10.3 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫

নর্থ ডেকোডা স্টেট উনিভারসিটিতে

নর্থ ডেকোডা স্টেট উনিভারসিটিতে - the Bengali Times
সে ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম কি আশ্চর্য্য আবারো তাঁকে দেখলাম তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন

ইচ্ছা হোল কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টটা দেখে যাই । সেখান থেকেইত হুমায়ুন আহমেদ পড়া শুনা শেষ করেছেন। সে ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । কি আশ্চর্য্য আবারো তাঁকে দেখলাম তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন । আমি ছুটে গেলাম তার পিছনে পিছনে কিন্তু তাকে ধরতে পারলাম না। তিনি ঢুকে গেছেন রুমের ভেতর। আমার সঙ্গীরা ভাবছে আমি উত্তেজিত হয়ে ছুটা ছুটি করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আরেক দিক আছে যেটা দিয়েও হেঁটে চলে যাওয়া যায় । সে পথটিতে অসাধারন একটা প্রাণীর ভাস্করয্য উঁচু একটা স্টোনের উপর বসানো ।সেখানেও লিখা ‘নর্থ ডেকোডা স্টেট উনিভারসিটি ‘। সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা অনেক ছবি উঠালাম ।আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটা । আর এই ঘুরা ঘুরিতে আমার মনে হচ্ছিল তিনি আমার পাশেই আছেন। হাঁটতে হাঁটতে অন্য দিকে চলে এলাম। বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী ক্লাস শেষে গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে । তাদের পেছনে কিছুটা দূরত্ব রেখে হুমায়ুন আহমেদ হেঁটে চলেছেন চশমা চোখে , কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে। উনিভারসিটির উল্টো দিকে একটা বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডিং । যার নাম’ উনিভাসিটি ভিলেজ’ সেখানে PHD student থাকে বিশেষ করে যারা বিবাহিত। তিনিও সেখানে থাকতেন। আমরা সেখানে এসে দাঁড়ালাম । আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম তিনি হেঁটে চলে গেলেন ভেতরে। সেখানে নিশ্চয় গুলতেকিন গরম চা নিয়ে অপেক্ষা করছেন এক সাথে খাবেন বলে।

আমাদের ফেরার সময় হয়ে গেলো । সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি অদ্ভুত এক হ্যালোসিনিসান নিয়ে এক ঘণ্টা দুঘণ্টা ঘুরে বেরালাম আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের সাথে। গাড়িতে উঠে শীলা গুলজার আমাকে জিজ্ঞেস করলো , কেমন লাগলো চাচি আপনার প্রিয় লেখকের পড়া শোনার স্থানটি দেখে। আমি মৃদু স্বরে জবাব দিলাম অসাধারন। গাড়িতে চলতে চলতে মনে হচ্ছিল এমন হ্যালোসিনিসান কি কোন মানুষের হয়? যে মানুষটা পৃথিবীতে নেই তার সাথে আমি এতক্ষণ ঘুরে বেড়ালাম । হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো একটা গল্প লিখে ফেলতেন, “ এক মহিলার ভুতে ধরার কাহিনী” নাম দিয়ে। তবে আমাকে বলতেই হবে এটা ছিলো আমার নর্থ ডেকোডার শ্রেষ্ঠ দর্শন ।

- Advertisement -

শীলার বাড়ি থেকে  আসতে  আবারো মন  খারাপ  বিশেষ করে  শীলার  চাচার। কিন্তু  উপায়তো  নেই  নিজেদের  বাড়িতে  ফিরে  আসতেই হবে। তাছাড়া সেখানেতো রয়ে গেছে  আমার  পরিবারের  সব  বিশেষ করে  আমার  পরী নাতনীটা । ওকে ছেড়ে কি  বেশী  দিন  থাকা  যায় ?  জীবন আবার  চলতে  লাগলো জীবনের গতিতে।  কি করে যেনো আমাদের আর বাসা বদলের চিন্তাও মাথায়  এলো না। এখন সে সময়ও নেই  আমাদের   ধৈয্যও নেই। যে বাড়িতে আছি সেটাই এখন  আমাদের  শান্তির  নীড় । এ আরেক জীবন। সামারটা খুব  আনন্দে কাটলেও  শীতটা কাটে  বিষণ্ণতায় । নর্থ  ডেকোডা থেকে আসার  পর দেশে গিয়েছি তিন  বার , বরাবরই  বই  মেলাকে  সামনে  রেখে। তাছাড়া ঘুরেছি ক্যানাডার   ভেতরে  কিছু  কিছু  আকর্ষণীও জায়গাতে। প্রকৃতির সন্দরয্য বার  বার  আমাকে  মুগ্ধ করেছে। জীবন  বয়ে চলেছে  প্রবল গতিতে । এভাবেই  আরো চার  বছর  কেটে গেলো ।আমাদের  মনকে আনন্দে  ভরিয়ে দিতে  আমরা  আবারো  নানা  নানি হলাম  এক রাজপুত্র  নাতির। আমাদের  জীবনের আরেক  মাত্রা  পেলো শিশুদের হাসি   কান্নায় আর তাদের প্রতি  আমাদের  আদর  ভালোবাসায় । এখন আর  ওদের ফেলে  কোথাও  ভ্রমনে  যেতেও মন চায়  না।  মনে হয় ওরাই আমাদের  দেশ  ওরাই আমাদের  বিদেশ।

কোনো রকম   মানসিক  প্রস্তুতি  ছাড়াই  মহামারী কোভিডের আগমন বার্তা কানে আসতে লাগলো । তাকে বরণ করার   প্রস্ততি নেবার জন্য নানা রকমের সংবাদ মাধ্যম সবাইকে  নানা রকমের  উপদেশ  দিতে  লাগলো । সারাটা  পৃথিবীকে  স্তব্দ করে  দিলো এই  মহামারী । আমরা  সবাই সতর্কতার সাথে  নিয়ম কানুন  মেনে  চলতে  লাগলাম । বাইরে যাই না।  গ্রোসারি  করতে  যাই না। কভিদের । কোভিদের আগমন  বার্তা  প্রচারের  সাথে সাথে  দুদিনের মধ্যে  গ্রোসারী স্টোর গুলোর শেলফ  গুলো  দ্রুত খালি  হয়ে  গেলো । কি  ভয়ঙ্কর এক  অবস্থা। আমরাও বেশ কিছু  দোকান ঘুরাঘুরি  করে লাইন ধরে কিছু  খাবার সংগ্রহ করলাম। যদিও  সরকারের  পক্ষ থেকে  বার  বার  ঘোষণা  দেয়া  হচ্ছিলো । প্রচুর  খাবার  এবং  প্রয়োজনীয় জিনিস  মজুদ আছে।  কাজেই  কারো জিনিস  জমিয়ে  রাখার  কোন  প্রয়োজন  নেই।

আমাদের  ছেলে  মেয়েরা  আমাদের  উপর আইন জারী করলো  আমরা  যেনো  কোনো অবস্থাতেই  বাড়ীর বাইরে  না  যাই । যা  লাগবে  ওদের  জানালে  ওরাই  দরজার  বাইরে  আমাদের  জন্য  রেখে  যাবে।  ছেলে  গ্রোসারি  করে  দরজার  বাইরে  রেখে  আমাকে  কল  দিয়ে  জানায় , আমাদের জন্য  বাজার  করে  রেখো  গেলো  । আমি  দূরে  দাঁড়িয়ে ছল  ছল  চোখে ছেলের  দিকে তাকিয়ে  হাত  নাড়ি । ছেলেও  তাই  করে।  কেউ  কারো  কাছে  আসতে পারি  না।  কতো দিন  হয়ে  গেলো  নাতি  নাতনীকে কাছে  পাই না।  প্রতিদিন  ফেস টাইমে ওদের সাথে  কথা  বলি।আমরাও অস্থির  ওদের কাছে  পাবার  জন্য,  ওরাও অস্থির  নানা  নানির কাছে  আসার  জন্য।

তখন  আমার সকাল  রাতের  সাথি  আমার পুত্র  গাছটি । সে এখন অনেক  বড় হয়ে  গেছে।  গাছটির মাথার  দিকে  তাকাতে  হলে  এখন আমার আকাশের  দিকে  তাকাতে  হয়। তাকে আমি বিরক্ত  হয়ে বলি  সারা  পৃথিবীতে  এতো মানুষ  মরে  যাচ্ছে আর  তুই  কিনা  নিলজ্জের  মতো  শাখা  প্রশাখা ছড়িয়ে বড়ই হয়ে  যাচ্ছিস।    কিন্তু  মনে  মনে  বলি  গাছ  পুত্র তুই  আছিস বলেই  মনটা ভালো আছে।  কতো নানা  রঙের  পাখি এসে তোর ডালে বসে  কিচির  মিচির  করে আর আমি নয়ন জুরিয়ে  ওদের আনন্দ দেখি। ওরা এখন  স্বাধীন । কোভিড তো ওদের কাছে  ধারেও আসছে না।  মানুষের যন্ত্রণাও নেই।গভীর রাতে আমি তাকিয়ে থাকি রাস্তার লাইট পোস্টয়ে জ্বলে থাকা বাতিটির দিকে। কি নীরব নিস্তব্দ চার পাশ। কোথাও কোন সারা নেই। সমস্ত এলাকা ঘুমে অচেতন। যখন আমি গভীর রাতে শব্দহীন এলাকাটির দিকে তাকিয়ে থাকি মনে হয় এযেন কোন মৃতপুরি। আমার গা ঝমঝম করে উঠে। তখন মনে হয় রাস্তার বাতিটি আমার দিকে সান্ত্বনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে যেন আমার কত আপন।

ভোরে ঘুম ভাঙ্গে পাখির কলোতানে । সূর্যের আলো বের হওয়ার সাথে সাথে মেতে উঠে ওরা পরম আনন্দে। আমি আবারো এসে দাড়াই আমার জানালার পাশটিতে। তাকিয়ে থাকি সে গাছটির দিকে যাকে দুই হাত দীর্ঘ অবস্থাতে রোপণ করেছিলাম। সে এখন তরতর করে বেড়ে উঠে আকাশের সীমানা ছুতে চাচ্ছে। আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়েও আমার চোখকে তার শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে পারি না। এই গাছটির ঝিরিঝিরি হাওয়া আমাকে উদাস করে তোলে। আমি অনেক কথা বলি তার সাথে মনে হয় সে যেনো বুঝতে পারে শুনতে পায় আমার সব কথা । সে তার সমস্ত শাখা প্রশাখা দুলিয়ে জবাব দেয় আমার সব কথার। এ যে আমার দুখো ভুলানিয়া প্রিয় গাছ।

কোভিড  নিয়ন্ত্রন করনের জন্য  বুস্টার  ইঞ্জেকশান  চালু  হওয়ার পর  কোভিড কিছুটা নিয়ন্ত্রনে  এলো  । আমাদেরও  শুরু  হলো দূরত্ব  বজায় রেখে  দেখা  সাক্ষাত ।  আমরা  যেনো কিছুটা প্রান  ফিরে  পেলাম  কিন্তু  মাস্ক লামলো না মুখ  থেকে। মাস্ক  পড়ে আমরা  প্রয়োজনীয় কাজে  বাজারে  যাই , দোকানে যাই , বন্ধু  বান্ধব, ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনির  সাথে  দেখা  সাক্ষাৎ করি।  ধীরে ধীরে কোভিড নাই  বললেই চলে  এমন একটা পরিস্থিতি  এসে  গেলো ।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles