-0.1 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ২৩, ২০২৫

ঠোঁট কাটা স্বভাব

ঠোঁট কাটা স্বভাব - the Bengali Times
ছবিসমিরান চৌধুরী

বড় চাচি ঠোঁট কাটা স্বভাবের মানুষ। এটা আত্মীয়-স্বজন সবাই জানে এই বিষয় নিয়ে আড়ালে আবডালে কানাঘুষা হয়। তার সামনে সবাই সচরাচর পরতে চায় না খুব প্রয়োজন না হলে।  তবে তরু কে, যে কথা গুলো বলেছে তা ভিত্তিহীন বলে ফেলে দেয়া ও যাচ্ছে না।  দিন

শেষে তো আবির তারার সৎবাবা এটা ই সত্যি। তরু সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অফিসে গিয়ে ঢোকল। পাশের টেবিলে থেকে রিয়াদ সাহেব বললেন-

- Advertisement -

– তরু আপনার বাবার কি শরীর খুব খারাপ। আপনাকে এমন উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছে কেনো?

-আব্বা আগের চেয়ে ভাল আছে। আব্বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলেন তো তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।

রিয়াদ সাহেবের সাথে কথা শেষ করে  আবির কে কল দিল কম করে হলে ও সতেরো বার।  ফোন রিসিভ করেনি ডিকলাইন ও করেনি। তারা কি করছে, আবির কেন ফোন ধরছে না এসব ভাবতে ভাবতে কোন কাজেই মন বসাতে পারছে না। ছুটি পাওয়া এখন আর সম্ভব না। এই মাসে দুই দিন ছুটি নেয়া হয়ে গেছে। চাকরি টা ও বেশ কাঠ খড় পুড়িয়ে পেয়েছে তরু।

তারা বাসায় এসে খুশি মনে দোলনায় ঘাপটি মেরে বসে বসে মোবাইল টিপছে। মা কে কোন ভাবেই বলা যাবে না সে মোবাইল কিনেছে। বাবুই পাখির বাসার মতো দেলনা টা দেখতে। দোলনা থেকে নেমে দরজার লক লাগিয়ে দিল। তারা সব সময় দরজা চাপিয়ে রাখে, প্রায় আধ হাত খোলা থাকে দরজা। তরুর ভয়ে দরজার লক লাগাতে হলো। তাছাড়া আবির দেখলে ও সমস্যা।

ইয়াদ কে কয়েক বার কল করতে চেয়েছে কিন্তু ঘৃণায় আর কল করতে পারেনি।

প্রায় আধা ঘন্টা পরে রাহি কল দিলো তারা কে-

-হ্যালো তারা বলছো?

-জ্বি,আপনি ই তো সীম কার্ড দিলেন আবার আপনি নিজেই কনফিউশানে,হি হি হি।

-সে তো একটু কনফিউশান থাকবেই। স্বর্গের পরীর সাথে কথা বলতে ও তো কলিজা লাগে।

-স্বর্গের পরী কে?

– আমার সাথে এই মুহূর্তে তারা নামের যে মেয়ে টা কথা বলছে সে।

-তাই,আপনি এতো সুন্দর একটা উপমা দিলেন।

-হুম উপমা না সত্যি কথা বললাম। কেন কেউ কখনো বলেনি আপনি সাক্ষাৎ একটা পরী। ইয়াদ বলেনি?

-না,আপনার বন্ধু আমাকে সব সময় ছোট করে কথা বলতো।

-তারা তুমি কি আমার বন্ধু হবে? আমি মোবাইলের দোকানে কামলা দেই ঠিক কিন্তু পড়াশোনা করছি অনার্স ১ম বর্ষে। আমি জানি শুধু কামলা কে তুমি কখনোই পাত্তা দিবে না।তাই পড়াশোনার কথা টা বলে রাখলাম।

– হি হি হি,কি যে বলেন?

-বাহঃ তুমি তো খুব সুন্দর করে হাসো। ‘তুমি ‘করে বলছি বলে রাগ করছো না তো?

-না, না সমস্যা নেই।  আমার বরং ভালোই লাগছে।

-তারা আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারি?

-হওয়া যায় তবে আপনি আমার সব কথা শুনবেন তো?

-শুনবো,তোমার সব কথা মনযোগ দিয়ে সারা জীবনে শুনলে ও বিরক্ত লাগবে না। তারা তুমি করে বলো আমাকে।

-ঠিক আছে বন্ধু তুমি করেই বলবো।

-তারা তুমি যে কথা বলছো কেউ শুনছে না?

-না,কে শুনবে।

-তোমার মা-বাবা কোথায়?

তারা একটু থমকে গেলো। রাহি কে কি বলবে আবির আপন বাবা নয়। নিজের মনের সাথে কয়েক সেকেন্ড বুঝাপরা করে তারপর তারা বললো-

– মা অফিসে। বাবা অফিসে যায়নি জ্বর এসেছে। জানো রাহি আমার এই বাবার সাথে মায়ের কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। এরপর থেকে নিজেকে খুব একা লাগে বিষন্ন লাগে। প্রিয়ম টা চলে গেছে ট্যুরে। তার মধ্যে ইয়াদ আমার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছে।

– আন্টি কিছু দিন আগে বিয়ে করেছে তাতে তোমার একা লাগার কি আছ। তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো।  তাছাড়া এসব কোন বড় বিষয় না। ইয়াদ তোমার বয়ফ্রেন্ড আমার বন্ধু বলা উচিত না তারপর ও বলতে হয়,ও রাবিশ একটা ছেলে।

তারা আমি তোমাকে যে কোন সময় কল করতে পারাবো তো?

-পারবে না কেন অবশ্যই পারবে।

-বিরক্ত হবে না তো?

-একদম না।

-কাস্টমার এসেছে পরে কল দিচ্ছি,পরী।

-পরী!

-হুম তুমি ছোট্ট একটা পরী।

রাহির ফোন না রেখে কিছুক্ষণ মোবাইল টা বুকের সাথে চেপে ধরলো তারা। বুক টা ধুকপুক করছে। এতো সুন্দর করে রাহী পরী বলে ডাকলো যে ইয়াদের করা অপমান ভুলে গেল।

তরু হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরলো। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।  মেইন দরজা খোলা ছিল তাই কলিং বেল চাপতে হয়নি। দরজার লক খোলা দেখে অবাক হলো তরু। কখনো তো এমন হয়নি। নিজের রুমে ঢোকে দেখলো আবির নেই। দুইটা বাথরুমে উঁকি দিয়ে দেখলো আবির কোথাও নেই। তারার রুমের দরজার লক ভিতর থেকে লাগানো।

তরু বেলকনিতে পেতে রাখা শতরঞ্জিতে পা ছড়িয়ে বসে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে ভাবলো ঘরের পরিবেশ অন্য দিনের চেয়ে এতো ব্যতিক্রম কেন। নাকি এরকমই ছিল সবসময়,নিজের মনের দ্বিধাদ্বন্দের কারনে ব্যাতিক্রম লাগছে।

তারা তে ডাকলো তারা কোন সাড়া দিল না। রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের কেটলি তে পানি বসিয়ে ফুলের ঝাড়ু হাতে বের হলো রান্নাঘর লাগুয়া স্টোর রুম থেকে। অফিস যাবার আগে নিজের রুম টা কোন রকম হন্তদন্ত করে ঝাড়ু দিয়েছিল। আজ রত্নার মা কাজ করেনি। ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে তারা কে আবার ডাকলো তরু। তার রুমের ভিতর থেকে বিরক্তি নিয়ে বলল-

-কিছু বলবে?

-আমি বাসায় এসেছি তাছাড়া দরজা না খুললে কি করে বলবো?

কথা শষ করে ড্রইং রুম ঝাড়ু দিতে গিয়ে সিগারেটের ফিল্টারে অংশ হাতে পেয়ে চমকে উঠলো তরু।

মনে করার চেষ্টা করলো আবির কে কখনো সিগারেট খেতে দেখেনি। না কোন দিন দেখেনি। তবে কি কেউ বাসায় এসেছিল? আবির হঠাৎ সিগারেট কেন খাবে?

আবির কোথায় গেছে? তারা এমন উদ্ভট আচরণ কেন করছে?

তবে কি বড় চাচির কথা,না ছিঃ কি সব উল্টো পাল্টা ভাবছি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles