1.5 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

৩৫০ কোটি টাকার ঋণকাণ্ডে ‘নাটের গুরু’ কে এই রতন

৩৫০ কোটি টাকার ঋণকাণ্ডে ‘নাটের গুরু’ কে এই রতন

নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারক দেখিয়ে ৩৫০ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ অনুমোদন করেছে এবি ব্যাংক। কাগুজে ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিং লিমিটেড। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ঋণের বিপরীতে জামানত দিয়েছে তৃতীয় পক্ষ এবং ঋণের বিপরীতে যে সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়েছে, তার মূল্য দেখানো হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়েও ১৬ গুণ বেশি।

- Advertisement -

শুধু তাই নয়, ঋণটির দায় গ্রাহক পরিশোধ না করলে তা এলটিআর ও মেয়াদি ঋণে রূপান্তরের সুযোগও রাখা হয়েছে। এরপরও ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬ কোটি টাকার পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে।

এবি ব্যাংকের ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ এরই মধ্যে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

কে এই রতন
৩৫০ কোটি টাকার এই ঋণকাণ্ডে ‘নাটের গুরু’ ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্ণধার আলী হায়দার রতন। তিনি সেই ব্যক্তি, যাকে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে রাত ৮টার পর নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় বিষয়টি সংবাদের খোরাক হয়েছিল। রতন পেশায় একজন ঠিকাদার। ১০ বছর ধরে দেশের সরকারি বিভিন্ন কাজ তিনি একক ও যৌথভাবে করছেন।

আলী হায়দার রতন শুধু এবি ব্যাংক থেকেই নয়, এর আগে আরও পাঁচটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে একই জমি একাধিক ব্যাংকে বন্ধক ও বন্ধকি সম্পত্তির অস্বাভাবিক বেশি মূল্য দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঋণের মধ্যে এরই মধ্যে ৫২৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ১৮০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকে ৭০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ৩৫ কোটি টাকা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৪০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানান, ওই ৫ ব্যাংকের ঋণের বিষয়ে সংস্থাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

যেভাবে উঠে এল রতনের নাম
দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক তদন্তে আলোচ্য ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী হিসেবে ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্ণধার রতনের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। তিনি ব্র্যান্ডউইন গ্রুপ অব কোম্পানিজেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সম্প্রতি ব্যাংকটির গুলশান শাখার অনুমোদিত ঋণ প্রস্তাবটির যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করে এ জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করেছে বিএফআইইউ।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ এবং আলী হায়দার রতনের পারস্পরিক যোগসাজশে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে একটি কাগুজে এবং বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। এ ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী আলী হায়দার রতন। কেননা আলোচ্য ঋণটির আবেদন থেকে শুরু করে সহায়ক জামানত, পার্সোনাল ও করপোরেট গ্যারান্টি প্রদানসহ যাবতীয় কার্যসম্পাদন করেছেন আলী হায়দার রতন নিজেই। এরই মধ্যে ১৬ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা ভোগও করেছেন তিনি।

বিএফআইইউর মতে, বেনামি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ সুবিধার আওতায় ৩৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হলে তা আদায় করা দুরূহ হবে। তাই ঋণের বাকি অর্থের বিতরণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি ব্যাংকটির কাছে এ ঋণের বিপরীতে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টির বিশদ তদন্ত সাপেক্ষে কাগুজে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত মালিক ও সুবিধাভোগী চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা যে একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেটারই আভাস দিচ্ছে এ ধরনের জালিয়াতি। এখানে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই যোগসাজশ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ খাতে বড় ধরনের চুরি-জালিয়াতি চলছে। এগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

খতিয়ে দেখার নির্দেশ হাইকোর্টের
কাগুজে কোম্পানির নামে এবি ব্যাংকের ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ এরই মধ্যে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদক, বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।

বুধবার এ বিষয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে এই ঋণ অনুমোদনের অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles