরির পরীক্ষার চেষ্টা করতে যে টাকা লাগে, সেটাও দিতে হয়। সব মিলিয়ে খুবই সমস্যা, দেড় হাজার টাকায় মাসের খরচ চালানো। তাই তিনি নিজের থাকার জায়গার কাছাকাছি একটি টিউশনি খুঁজছেন, যেখানে দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বদলে তিনি টাকা নেবেন না।
তিনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরে সেই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হতেই অবশ্য অনেক ফোন আসছে তাঁর কাছে। তিনি কাপড় তৈরির কারখানায় চাকরির প্রস্তাবও পেয়েছেন। কিন্তু সেই কাজ তিনি করতে চান না। কারণ সেখানে ছুটি মিলবে না, যে তিনি অন্য চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন।অনেকেই বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় পেটের দায়ে নানা রকম কাজ করতে হচ্ছে যুবক-যুবতীদের। টিউশন পড়ানো তার মধ্যে অন্যতম, যা বহু বছর ধরেই করছেন তরুণ সমাজ। কিন্তু ইদানীং দু’বছরের একটানা করোনা পরিস্থিতি সেই কাজও কমিয়েছে। পড়াশোনা বিষয়টিই অবহেলিত, সেখানে টিউশন অনেকাংশেই বিলাসিতা। তার ওপরে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের রোজগারও কমেছে, যাতে করে সন্তান-সন্ততির জন্য বেতন দিয়ে প্রাইভেট টিউটর রাখতে পারছেন না অনেকে।
এই অবস্থায় আলমগীর পড়াতে চেয়েছেন, দু’বেলা ভাতের বিনিময়। এতে তাঁর খাবার কষ্টও মেটে, আবার কোনও এক ছাত্র-ছাত্রী পড়ার সুযোগও পায়।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ইতিমধ্যেই ২০২২ সালে প্রকাশিত তাদের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে বলেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে কর্মসংস্থান এবং জীবিকার সংকট। যদিও বাংলাদেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ঠিক কত, সে বিষয়ে সরকারি কোনও পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায় না। তবে আলমগীরের বিজ্ঞাপন বুঝিয়ে দেয়, এই সংখ্যা খুব কম নয়।