13 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

আজাদ রহমানের ফিরে যাওয়ার দিন

আজাদ রহমানের ফিরে যাওয়ার দিন

আজ আজাদ রহমানের আত্মার ফিরে যাওয়ার দিন । তিনি কত বড় মাপের সঙ্গীতজ্ঞ গায়ক সুরকার ছিলেন তা সঙ্গীত নিয়ে পড়া ছাত্রদের পিএইচডির বিষয়। তিনি একজন সঙ্গীত জগতের লিজেন্ড হয়েও আমার কাছে ছিলেন আপনজন বড় ভাই। বিয়ের পর থেকে কানাডায় দূর হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বিশটি বছর স্ত্রী শাহানা কন্যা অগ্নিলা সহ আমার ছোট্ট পরিবার তাঁর ৬৪/সি গ্রীন রোড বাড়ির চার তলায় বেড়ে উঠছি। দুই বাংলায় বরণ্য সঙ্গীতঙ্গ রহমান ভাই(আজাদ রহমান) কন্ঠশিল্পী সেলিনা ভাবী (সেলিনা আজাদ) তাদের আন্তরিকতা ও স্নেহে টের পেতে দেননি যে তারা কত বড় মাপের মানুষ।

- Advertisement -

গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলো রহমান ভাইয়ের রেকর্ডিং স্টুডিও ‘মুভিটোন’। ভেতরে ছিলো বিরাট মহা মূল্যবান পিয়ানো।রহমান ভাই খুব যত্ন করতেন।কাউকে ধরা মানা ছিলো। তিনি মাঝে মধ্যে মগ্ন হয়ে কী চমৎকার বাজাতেন। মাসে দুই মাসে নটড্রাম কলেজের প্রচীন শিক্ষক ফেরেস্তার মত দেখতে ইউরোপীয়ান ফাদার পিয়ানো বিশেষজ্ঞ আসতেন পিয়ানো শরীর স্বাস্থ ঠিক আছে কিনা দেখতে। মোট কথা পিয়ানোটি ছিলো একটি পূজোনীয় সঙ্গীতযন্ত্র। আমার মেয়ে অগ্নিলার বয়স হয়তো তখন সাত-আট গ্রীন হেরাল্ড স্কুলে পড়ে। দুপুরে মা শাহনা পরীবাগ বিশ্বব্যাংকে কর্মরত আর আমি বিটপীতে। বুয়া জমিলা তাকে স্কুল থেকে এনে খাইয়ে দাইয়ে যত্নে রাখতো। সমস্যা শুরু হলো খেয়েদেয়ে খেলা বা বিশ্রামের সময় লুকিয়ে চার তলা থেকে নেমে দুপুরে ফাঁকা মুভিটোন স্টুডিওতে ঢুকে পড়ে সে হারমোনিয়াম তরিকায় পিয়ানো রিড টেপাটেপি শুরু করে দিতো। কেয়ার টেকার রেজা ম্যানেজার প্রিয় বাবুল ভাই(হাসান ফকরী) পড়ি কি মরি করে দৌঁড়ে এসে অগ্নিলাকে থামাতে চেষ্টা করতেন।

বুঝিয়ে পটিয়ে চারতলায় দিয়ে আসতেন তারা।আমাকেও তারা বলেছেন অগ্নিলাকে থামাতে। আমারও ওকে বোঝালাম,খুব দামী জিনিস বাবু ধরোনা,কিছু হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। অগ্নিলা চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে তবে খুব জেদী। তাকে থামানো গেলোনা। রেজা ও বাবুল ভাই আমাকে শাহানাকে বাসায় ফিরে গাড়ি রেখে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গেলেই ধরতেন – মেয়েকে থামান,আজাদ রহমান স্যার দেখলে আমাদের বারোটা বাঁজাবেন। কি করে ওকে থামাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এক দুপুরে হঠাৎ রহমান ভাই কী কাজে যেন এসে পড়লেন। অগ্নিলা ও ধরা পড়ে গেলো। রেজা ও বাবুল ভাই ছুটে এলেন অগ্নিলাকে বিরত করতে,ধরে উপরে দিয়ে যেতে। রহমান ভাইয়ের যেমনটি রেগে গর্জনে বর্ষনে চিৎকার দিয়ে ওঠার কথা তিনি মোটেই তা করলেনন না।

মেয়ের হাত ধরে বল্লেন- না শিখেও ভালোইতো বাজাও,ঘরে কি হারমোনিয়াম বাজাও? অগ্নিলা কোনো কথা বলে না মাথা নত করে চুপচাপপ দাঁড়িয়ে থাকে। রহমান ভাই আবার বল্লেন- বাবু এটি নষ্ট হলে আমার গাড়ির অর্ধেক বিক্রী করতে হবে মেরামত করাতে। তুমি আগে বড় হও তারপর আমি তোমাকে পিয়ানো বাজানো শিখাবো। অগ্নিলা আজ বড় হয়েছে ঠিকই তবে আর পিয়ানো শেখা হয়নি।হয়তো সেই শখটা ভেতরে লুকিয়ে ছিলো। এখন টরন্টোতে অগ্নিলার সংসার চার আর পাঁচের দুই পুচকী মেয়ে আছে তার। তাদের জন্যে সে পিয়ানো কিনেছে।

ঘুরে ঘুরে খেলার ছলে পুচকী দুইজন ধাক্কাধাক্কী করে পিয়ানোর রিড টেপাটেপি করে। এটাও তাদের এক খেলা।হয়তোবা একজন বড় হয়ে ভালো পিয়নো বাদক হলে হতেও পারে! তবে কখনো আমি অগ্নিলার বাসায় গেলে এক মুহূর্ত পুচকী দুইজন পিয়ানোর রিড টেপা থামিয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকায়।মুখে ‘গ্রেনপা’ উচ্চারণ করে আবার টুং টাং পিয়ানোর রিড টেপায় ব্যস্ত হয়ে যায়। প্রতি শব্দে আমার রহমান ভাইয়ের মুখ মনে পড়ে। সেলিনা ভাবীী সহ রহমান ভাইয়ের তিনমেয়ে রুমানা,রোজানা ও নাফিসারা এখন স্থায়ী ভাবে সিডনী অস্টলিয়ায় থাকে। ৬৪/সি আর সি নেই গায়ে গায়ে লাগোয়া বিল্ডিং টাওয়ার কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে গেছে। জানতে ইচ্ছে করে পিয়ানোটি এখন কেমন আছে!

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles