সম্প্রতি সারোগেসির মাধ্যমে মা হয়েছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এর পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারোগেসির কড়া সমালোচনা করলেন ভারতে বসবাসরত নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
এই পদ্ধতিতে ধনী ও ব্যস্ত সেলিব্রিটিরা নিজের জিনসমেত একখানা রেডিমেড শিশু চায় বলে মন্তব্য করেছেন তসলিমা নাসরিন।
তিনি বলেন, সারোগেসি ততদিন টিকে থাকবে, যতদিন সমাজে দারিদ্র্য থাকবে। শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সারোগেসি নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন এ লেখিকা।
সারোগেসি বিজ্ঞানের চমৎকার একটা আবিষ্কার স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তবে সারোগেসি ততদিন টিকে থাকবে, যতদিন সমাজে দারিদ্র্য টিকে থাকবে। দারিদ্র্য নেই তো সারোগেসি নেই।’
পোস্টে তিনি আরও লিখেন, ‘দরিদ্র মেয়েদের জরায়ু টাকার বিনিময়ে ৯ মাসের জন্য ভাড়া নেয় ধনীরা। ধনী মেয়েরা কিন্তু তাদের জরায়ু কাউকে ভাড়া দেবে না। কারণ গর্ভাবস্থায় জীবনের নানা ঝুঁকি থাকে, শিশুর জন্মের সময়ও থাকে ঝুঁকি। দরিদ্র না হলে কেউ এই ঝুঁকি নেয় না।’
তিনি লেখেন, ‘গৃহহীন স্বজনহীন কোনো শিশুকে দত্তক নেওয়ার চেয়ে সারোগেসির মাধ্যমে ধনী এবং ব্যস্ত সেলিব্রিটিরা নিজের জিনসমেত একখানা রেডিমেড শিশু চায়। মানুষের ভেতরে এই সেলফিস জিনটি, এই সেলফিস নার্সিসিস্টিক ইগোটি বেশ আছে। এসবের ঊর্ধ্বে উঠতে কেউ যে পারে না তা নয়, অনেকে গর্ভবতী হতে, সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হলেও সন্তান জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সারোগেসিকে তখন মেনে নেব যখন শুধু দরিদ্র নয়, ধনী মেয়েরাও সারোগেট মা হবে, টাকার বিনিময়ে নয়, সারোগেসিকে ভালোবেসে হবে। ঠিক যেমন বোরকাকে মেনে নেব, যখন পুরুষেরা ভালোবেসে বোরকা পরবে। মেয়েদের পতিতালয়কে মেনে নেব, যখন পুরুষেরা নিজেদের পতিতালয় গড়ে তুলবে, মুখে মেকআপ করে রাস্তায় ত্রিভঙ্গ দাঁড়িয়ে কুড়ি-পঁচিশ টাকা পেতে নারী-খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করবে। তা না হলে সারোগেসি, বোরকা, পতিতাবৃত্তি রয়ে যাবে নারী এবং দরিদ্রকে এক্সপ্লয়টেশানের প্রতীক হিসেবে।’