5.4 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রে নারীসহ ১৩ জন

ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রে নারীসহ ১৩ জন - the Bengali Times
প্রতীকী ছবি

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরকারের ইয়াবা চক্রে এক নারীসহ অন্তত ১৩ জনের নাম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জোনাকি নামের একজন নারীও রয়েছেন। তিন ধাপে তাদের ব্যবহার করে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে খুচরা কারবারিদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো। বড়িপ্রতি ১০ টাকা কমিশন দিয়ে কলেজছাত্রদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করতেন জাহাঙ্গীর। তার হয়ে এই সিন্ডিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রুবেল খান নীরব, মো. মহসিন ও জোনাকি।

তারা তিনজনই এখন পলাতক। গত শনিবার যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় প্রাইভেটকারের ভেতরে ২০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপরই বেরিয়ে আসে ওই চালানটি গাজীপুরের ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরকারের। এরই মধ্যে তাকে আসামি করে মামলা করা হয়। ওই মামলায় ইয়াবা সিন্ডিকেটের তার চার সহযোগী এখন তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছে। সংগঠন থেকে রোববার জাহাঙ্গীরকে বহিস্কার করা হয়েছে।

- Advertisement -

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রে সরাসরি জড়িত এমন আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা কারবারি আছে। তাদের ধরতে একাধিক টিম তৎপর। মাদকে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি যত বড় রাঘববোয়াল হোক, তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
গাজীপুর ছাত্রলীগ নেতার ইয়াবা চক্রে বছরখানেক ধরে বাহক হিসেবে কাজ করছেন রাকিবুল হাসান।

তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের স্নাতকে পড়ছেন। রাকিবুল জানিয়েছেন, কক্সবাজার থেকে চারটি ইয়াবার চালান গাজীপুরে আনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। কৌশল হিসেবে প্রথমে জাহাঙ্গীর সরকার ও রুবেল খান নীরব ওরফে নীরব মামার প্রাইভেটকার কক্সবাজারে আগেই পাঠানো হয়। এরপর বাহকরা যাত্রীবাহী বাসযোগে কক্সবাজার যান। সেখানে আগে থেকে দামি হোটেল তাদের নামে বুকিং দেওয়া থাকে।

জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ মহসিন নামের এক ব্যক্তি আগে থেকেই ইয়াবা বড়ি ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে প্রাইভেটকারে চেসিসের নিচে লুকিয়ে রাখেন। এরপর প্রাইভেটকার তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। একেকবার চালক ছাড়া তিন/চারজন বাহক গাড়িতে থাকেন। পথে চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরলে তারা কক্সবাজার বেড়াতে গেছেন বলে দাবি করেন। গাজীপুরে গ্রামের বাড়ি হলেও ঢাকার বারিধারায় বসবাস করেন মহসিন। জাহাঙ্গীরের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তার মূল দায়িত্ব হলো কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রুপের কাছ থেকে ইয়াবার চালান কিনে তা ঢাকায় আনার জন্য প্রস্তুত করে রাখা। মূল ‘কাট-আউট’ পদ্ধতিতে এই চক্রটি পরিচালিত হয়। মহসিন ঠিকঠাকমতো প্রাইভেটকারে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়ার পর বাহকদের সঙ্গে আর তেমন কোনো যোগাযোগ করেন না। বাহকদের দায়িত্ব হলো এই চালান গাজীপুরে রুবেলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেখানে হাতবদলের পরই বড়িপ্রতি ১০ টাকা হিসাব করে বাহকের পারিশ্রমিক হাতে দেন রুবেল। রাস্তায় কোনো সমস্যা তৈরি হলে বাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নানা পরামর্শ দেন জাহাঙ্গীর।

রাকিবুল এও জানিয়েছেন, এই সিন্ডিকেটে জোনাকি নামের এক নারী রয়েছেন। দু-একবার তাকেও বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জোনাকির পরিচয় জানতে চাইলে চক্রের অন্যদের কাছে রুবেল তার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বলে পরিচয় করিয়ে দেন।

জানা গেছে, এর আগে তিন দফায় রাকিবুল কক্সবাজার থেকে যে তিন চালান এনে রুবেলের কাছে দেন, তার একটিতে ছিল ৬০ হাজার ও অপর দুটিতে ৫০ হাজার বড়ি। বাহক হিসেবে তাদের ১৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কয়েকজন মিলে তারা এই অর্থ ভাগ করে নিয়েছেন। প্রতি মাসে একটি চালান আনার টার্গেট করে চক্রটি।

তদন্ত সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীরের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা মূলত গাজীপুরকেন্দ্রিক কারবার করে আসছিল। এই চক্রে তার সঙ্গে রয়েছেন শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকার বাসিন্দা এনামুল মুন্সী, একই এলাকার পিস্তল মাসুদ, এমসি বাজার এলাকার মো. আশাদ, রুবেল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, ফিরোজ, সূর্য বর্মণ শান্ত, ভাওয়াল কলেজের ছাত্র রনি আহম্মেদ, হৃদয়, জোনাকি, গাজীপুরের বর্মিবাজার এলাকার রুবেল খান নীরব ও মহসিন।

গাজীপুরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের হয়ে গাজীপুরে যে চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, সেই রুবেল খান একসময় মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করতেন। দেশে ফেরার পর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। রাতারাতি অর্থ-বিত্তের মালিক হতে ইয়াবা কারবারে নামেন তারা। মাদকের অর্থে দামি গাড়ি, বাড়ি ও কারখানা তৈরি করেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গার্মেন্টে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ আছে।

শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ইকবাল সরকারের ছেলে জাহাঙ্গীর সরকার। ২০১৬ সালে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন ধারায় আরও ছয়টি মামলা আছে।

জানা গেছে, গাজীপুরে টঙ্গী এলাকায়ও পৃথক কিছু মাদক চক্র আছে। তার মধ্যে রয়েছেন টঙ্গী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। মাদকের চালানসহ বছরখানেক আগে গ্রেপ্তারের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে সোহেল রানা, লোকমান ও রহিমের বিরুদ্ধে। রহিম বর্তমানে জেলে রয়েছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles