9.3 C
Toronto
সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

স্কুল ফাঁকি দিয়ে মুশতাকের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন আইডিয়ালের ছাত্রী

স্কুল ফাঁকি দিয়ে মুশতাকের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন আইডিয়ালের ছাত্রী
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ ফাইল ছবি

কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। মামলাটি দায়েরে তথ্যগত ভুল হয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নারাজি আবেদন করার কথা জানিয়েছেন মামলার বাদী।

আলোচিত এ মামলার আসামি খন্দকার মুশতাক আহমেদ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিকটিমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এভাবে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে খন্দকার মুশতাকের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন ভিকটিম। স্কুলের অধ্যক্ষ বা অন্য কোনো শিক্ষক বিষয়টি জানতেন না বলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

- Advertisement -

গত ৩০ অক্টোবর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে পুলিশ। মামলা দায়েরে তথ্যগত ভুল হয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই সোহেল রানা।

প্রাপ্তবয়স্ক হলে কলেজছাত্রীকে বিয়ে করেন মুশতাক

মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ভিকটিম আদালতে হাজির হয়ে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি জানান, চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি স্বেচ্ছায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বিয়ে করেন। বিজয়নগর কাজী অফিসে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বয়স ১৮ পূর্ণ হলে আসামি মুশতাক তাকে বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীকে কেউ কোনো ধরনের প্ররোচনা দেননি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সাক্ষ্য-প্রমাণ মিললে মামলাটি ফের চলবে

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, বাদী বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষকে অভিযোগ করেন তার মেয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান। এ অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে ভুক্তভোগীকে মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেসময় স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন ভিকটিম। ভবিষ্যতে এভাবে আর যাবেন না বলেও স্বীকারোক্তি দেন। সবকিছু বিবেচনায় আসামি খন্দকার মুশতাক ও অধ্যক্ষ ফাওজিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সেংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১)/৩০ ধারায় অপরাধ প্রামাণিত না হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে ভবিষ্যতে মামলার ঘটনার বিষয়ে কোনো সাক্ষ্য -প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

নারাজি আবেদন করবেন বাদী

মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দুই আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে পুলিশ। তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করবেন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা।

মামলার বাদী বলেন, ‘শুনলাম পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে মুশতাক আহমেদ ও সাবেক অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করেছে। পুলিশের এ প্রতিবেদন মেনে নিতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ যেহেতু মামলায় তথ্যগত ভুলের কথা বলেছে, সেজন্য আমাকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোন ধরনের তথ্যগত ভুল সেটা এখনো জানি না। সেগুলো যাচাই করে আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রুত আদালতে নারাজি আবেদন করবো।’

গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে এ মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন। এরপর গুলশান থানা মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভুক্তভোগীকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ভুক্তভোগীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবেন বলে হুমকি দেন।

এ ধরনের আচরণের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে (২ নম্বর আসামি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন ভুক্তভোগীর বাবা। তিনি (অধ্যক্ষ) ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে আসামি মুশতাককে তার কক্ষে ডাকেন। পরে ভুক্তভোগীকেও ক্লাস থেকে ডেকে এনে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মুশতাককে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।

এ বিষয়ে বাদী ২ নম্বর আসামির (অধ্যক্ষ) কাছে প্রতিকার চাইতে গেলেও তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি। বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করতে থাকেন। উপায় না পেয়ে বাদী গত ১২ জুন ভুক্তভোগীকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলে আসামি মুশতাক তার লোকজন দিয়ে ভুক্তভোগীকে অপহরণ করেন। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভুক্তভোগীকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles