14.8 C
Toronto
বুধবার, মে ১, ২০২৪

একসময়ের আবেদনময়ী নায়িকা এখন সন্ন্যাসিনী

একসময়ের আবেদনময়ী নায়িকা এখন সন্ন্যাসিনী
নীতা মেহতা

প্রায় দুই দশক ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এই ২০ বছরে অভিনয় করেছেন ৪০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে। বিনোদ খান্না, সঞ্জীব কুমারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে হিট সিনেমায় কাজ করতে দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু হঠাৎ করেই বলিউডের গ্ল্যামার জগৎ থেকে দূরে সরে যান অভিনেত্রী।

এখন তিনি সন্ন্যাসিনী! বলছিলাম একসময়ের আবেদনময়ী অভিনেত্রী নীতা মেহতার কথা।
মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি পরিবারে জন্ম নীতা মেহতার। তাঁর বাবা ছিলেন উকিল, মা চিকিৎসক। মা-বাবা দুজনই চাইতেন, তাঁদের কন্যা পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার তৈরি করুক।

- Advertisement -

কিন্তু ছোটবেলা থেকেই নীতার মন ছিল অভিনয়ের দিকে। পড়াশোনা করলেও সেদিকে নীতার মন ছিল না কোনো দিনই। স্কুলের গণ্ডি পার করে কলেজের সন্ধানে ছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন খবরের কাগজে ফিল্ম টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এফটিআইআই) বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে নীতার।

সেখানে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু মা-বাবা তাঁকে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করার অনুমতি দেননি। নীতা বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে এফটিআইআইয়ে ভর্তি হওয়ার ফরম পূরণ করেন। ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচজনকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিত এফটিআইআই। নীতা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

এতজনের মধ্যে তিনি যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন, তা ভাবতেই পারেননি।

অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয় নীতার। এফটিআইআইয়ে ভর্তি হওয়ার পর বলিউড পাড়ার তাবড় তাবড় তারকাদের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ে তাঁর। মডেলিংও শুরু করেন তিনি। কলেজে পড়াকালীন ‘পোঙ্গা পণ্ডিত’, ‘ইয়ে হ্যায় জিন্দেগি’-এর মতো বিভিন্ন হিন্দি সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ পান নীতা।

কিন্তু নীতার জীবনে মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায় ১৯৭৮ সালের ‘ম্যায় তুলসি তেরে আঙ্গান কি’। রাজ খোসলা পরিচালিত এই সিনেমাতে বিনোদ খান্না এবং আশা পারেখের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নীতা। এতে তাঁর অভিনয় দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়। তারপর আর নীতাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আশির দশকে একের পর এক হিট সিনেমাতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি। তবে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে পর্দায় তাঁর জুটি বেশি পছন্দ করেছিলেন দর্শক। কাজ করার সূত্রে সঞ্জীবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় নীতার।

বলিউড পাড়ায় কানাঘুষা শোনা যায়, নীতা এবং সঞ্জীব সম্পর্কে ছিলেন। অভিনেতাকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন নীতা। সঞ্জীবকে নাকি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ের জন্য শর্ত রেখেছিলেন সঞ্জীব। তিনি নীতাকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে বিয়ে করলে অভিনয়জগতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে নীতাকে। কিন্তু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিতে রাজি ছিলেন না তিনি। তাই সঞ্জীবকে ভালোবাসলেও তাঁর কাছ থেকে সরে এসেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রিতে এ ব্যাপারে জানাজানি হয়ে গেলে কাজ কম পেতে থাকেন নীতা।

‘জানি দুশমন’, ‘পাত্থার সে টাক্কর’, ‘হিরো’র মতো সিনেমায় সঞ্জীবের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নীতা। সঞ্জীব ভেবেছিলেন, অন্য নারীদের মতো নীতাও হয়তো তাঁর যশ, প্রতিপত্তি দেখে তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তাই নীতা যখন তাঁকে বলেন, বিয়ের পরও তিনি কাজ চালিয়ে যেতে চান, তখন সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন সঞ্জীব। আশির দশকে যে নীতা মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতেন, তিনিই পরের দিকে বয়স্কার চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন। সে ধরনের চরিত্রে কাজ করলেও পরে আর নীতাকে কেউ কাজের সুযোগ দিতে চাইতেন না।

এরপর বলিউডে শ্রীদেবী এবং জয়াপ্রদার মতো নায়িকারা এসে যাওয়ার পর নীতা বুঝতে পারেন, ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাই অভিনয় থেকে সরে আসেন তিনি। সঞ্জীবের কাছ থেকে সরে আসার পর আর কাউকে বিয়েও করেননি। এরপর মুম্বাইয়ে একটি গয়নার দোকান খোলেন নীতা। কিন্তু অভিনয় ছাড়ার পর বেশি দিন ব্যবসায়ও মন দিতে পারেননি তিনি। তাই দোকান বন্ধ করে তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেন। ছোট থেকেই নীতা তাঁর মাকে দেখতেন আনন্দময়ীর আশ্রমে যেতে। গ্ল্যামার জীবন ছাড়ার পর তিনিও ওই আশ্রমে যেতে শুরু করেন। আনন্দময়ীকে উৎসর্গ করে একটি বইও লিখেছেন অভিনেত্রী। বর্তমানে ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল খুলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পোস্ট করেন। বলিউড ছেড়ে নীতা এখন সন্ন্যাসিনী।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles